যতদিন না আর জি কর হাসপাতালের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার হচ্ছে, ততদিন লাগাতার আন্দোলন চলবে বলে জানিয়ে দিলেন চিকিৎসকরা। গত ৪ মাস ধরেই টানা আন্দোলন চলছে। এই লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে মঙ্গলবার থেকে আগামী ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধর্মতলায় অবস্থান সমাবেশের ডাক দেয় অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস সহ জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল। কিন্তু পুলিশ ওখানে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অনুমতি না দেওয়ায় এদিন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চিকিৎসকরা। বুধবার সেই মামলার শুনানি হবে।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স, পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার বলেন, আমরা ধর্মতলায় ডোরিনা ক্রসিংয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতে চেয়েছি, পুলিশ বাধা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আমরা মামলা দায়ের করেছি জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টর্সের তরফে, হাইকোর্টে বুধবার সেই মামলার শুনানি রয়েছে। এরপর আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির হবে। হাইকোর্টের অনুমতি পেলেই আমাদের অবস্থান শুরু হবে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ এই মামলার অনুমতি দিয়েছেন।
কিছুদিন আগেই ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের ডাকে ন্যায় বিচার সহ দশ দফা দাবিতে ডোরিনা ক্রসিংয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চলেছে সাধারণ মানুষকে শামিল করে। পুলিশ সে সময়ে সেই কর্মসূচিতেও প্রথমে বাধা দেয়, পরে সেই বাধা আর ধোপে টেকেনি। এবারও একইভাবে পুলিশ ডোরিনা ক্রসিং-এ জয়েন্ট প্ল্যাটফরম অব ডক্টরস-এর অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা দেয়। পুলিশের যুক্তি, সামনে বড়দিন ও নববর্ষের উৎসব। চিকিৎসকদের কর্মসূচিতে উৎসব বিঘ্নিত হতে পারে, যানজট হতে পারে। তাই এই অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। এরপরেই আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করেন সিনিয়র চিকিৎসকরা।
আর জি কর হাসপাতালের ঘটনায় ৪মাসের বেশি হলো বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়েছে গোটা রাজ্য। রাজ্য সরকারের গাফিলতি ও উদাসীনতা এবং সেই সঙ্গে অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টায় জনরোষ তৈরি হয়। সিবিআই তদন্ত চললেও তা নিয়েও নানা প্রশ্ন ওঠে। সিবিআই প্রাথমিকভাবে যে চার্জশিট দেয় তাতে মূল অভিযুক্তরাই অধরা থেকে যায়। অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের নাম চার্জশিটের বাইরে রাখে সিবিআই। নাম ঢোকানোর জন্য রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগে, সেই অনুমতি দেয়নি সরকার। এমনকি সাসপেন্ডও করা হয়নি সন্দীপ ঘোষকে। তার বিরুদ্ধে আরও ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, কোনও ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি টালা থানার ওসি’র বিরুদ্ধে। সিবিআই চার্জশিট দিতে বা পারায় এই অভিযুক্তদের জামিন হয়ে গিয়েছে। প্রকৃত ন্যায় বিচার অধরাই থেকে গিয়েছে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে সোচ্চার হয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের বক্তব্য, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে দুর্নীতি চরমে উঠেছে এ রাজ্যে। শাসক দল ঘনিষ্ঠ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত হয় না। আর জি কর-এর ঘটনায় কীভাবে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হয়েছে তা সবাই দেখেছেন। অথচ রাজ্য সরকার যত রকমভাবে পারে তাদেরই আড়াল করে সুরক্ষাও দিয়েছে। ওদিকে, সিবিআই’র তদন্তেও দীর্ঘ সময় লেগে গিয়েছে। তারপর জামিনে মুক্ত হয়েছেন দুই অভিযুক্ত। এর বিরুদ্ধেই আমাদের আন্দোলন লাগাতার চলবে।
RG KAR
আর জি কর
×
Comments :0