AIPSO

অসাম্য থাকলে সীমান্তে উত্তেজনা হবেই

জাতীয়

AIPSO আন্তর্জাতিক অতিথিদের বই তুলে দিচ্ছেন রবীন দেব।

সংঘাতের মূল কারণ অসাম্য। সমাজে অসাম্য থাকলে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব নয়। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সীমান্তেও উত্তেজনা প্রশমিত হয় না। 

তাই কেবলমাত্র যুদ্ধের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করলে হবে না। বরং যুদ্ধের প্রকৃত কারণগুলির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে শান্তি আন্দোলনের কর্মীদের। একই সঙ্গে সমাজেও শান্তি আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরতে হবে। 

শনিবার থেকে চন্ডীগড়ে শুরু হয়েছে সারা ভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা ( এআইপিএসও)'র সর্বভারতীয় সম্মেলন। প্রথম দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনটাই বললেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। 

এআইপিএসও'র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক আর অরুণকুমার বলেন, বিশ্বজুড়ে শান্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন এটা বোঝা যে যুদ্ধ কেন হয়। এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না পাওয়া গেলে যুদ্ধ থামানো সম্ভব নয়। যুদ্ধের মূল কারণ অসাম্য, অর্থনৈতিক বিভেদ এবং এক-কেন্দ্রীকতা। সমাজে এই প্রবণতা গুলি থাকলে উগ্রতার চাষ করা সহজ হয়। সেই উগ্রতায় ভর করে জন্ম নেয় জাতিগত কিংবা ভাষাগত সাম্প্রদায়িকতা। সেই মানসিকতায় ভর করে একটি জাতি ওপর জাতীয় গোষ্ঠীর উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে ওঠ। এখান থেকে জন্ম নেয় সাম্রাজ্যবাদ। 

এই সাম্রাজ্যবাদ মূলত পরিচালিত হয় কেন্দ্রিক কোন ব্যক্তিকে সামনে রেখে। এবং সেই ব্যক্তি এবং সাম্রাজ্যবাদের ফলে মুনাফার পাহাড় চড়ে কর্পোরেট লগ্নি পুঁজি। 

এআইপিএসও নেতৃত্ব আরও বলেন, বিশ্বজোড়া এই অসাম্য বর্তমান সময়ে সবথেকে বেশি প্রকট হয়েছে কোভিড অতিমারীর সময়। সাধারণ মানুষের মৃত্যুর বিনিময়  মডার্না, ফাইজার, ভারত বায়োটেক এর মতো সংখ্যাগুলি ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ভ্যাকসিনের একটি ডোজ থেকে সেরাম সংস্থার আয় ২০০ শতাংশ। ভারত বায়োটিকের ক্ষেত্রে সেটা আরও বেশি । এই মুনাফার চক্র চালিয়ে যেতেই পেটেন্ট রাজের দিকে হেঁটেছে এই সংস্থাগুলি। একদিকে যখন এশিয়া এবং  আফ্রিকার  বিস্তীর্ণ অংশে কোভিড ভ্যাকসিন অমিল, তখন পশ্চিমের দেশ গুলিতে দুই থেকে তিন ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এটা অপরাধ। 

এআইপিএসও'র অপর সাধারণ সম্পাদক পল্লব সেনগুপ্ত জানান, এআইপিএসও'কে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। শান্তি আন্দোলন কেবলমাত্র সেমিনার হলে সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না পল্লব সেনগুপ্ত নিজের বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ১৯৯১ সালের সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পরে ভারতবর্ষেও শান্তি আন্দোলনে ভাটা আসে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে সেই স্থগিতাকে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০০৭ সালের পাটনা সম্মেলন একটি দৃষ্টান্ত। মূলত সেই সম্মেলন থেকেই সংগঠনকে আবার নতুন ভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এদিন সকালে জাতীয় পতাকা এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন করেন হারবাংস সিং সিধু, পল্লব সেনগুপ্ত এবং শান্তি আন্দোলনের বর্ষীয়ান নেতা আর এস  চিমা। 

সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন হরবংশ সিং সিধু। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন আরএস চিমা। এছাড়া ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিলের তরফে হেরাক্লেস সারদারিস, ভিয়েতনাম পিস কমিটির তরফে ত্রাণ  দাই লই, নেপাল পিস ও সলিডারিটি কাউন্সিল এর তরফে রবীন্দ্র অধিকারী, বাংলাদেশ পিস কাউন্সিলের তরফে মুজাফফর  হোসেন পল্টু এবং শ্রীলংকা পিস এন্ড সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের তরফে বৌভিকা সম্মেলনকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। কিউবার তরফে সম্মেলনকে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ভিক্টর ফিদেল  লোপেজ।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে হেরাক্লেস সারদারিস বলেন, গোটা বিশ্বের সামরিক বাজেটের পরিমাণ ২.১ ট্রিলিয়ন (লক্ষ কোটি) ডলার। এই পরিমাণ অর্থে বিশ্বজোড়া ক্ষুধা এবং অপুষ্টি দূর করা সম্ভব। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিপুল বিনিয়োগ করা যায়। অর্থাৎ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ হয় না। তিনিও সারা বিশ্ব জুড়ে নতুন করে তৈরি হওয়া অশান্তির মূল কারণ হিসেবে সম্পদের কেন্দ্রীকরণ এবং  অসাম্যকে তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যুদ্ধের ফলে লাভ কার হয়? কাদের ঘর বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়? আর কারা অস্ত্র বেচে বিপুল মুনাফা করে?

প্রথম দিনের সম্মেলনের দ্বিতীয়ার্ধে  পাঞ্জাব সমস্যার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক হরিশ পুরী, অধ্যাপক জগরূপ সিং শেখ্খো, অমরজিৎ সিং সিদ্ধু প্রমুখ। 

আন্তর্জাতিক অতিথিদের হাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিদের হাতে উপহার তুলে দেওয়া হয়। উপহার হিসেবে বই তুলে দেন রবীন দেব।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের সম্মেলনের কাজ শেষ হয়। 

Comments :0

Login to leave a comment