সৌরভ গোস্বামী
দুর্নীতি-দুষ্কৃতীবাজ আর দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে মিছিল শুরু টালিগঞ্জ থেকে। ব্রিগেডের দিকে এই মিছিলে ঢল জনতার। রয়েছেন যুবরা, ব্যাপক সংখ্যায়।
রবিবার বেলা ১টার আগেই কলকাতা জুড়ে কেবল এমনই ছবি। রেলপথ, স্থলপথ তো বটেই। জনতা আসছেন জলপথেও। ট্রেনের গোলমাল থামাতে পারেনি অদম্য জেদকে। প্রতিবাদের তরঙ্গস্রোত সব বাধা ঠেলে ব্রিগেডে।
শিয়ালদহ স্টেশনেই এখন জমায়েত করা যায়। ট্রেন বাতিল, সূচিতে বদল করেছে রেল। তবু শনিবার রাত থেকেই কোনক্রমে ঠাসাঠাসি করে ব্রিগেড অভিমুখে আসছেন জনতা। রবিবার বেলা বারোটায় এই ছবিই শিয়ালদহে।
কিছু আগেই খবর এসেছে উলুবেড়িয়া থেকে। ট্রেন বাতিল থাকায় নৌকায় চড়ে জনতা আসছেন ব্রিগেডে।
আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের দলুয়াখাকিতে সাহসী জমায়েত পার্ক সার্কে রবিবার সকালেই। তারও গন্তব্য ব্রিগেড। যৌবনের ডাকে জনতার ব্রিগেড।
বেলা বারোটা নাগাদ শিয়ালদহ চত্বরে স্লোগানের পর স্লোগান। ‘হল্লা বোল’ বা ‘চোর তৃণমূল’ স্লোগানে উত্তাল স্টেশন। বহু নিত্যযাত্রী দাঁড়িয়ে দেখছেন ব্রিগেড যাত্রীদের। বিপুল অংশের ছাত্র-যুবদের দেখা যাচ্ছে শিয়ালদহে। ধরা পড়ছে লড়াইয়ের জেদ। মিছিলে পা মিলিয়েছেন দলুয়াখাকির বাসিন্দারা। পার্ক সার্কাস থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মিছিলে এসেছেন জয়নগরের এই গ্রামের মানুষ। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে যাঁদের ঘর তছনছ করেছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী।
এর আগে ইনসাফ যাত্রার সময়ও ২২ ডিসেম্বর বারুইপুরে ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করেছিলেন দলুয়াখাকির আক্রান্ত পরিবারের মহিলারা। তৃণমূল কেবল বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের ঘর পোড়ায়নি। পুলিশকে দিয়ে বাধা দেয় ত্রাণ এবং সহায়তা দিতেও। সেই বাধা ভেঙে পাশে থেকেছেন বামপন্থী কর্মী-সমর্থকরা।
রবিবার বুঝিয়ে দিয়েছে মারাত্মক হমলা চালিয়েও ভয় দেখানো যাচ্ছে না দলুয়াখাকিকে। সেখান থেকে এসেছেন মানুষ। গন্তব্য ব্রিগেড।
নভেম্বরে জয়নগরে খুন হন তৃণমূলের নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। ঘটনাস্থলেই তৃণমূলের বাহিনী আর একজনকে মেরে ফেলে পিটিয়ে। তারপরই তৃণমূলের একদল দুষ্কৃতীরা প্রায় চার কিমি দূরে দলুয়াখাকিতে হামলা চালায়। অন্তত ২০টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ৩০টি বাড়িতে লুট করে, ভাঙচুর চালায়। মহিলাদের মারে, শ্লীলতাহানি করে। শিশুদের ছুঁড়ে পুকুরে ফেলে দেয়। গ্রামছাড়া করে অনেককে। দলুয়াখাকিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে সিপিআই(এম) প্রার্থীকে জোর করে তৃণমূল হারিয়ে দেয়, তাঁর বাড়িতেও হামলা হয়েছিল। ওই হামলা, ঘর জ্বালানোর ঘটনাতেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি।
উলুবেড়িয়া পূর্ব কালিনগর গ্রাম থেকে নৌকা করে নদীপথে ব্রিগেডে রওনা হলেন বহু মানুষ।
দক্ষিণ পূর্ব রেলের পাঁশকুড়া-হাওড়া লোকাল বাতিল। ট্রেনটি পাঁশকুড়া হাওড়ার পরিবর্তে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত যাতায়াত করবে। ট্রেনপথে ব্রিগেড যাওয়ার মূল সময়ে প্রায় দেঢ ঘন্টা সরাসরি হাওড়া স্টেশনে যাওয়ার কোনও ট্রেন নেই। বহু স্টেশনে থই থই করছে ব্রিগেডমুখী জনতা।
Comments :0