Agro economy

অর্থনৈতিক বিকাশে নজর নেই বঞ্চিত গ্রাম, কৃষি

রাজ্য

চন্দন দাস: কলকাতা

সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নতুন কোনও ঘোষণা নেই। তাহলে কি এবার রাজ্যের আর্থিক বিকাশে নজর ফেরাতে চাইলেন মমতা ব্যানার্জি? না। তাও নয়। 
যে ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ তৈরি হয়, যে ক্ষেত্রগুলিতে রাজ্যের আর্থিক অগ্রগতি হতে পারে, সেই ক্ষেত্রগুলিতে সামগ্রিকভাবে বরাদ্দ ছাঁটাই করল রাজ্য সরকার। 
তাই কর্মসংস্থানের নতুন ঘোষণা নেই। কারণ— রাজ্যের পরিকল্পনায়, রাজ্য সরকারের প্রকল্পের মাধ্যমে কাজের সুযোগ তৈরির কোনও পরিকল্পনা মমতা ব্যানার্জির নেই। 
রাজ্যে আর্থিক বিকাশ ত্বরান্বিত হওয়ার প্রধান ক্ষেত্র গ্রাম। বুধবার যে বাজেট পেশ হয়েছে, তাতে গ্রামোন্নয়নের চালু প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের ৩৩৫৭টি পঞ্চায়েতের গ্রামোন্নয়ন ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের বাজেট কত ? ঘোষিত পরিমাণ ২৬,৬০৪ কোটির কাছাকছি। তাও কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ ধরে। গতবার বরাদ্দ ছিল ২৫,১৮২ কোটির কাছকাছি। বৃদ্ধি মাত্র ১৪২২ কোটি টাকার মতো। যা আসলে গ্রামের বিরাট সমস্যার মুখে কিছুই নয়। এর মধ্যে রাস্তা মেরামতির মতো প্রকল্প আছে। আছে অন্য চালু প্রকল্প। কিন্তু আর্থিক বিকাশের ক্ষেত্রে কোনও দিশা নেই এবারের বাজেটে।
এবার রাজ্য সরকার কী করল? আর্থিক বিকাশ, সামাজিক সুরক্ষা — বাজেটে মূলত এই দুটি ক্ষেত্রই থাকে, যেখানে বরাদ্দের মাত্রায় রাজ্য সরকারের লক্ষ্য বোঝা যায়। আর্থিক বিকাশে বরাদ্দ বৃদ্ধি মানে সরকার সামগ্রিকভাবে আয়, কর্মসংস্থান, কাজের সুযোগ, কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিতে চাইছে।
মমতা ব্যানার্জির সরকার কী দেখালো ?
গতবছর আর্থিক বিকাশের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫৭,০৪৯.২০ কোটি টাকা। এবার কত করলেন মমতা ব্যানার্জি? ৫৭,১৮৭.৯৪ কোটি টাকা। আর্থিক উন্নতির জন্য বরাদ্দ না বাড়ালে রাজ্য এগবে কী করে? সেদিকে নজর নেই মমতা ব্যানার্জির। 
আর্থিক অগ্রগতি সুনিশ্চিত করে কোন কোন ক্ষেত্র ? যেমন — কৃষি এবং গ্রামোন্নয়ন ক্ষেত্র। তার মধ্যে কৃষিনির্ভর বিভিন্ন ক্ষেত্র থাকে। থাকে পিছিয়ে থাকা বিভিন্ন এলাকার উন্নয়ন প্রসঙ্গ। সেই ক্ষেত্রে গত বছরের, অর্থাৎ ২০২২-২৩-র বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৩২,৩৯৯ কোটির কিছু বেশি টাকা। প্রায় ৭০০০ কোটি টাকা খরচ করা যায়নি বলে সরকার এখন মনে করছে। কিন্তু আগামী একবছরের জন্য বরাদ্দ কত ? ৩১,৮০২.৮৮ কোটি টাকা। 
অর্থাৎ গ্রামোন্নয়ন এবং সামগ্রিকভাবে যা রাজ্যের আর্থিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে সেই খাতেই বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। 
আর কী করেছেন? 
পরিবহণের অগ্রগতির উপর নির্ভর করে রাজ্যের আর্থিক বিকাশ। তৃণমূল কী ভাবে দেখছে? এই ক্ষেত্রেও বাজেট বরাদ্দ কমেছে। যা ছিল ২০১০ কোটি টাকা তা নামিয়ে আনা হয়েছে ১৪৮৩ কোটিতে। গ্রামের শ্রী ফেরাতে মমতা ব্যানার্জির কোনও পরিকল্পনা নেই। বোঝালো বাজেট। 
রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় সিংহভাগ তফসিলি জাতি, আদিবাসী, ওবিসি এবং সংখ্যালঘু। তাদের বেশিরভাগ থাকেন গ্রামেই। এই তফসিলি জাতি, আদিবাসী, ওবিসি আর সংখ্যালঘুদের জন্যই বাজেটে এবার রইল ফাঁকি। অথচ এদের অগ্রগতির উপরই গ্রাম তথা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন অনেকটা নির্ভর করে।
সরকার কী করল বাজেটে ?
রাজ্যের বাজেট নথি জানচ্ছে, গতবারের বাজেটে সংখ্যালঘু উন্নয়নে সরকার বরাদ্দ ঘোষণা করেছিল প্রায় ৫০০৫ কোটি টাকা। বছরের প্রায় শেষে এসে সরকার তার সংশোধিত বাজেটে জানাচ্ছে, তারা সংখ্যালঘু উন্নয়নে বরাদ্দের অর্ধেকের কিছু বেশি খরচ করতে পেরেছে বলে মনে করছে। পরিমাণ ? ২৮৬৪কোটির কাছাকাছি। 
তফসিলি জাতি, আদিবাসী, ওবিসিদের উন্নয়নেও সরকারের একই মনোভাব ধরা পড়েছে। গতবছর বাজেট বরাদ্দ ছিল ২১৭৯ কোটি টাকার কম। এবার তা হয়েছে ২২৪২ কোটির কিছু বেশি। বরাদ্দ বেড়েছে ? মাত্র ৬৩কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার মতো।
পঞ্চায়েত গ্রামের সরকার। আর কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু গ্রামোন্নয়নে রাজ্যের বরাদ্দ বাড়ল সামান্য। ছিল ৯২৬৮কোটি টাকা। হলো ১০,২৮২কোটির কিছু বেশি। অর্থাৎ বাড়ল মাত্র ১০০০কোটি টাকার মতো। কৃষি ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়ল মাত্র ২৮৫কোটি ১২লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা।
কোনটিই এমন নয়, যা অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সামগ্রিকভাবে বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই বুধবারের বাজেট শেষে রাজ্যবাসীর হাতে রইল শুধু ‘রাস্তাশ্রী।’ রাস্তা মেরামতি এবং তৈরির প্রকল্প। ১১,৫০০ কিমি রাস্তার জন্য ৩০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ। 
অর্থাৎ প্রতি কিমি রাস্তার জন্য ২৬লক্ষ টাকা!

Comments :0

Login to leave a comment