প্রতীম দে
দু’বছর ধরে পিএইচডি বন্ধ আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। নেট, জেআরএফ-র মেয়াদ শেষ হতে চলেছে কয়েক জনের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন পিএইচডি নোটিফিকেশন প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ। চার বছর ন্যাকের প্রতিনিধিরা আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শুধু গবেষণার সমস্যা নয়। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানের বহু বিষয় পড়ানো হয় না। যেমন রাষ্ট্রবি্জ্ঞান, সমাজবিদ্যা, দর্শন। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময় ২০০৮ থেকে পথ চলা শুরু আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২০১১’তে তৃণমূল সরকারে আসীন হওয়ার পর থেকে সমস্যা দেখা দিতে থাকে আলিয়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ২৯৭ জনের শিক্ষক পদ তৈরি হয়। এ পর্যন্ত নিয়োগ হয়েছে প্রায় ১৭২ জনের। এখনও ১২৫টি পদ শূন্য। ১১ বছরে মাত্র ৩৮ জন অধ্যাপক নিয়োগ করেছে তৃণমূল সরকার। শিক্ষা দপ্তর নতুন কোনও বিভাগও খোলেনি।
ইউজিসি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোন বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান খতিয়ে দেখার জন্য তিন বছর অন্তর ‘ন্যাক ভিসিট’ হয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে। কিন্তু চার বছর হয়ে গেলেও আলিয়াতে ন্যাকের প্রতিনিধি দল আসেনি। ২০১৮ সালে ইউজিসি’র একটি প্রতিনিধি দল ১২ বি অনুমোদন দেয় আলিয়াকে। তার তিন বছরের মধ্যে ন্যাক ভিজিটের কথা থাকলেও হয়নি।
ন্যাকের প্রতিনিধি দল না এলে কী হবে?
বাতিল হতে পারে আলিয়ার ইউজিসি অনুমোদনও। ঠিক যেমনটা হয়েছিল বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে।
রাজ্য সরকারের কী ভূমিকা এই ক্ষেত্রে? সরকার চুপ। কেন্দ্রীয় সরকার বা ইউজিসি’র কাছে কোনও আবেদন করেনি।
তাহলে কি আলিয়ার ভবিষ্যৎ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো গত উন্নয়নের জন্য কোন টাকা দেয়নি।
এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট একটি সামাজিক বোধ থেকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। সেই সামাজিক বোধ শেষ করে দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। আরএসএস বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা অনুযায়ী তিনি কাজ করছেন। সংখ্যালঘু ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটুক তা চায় না বিজেপি-আরএসএস। এই রাজ্যে তাদের এজেন্ট হিসাবে বিজেপি আরএসএসের পলিটিক্যাল এজেন্ডাকে সফল করতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী। আর তাই শুকিয়ে মারা হচ্ছে আলিয়াকে। বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরএসএসের কাছে সমর্পন করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার।’’
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মোট পড়ুয়া প্রায় সাত হাজার, সেখানে হোস্টেলের সুযোগ পায় প্রায় ১৩০০-র মতো শিক্ষার্থী। কলকাতার বাইরের জেলা থেকে যেই সব ছাত্র ছাত্রীরা ভর্তি হচ্ছেন তাদের থাকার ক্ষেত্রে রয়েছে সমস্যা। হোস্টেলে পর্যাপ্ত সিট না থাকার কারণে ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি খালি পড়ে থাকলেও পার্ক স্ট্রিট ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় এখনও কোন হোস্টেল তৈরি হয়নি। পড়ুয়াদের জন্য নেই কোন খেলার মাঠও। সূত্রের খবর ইতিমধ্যে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জমি চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের পাশে রয়েছে যা খেলার মাঠ এবং হোস্টেল করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেই জমি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার জন্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে বারবার চাপ সৃষ্টি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবি ২০১৬ সাল থেকে ওই জমিতে প্রস্তাবিত পরিকাঠমো গড়ে তোলার জন্য দফায় দফায় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ তাঁরা হয়েছেন। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা এখন দাবি করছেন প্রয়োজনে নিউ টাউনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও ১০ বিঘা জমি বরাদ্দ করতে হবে রাজ্য সরকারকে হোস্টেল এবং খেলার মাঠের জন্য।
সমস্যা কার কাছে জানাবে ছাত্ররা? উপাচার্যের কাছে। কিন্তু ১০ মাস কোন স্থায়ী উপাচার্য নেই আলিয়ায়। তিনি মাদ্রাসা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করছেন। তাঁর অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তিনি অধ্যাপক নন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কোনও অভিজ্ঞতা নেই, তারপরেও তিনি আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কিভাবে? স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠনই করা হয়নি।
২০ কোটি টাকা দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা শাসকের কাছ থেকে বানতলা এবং ঘটকপুকুর এর মাঝামাঝি জমি নিয়ে গড়ে ওঠে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। রাজারহাটে ১৫ একর জমিতে তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নার্সিং কলেজ।
পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল সামাজিক ও আর্থিক বিচারে বঞ্চিত অংশের পড়ুয়ারা যাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়। সেই লক্ষ্যেই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি বিভাগ তৈরির পেছনে মূল লক্ষ্য ছিল পড়ুয়ারা যাতে পড়া শেষ করে ক্যাম্পাসিং এর মাধ্যমে চাকরি পান। পড়ার খরচের ৯০% বহন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
কিন্তু বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে ক্যাম্পাসিংয়ে মেকানিক্যাল নিয়ে পড়াশোনা শেষ করা পড়ুয়াকে চাকরির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে আইটিতে, এমনই অভিযোগ পড়ুয়াদে
Comments :0