তৃণমূল এবং বিজেপি’র দুই মন্ত্রীর নেতৃত্বে এলাকা দখলের লড়াইতে কোচবিহারের দিনহাটা সহ বিভিন্ন এলাকা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। দুই দলের দুষ্কৃতীবাহিনীর তাণ্ডব ও ভাঙচুরে সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন জেলায় কার্যত নৈরাজ্য চলেছে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায়।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এই ঘটনা নিয়ে রাজভবন থেকে বিবৃতি দিয়ে যা বলেছেন তাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাজ্যপাল নিজেই জানিয়েছেন যে, তিনি গোপন তদন্ত করে জেনেছেন যা ঘটেছে তা উদ্বেগজনক। এমনকি এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যে যে ৩৫৫ ধারা অর্থাৎ কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের দাবি উঠেছে সেটাও তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করে দিয়েছেন।
সেই সঙ্গে বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, কঠোর হাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ এবং প্রশাসনের কাছে নির্ভয়ে পক্ষপাতহীন আচরণ প্রত্যাশা করা হয়। এর থেকে বিচ্যুতি বরদাস্ত করা হবে না। আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে রাজ্যপাল চুপ করে বসে থাকবেন না। কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে আইনরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনের কাছ থেকে।
সদ্য ‘হাতেখড়ি’র পরেই রাজ্যপালের হাত দিয়ে এমন বিবৃতি বের হওয়ায় ফের রাজভবন এবং নবান্নের মধ্যে তরজা পর্ব শুরু হবে কিনা তা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি নেতাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু যে কোচবিহারে উত্তাপ বাড়ছে সেখানকার মানুষ দুষ্কৃতী তাণ্ডব থেকে রেহাই চাইছেন। বোমা, গুলির তাণ্ডবে তাঁরা বিপন্ন বোধ করছেন।
রাজ্য সরকারের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের উসকানিমূলক বক্তব্য ও তাঁদের বাহিনীর দাপটে আতঙ্কের পরিবেশ ছড়িয়েছে দিনহাটা মহকুমায়। শনিবার দিনহাটা বুড়িরহাটে নিশীথ প্রমাণিকের জনসংযোগ কর্মসূচিকে ঘিরে তৃণমূল-বিজেপি’র বাহিনীর সংঘাতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট এলাকা। ইট পাটকেল, বোমা সবকিছু ব্যবহার করে দুই পক্ষ। বিবদমান পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে হয় পুলিশকে। একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর গাড়িতে আক্রমণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের প্রায় ২০টি বাইক ভাঙচুর এবং স্থানীয় তৃণমূল দপ্তরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। এরপর সন্ধে নামতেই দিনহাটার সাহেবগঞ্জ অঞ্চলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও বামনহাট ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কালমাটি এলাকায় ৪টি বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বুড়িরহাটে তৃণমূল বিজেপি সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গুলি ও ৩টি ধারালো অস্ত্র, কিছু তির উদ্ধার ও ১৮জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার রাতে সাহেবগঞ্জ থানায় সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানান কোচবিহার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানি রাজ।
রাজনৈতিক সন্ত্রাসের উত্তাপ রবিবার এসে পড়েছে কোচবিহার জেলার নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত চিলাখানা ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের দেওচড়াই মোড় সংলগ্ন এলাকায়। এমএলএ কাপ ভলিবল টুর্নামেন্টকে ঘিরে এদিন সকাল থেকেই প্রবল রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এই এলাকায়। মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন প্রকাশ্য দিবালোকে বোমা বন্দুক সহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুই দলের দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি দুটো দলই উচ্ছৃঙ্খল, এদের কোনও শিষ্টাচার নেই, শৃঙ্খলাবোধও নেই। এরা উভয় পক্ষই একই গোডাউনের সামগ্রী। এই রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন শাসকদলের দলদাসে পরিণত হওয়ায় দুষ্কৃতী তাণ্ডবের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সব কিছুরই একটা শেষ আছে। প্রশাসন এই নৈরাজ্য বন্ধ না করলে জনগণই এদের প্রতিরোধ করবে। তিনি বলেন, মানুষের জীবনজীবিকা বিপন্ন দুই সরকারের নীতিতে। সেই দিক থেকে নজর ঘোরাতে রাজ্যের মন্ত্রী আর কেন্দ্রের মন্ত্রীর হিরো সাজার প্রতিযোগিতা চলছে।
Comments :0