এদিন সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যেভাবে অ্যাডিনো ভাইরাস ছড়াচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিশু হাসপাতাল সহ বেশ কিছু হাসপাতাল থেকে এই ভাইরাস আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর খবর মিলেছে। একইসঙ্গে বেড না পাওয়ার অভিযোগও সামনে আসছে। আইসিসিইউও প্রয়োজন মতো মিলছে না বলে অভিযোগ। চিকিৎসা পরিকাঠামোও দুর্বল হয়েছে। একটা জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের কোনও হেলদোল নেই।’’
তিনিকে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু এই বিষয়ে নজর না দিয়ে তিনি সিভিক ভলান্টিয়ারদের সামনে কনস্টেবল হওয়ার টোপ ঝোলাতে এবং মেঘালয়ে বিজেপিকে সুবিধা করে দিতে ব্যস্ত। এরাজ্যের শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর কোনও আগ্রহ আছে বলে মনে হচ্ছে না।’’
সম্প্রতি মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, তাঁর সরকার সিভিক ভলান্টিয়ারদের কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সামনে ভোট। তৃণমূল বিপদে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন। তাই সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের কনস্টেবল পদে নিয়োগের টোপ দিয়েছেন। এটা হাস্যকর একটা দাবি। এই মুহূর্তে রাজ্য পুলিশে ৪০ হাজার কনস্টেবল পদ খালি রয়েছে। এই পদে এতদিন নিয়োগ হয়নি কেন?’’
রাজ্যের বহু থানার অধিনে দেড়শো থেকে আড়াইশো সিভিক ভলান্টিয়ার রয়েছে। তাঁদের মধ্যে কজন নিয়োগ পাবেন? এই প্রশ্ন উষ্কে দিয়ে চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যদি সিভিক ভলান্টিয়ারদের কনস্টেবল পদে নিয়োগ করা হয়ও, তাহলে ৪-৫জনের ভাগ্যে শিকে ছিড়বে। আমরা জানতে চাই, এই গোটা প্রক্রিয়াটা কত টাকার বিনিময়ে সম্পন্ন হবে? কোন নেতার কথায় এই নিয়োগটা হবে? আর যেই দুশো-আড়াইশো জনের নিয়োগ হবে না, তাঁরা কি বানের জলে ভেসে আসল? এটা নিয়ে তো সিভিক ভলান্টিয়ারদের মধ্যে অশান্তি তৈরি হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এটা টোপ ছাড়া কিছু নয়।’’
এরইসঙ্গে চক্রবর্তী সিভিক ভলান্টিয়ারদে নিয়োগপত্র দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘‘আজ অবধি এই সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়নি কেন? এই ভলান্টিয়াররা পিএফ, ইএসআই’র মত সামাজিক সুরক্ষা পাননা। তাঁরা ন্যূনতম মজুরি ২১ হাজার টাকার কম বেতন পান প্রতি মাসে। কেন সিভিক ভলান্টিয়ারদের সঙ্গে এই বঞ্চনা করা হচ্ছে? এটা চলতে পারেনা। আমরা সমস্ত সিভিক ভলান্টিয়ারের নিয়োগপত্র, ২১ হাজার টাকা বেতন এবং সামাজিক সুরক্ষার দাবি জানাচ্ছি।’’
এর পাশাপাশি ক্যাগ বা কেন্দ্রীয় হিসেব রক্ষক প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট নিয়েও সরব হন চক্রবর্তী। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যের অর্থ দপ্তরের হিসেবের গরমিল ভয়াবহ। বিভিন্ন প্রকল্পে কীসের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে, কেন খরচ হচ্ছে? খরচ দেখানো হয়েছে অথচ কাজ হয়নি। কাগজে কলমেই তো দুই-আড়াই লক্ষ কোটি টাকার কাজ দেখানো হয়েছে। এবং সেটা নিয়ে মামলা হয়েছে। এই অসততা রাজ্য সরকার করছে, সেটা মুখ্যমন্ত্রী জানেন, এবং সেটাকেই প্রশ্রয় দেন।’’
এই বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দুর্নীতির প্রশ্নে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে যাতে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে না হয়, তাই অগণতান্ত্রিক ভাবে এই কমিটি থেকে বিরোধীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই জায়গায় তৃণমূলের বিধায়করা গিয়ে বসেছে। তারপরেও ক্যাগের রিপোর্টে একাধিক দুর্নীতি ধরা পড়েছে। কিন্তু আমরা বলছি এত কিছুর পরেও সমস্ত দুর্নীতি ধরা পড়বে, এবং যেই আধিকারিকরা এই বেআইনি কাজে যুক্ত হয়েছেন, তাঁদের হাতেও হাতকড়া পড়বে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের বাঁচাতে পারবেন না।’’
Comments :0