Anubrata mondal

ঠেকানো গেল না, আজই দিল্লি যেতে হচ্ছে অনুব্রতকে

রাজ্য

একদিকে রাজ্যের শাসক তৃণমূল-পুলিশ প্রশাসনের যৌথ ‘তৎপরতা’, অন্যদিকে বিপুল টাকা বিনিময়ে দাপুটে আইনজীবী ভাড়া করে গত তিনমাস ধরে কলকাতা থেকে দিল্লি একের পর এক আদালতে মামলা করেও শেষরক্ষা হলো না! শেষে অনুব্রত মণ্ডলকে গোরু পাচারকাণ্ডে দিল্লি যেতেই হচ্ছে। মঙ্গলবার দোলের দিনই অনুব্রতকে নিয়ে দিল্লি যাওয়া হবে। অনুব্রতর মুখ খোলার সম্ভাবনাকে ঘিরে আতঙ্কে রয়েছে তৃণমূলের প্রভাবশালী মহলও। কয়লা পাচারের টাকা ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে কোন প্রভাবশালীর পরিবারে, আত্মীয়ের বিদেশের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে তা নিয়ে অনুব্রত মুখ খুললে তৃণমূলের বিপদ আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকাল ছটায় আসানসোল জেল থেকে বের করে পুলিশি নিরাপত্তায় অনুব্রতকে নিয়ে আসা হবে জোকায় ইএসআই হাসপাতালে। শারীরিক পরীক্ষার পর ইডি’র হাতে তুলে দেওয়া হবে তাঁকে, দুপুরেই বিমানে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হবে তৃণমূল নেতাকে। ওইদিনই গোরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে পেশ তোলা হবে। নিজেদের হেপাজতে নিয়ে জেরা করার আবেদন জানাবে ইডি।
শনিবার কলকাতা হাইকোর্ট অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লি যাওয়া ঠেকানোর আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। তবে এরপরেও ওঁর দিল্লি যাত্রা পিছিয়ে দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় রাজ্য প্রশাসন। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত দু’ফায় ইডি’র তরফে আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। আসানসোল জেলের তরফে অনুব্রতকে কলকাতা হয়ে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য আসানসোল- দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করা হয়। আবার আসানসোল পুলিশ জানিয়ে দেয় অনুব্রতকে নিয়ে যেতে পারবে না। 
তবে সোমবার সকালে আসানসোলে সিবিআই’র বিশেষ আদালতে হাজির হয়ে ইডি’র তরফে গোটা ঘটনা তুলে ধরে পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কথা জানানো হয়। ইডি’র তরফে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টেও গোটা বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সিবিআই’র বিশেষ আদালত এরপর স্পষ্ট নির্দেশ দেয় অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে হবে। সেই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ, রাজ্য পুলিশ ও ইডি’র ভূমিকাও নির্দিষ্ট করে দেন বিচারক। 
আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ অনুব্রতকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবে এবং তাঁকে নিরাপত্তা দেবে আসানসোল পুলিশ। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে ‘ফিট সার্টিফিকেট‘ নেওয়ার পর অনুব্রতকে ইডি’র হাতে তুলে দেওয়া হবে। এরপর ইডি আধিকারিকরা অনুব্রতকে দিল্লিতে নিয়ে যাবেন। জেল কর্তৃপক্ষ ইমেল এবং ফোনের মাধ্যমে আসানসোল পুলিশ এবং ইডি’র তদন্তকারী আধিকারিক পঙ্কজ কুমারকে সব তথ্য জানিয়ে দেবে। দ্রুত এই প্রক্রিয়া করতে হবে বলেও জানান বিচারক। সম্ভবত ওইদিন বিকালের মধ্যেই ইডি রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে হাজির করবে অনুব্রতকে। গোরু পাচারকাণ্ডে জেরার পরে এবার অনুব্রতর গন্তব্য হতে চলেছে তিহার জেল। সেখানেই রয়েছে গোরু পাচারকাণ্ডে আরেক অভিযুক্ত ওঁর দেহরক্ষী, পুলিশকর্মী সায়গল হোসেন।
গোরু পাচারকাণ্ডে নয়’বার সিবিআই’র জেরার পরে গত ১১ আগস্ট সকালে বোলপুরের নীচুপট্টিতে তাঁর বাড়ি থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহের ‘কেষ্ট’ ওরফে অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। এরপর দু’দফায় ১৪ দিনের সিবিআই হেপাজতের পর থেকে গত ছয় মাস ধরে জেলে বন্দি এই তৃণমূল নেতা। এরপর আদালত থেকে অনুমতি নিয়েই গত ১৭ নভেম্বর আসানসোল জেলে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অনুব্রতকে জেরার পরে  গ্রেপ্তার করে ইডি। তারপরের দিনই অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর  দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে অনুব্রতর বিরুদ্ধে ‘প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট’ জারির আবেদন জানায় ইডি। তদন্তকারী সংস্থার তরফে আইনজীবী নীতেশ রানা আদালতে জানান, তদন্তে এই পর্বে অনুব্রতর বিরুদ্ধে নতুন তথ্য মিলেছে। তাই অনুব্রতকে দিল্লিতে নিয়ে এসে জেরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপরেই রাজ্য সরকার, প্রশাসনের পালটা একের পর কৌশল নিতে শুরু করে অনুব্রতর দিল্লি যাত্রা ঠেকানোর।
একমাস পরে  ১৯ ডিসেম্বর দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট ইডি’র আবেদন মঞ্জুর করে গোরু পাচারকাণ্ডের মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট ইস্যু করে। সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লি হাইকোর্টে যায় অনুব্রত মণ্ডল। কপিল সিবাল, মুকুল রোহতগীদের মতো আইনজীবীদের বিপুল টাকা খরচ করে নামানো হয় এই মামলায়। একই সঙ্গে আদালত নির্দেশ বেরোনোর আগেই এক রাতের মধ্যে তৃণমূল কর্মীকে দিয়েই মিথ্যা মামলা রুজু করে দুবরাজপুর থানায় নিয়ে আসা হয় অনুব্রতকে। সেই মামলায় জামিন পেয়ে যাওয়ার পরে ফের আসানসোল জেলেই ফিরতে হয় অনুব্রতকে। দিল্লি হাইকোর্টে গত প্রায় তিন মাস ধরে শুনানিও বারে বারে পিছিয়ে যাচ্ছিল। শেষমেশ গত মঙ্গলবার রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট প্রশ্ন তোলে অনুব্রতর প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করা হলেও তা কার্যকর করা হয়নি কেন? তারপরেই অনুব্রতকে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে হাজির করার জন্য ফের সমন জারি করা হয়। আদালতের সেই সেই নির্দেশ বুধবারই আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষকে জানায় ইডি। গত বৃহস্পতিবার আসানসোল সিবিআই আদালত অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। তারপরেও তিহার যাত্রা আটকাতে একইসঙ্গে কলকাতা ও দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানান অনুব্রত মণ্ডল। তবে তা ধোপে টেকেনি।

Comments :0

Login to leave a comment