Bengaluru Stampede

মর্মান্তিক

সম্পাদকীয় বিভাগ

আনন্দ জীবনের অঙ্গ।  উৎসবে মেতে ওঠাতেও কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু আনন্দের আতিশার্য যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, যদি সেটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় তাহলে বিপদের আশঙ্কা প্রবল হয়ে পড়ে। খেলাধুলা সহ নানা উপলক্ষে প্রায়শই মানুষ আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠেন। আনন্দ ব্যক্তিগত পরিসর থেকে বেরিয়ে যখন সামাজিক পরিসরে ব্যাপ্ত হয় তখন তার নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়লে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের দায়িত্ব সর্বাধিক হয়ে পড়ে। পুলিশ যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় তখন জীবনঘাতী দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে পড়ে। এমন গৌরবচন্দ্রিকা আসলে ব্যাঙ্গালুরুর মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। খেলা জয়ের আনন্দে উদ্বেল মানুষ এতটাই সাধারণ জ্ঞানহীন হয়ে পড়েছিলেন এবং পুলিশ এতটাই ব্যর্থতার নজির রেখেছিল যে ১১টি নিরীহ প্রাণকে হারাতে হলো। ক্রিকেট ব্যবসার বিশ্ব সেরা প্রতিযোগিতা আইপিএল ট্রফি এবার প্রথম জয় করেছে রয়াল চ্যালেঞ্জার ব্যাঙ্গালুরু বা আরসিবি। ১৮ বছরের ইতিহাসে একাধিকবার কোয়ার্টার ফাইনাল এবং সেমিফাইনালে খেলেছে। খেলেছে ফাইনালেও। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন অধরাই থেকে গেছে। তাই দীর্ঘদিনের সুপ্ত আশঙ্কা পূরণ হবার মুহূর্তে সমর্থকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। আর সেই আনন্দের বহিপ্রকাশে এত জনসমাগম হয়ে যাবে অনেকেরই ভাবনার অতীত ছিল। এটা ভাবতে না পারাটাই বেঙ্গালুরু পুলিশের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ১১ জনের মৃত্যুর দায় তাই পুলিশ তথা সরকারের উপরই বর্তায়।
ভারতের প্রযুক্তি নগরী বাঙ্গালুরু নিঃসন্দেহে একটি আধুনিক স্মার্ট সিটি। বিশ্বের প্রায় সব শীর্ষ তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার শাখা আছে এই শহরে। নিত্য যাতায়াত কর্পোরেট দুনিয়ার লোকজনদের। এহেন শহরের আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, ভিড় সামলানোর দক্ষতা অনেক বেশি পরিমাণে থাকার কথা পুলিশের। কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশ ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠিও পেরোতে পারেনি। ফাইনাল খেলার দিন জয়ের খবর পেয়ে সমর্থকদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল এবং তারা যেভাবে রাস্তায় নেমে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিল তাতেই বোঝা গিয়েছিল পরদিন বিজয় উৎসবে উচ্ছ্বাসের মাত্রা কেমন হতে পারে। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য পুলিশ এবং সরকার সেটা অনুমান করতে পারেনি। বড়জোর দশ-বিশ হাজার জমায়েত হবে ধরে নিয়ে ৩৪ হাজার আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা করে। সেই মতো হয় পুলিশি ব্যবস্থাও কিন্তু বাস্তবে লোক জড়ো হয় তার বহুগুণ। এত মানুষের ভিড় সামলানোর কোনও ব্যবস্থা পুলিশের ছিল না। সম্ভাব্য ভিড়ের জন্য আগাম কোনও পরিকল্পনাও ছিল না। তাই স্টেডিয়ামের বাইরে লক্ষাধিক মানুষের হুড়োহুড়িতে মরতে হয় এতজনকে। আরও যেটা নিন্দনীয় সেটা হলো বাইরে এমন মর্মান্তিক অঘটন ঘটে যাবার পরও স্টেডিয়ামের ভেতর উৎসব চালিয়ে যাওয়া। এমন অমানবিকতা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। কর্নাটকের সরকার এবং বেঙ্গালুরু পুলিশকে গোটা ঘটনার দায় মাথা পেতে নিতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের ইতিকর্তব্য নির্ধারণ করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment