CBI RG KAR CHARGESHEET

সিবিআই’র চার্জশিটে অভিযুক্ত মাত্র এক!

রাজ্য

তদন্তভার হাতে পাওয়ার ৫৭ দিন পরে আর জি করের নৃশংস ঘটনায় প্রথম দফার চার্জশিট দায়ের করল সিবিআই। সোমবার দুপুরে নিম্ন আদালত শিয়ালদহ কোর্টে মুখবন্ধ খামে এই চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আর জি করে পড়ুয়া চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
একইসঙ্গে তদন্ত চলছে, পরবর্তীতে আরো কয়েক দফায় অতিরিক্ত (সাপ্লিমেন্টারি) চার্জশিট করা হবে বলে জানানো হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে। আগামী সোমবার সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানি। তার আগেই সিবিআই-র তরফে প্রথম দফার এই চার্জশিট পেশ করা হলো। ধর্ষণ ও ধর্ষণকাণ্ডে একজন নাকি একাধিকজন যুক্ত, কীভাবে তথ্য প্রমাণ লোপাট করা হলো, কেন ধর্ষণ ও খুন করা হলো ওই পড়ুয়া চিকিৎসককে, উদ্দেশ্য কী- এরকম একাধিক প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে শুধু এরাজ্যের মানুষ নয় দেশ জুড়ে আর জি করের বর্বরতায় পথে নামা সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসক সমাজ। যদিও সিবিআই-র প্রথম দফায় চার্জশিটে এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলেছে তা নয়- তদন্তের প্রাথমিক পর্বের নির্যাস এটি। তদন্ত চলছে। সঞ্জয় রায়কে ধর্ষণ ও খুনের অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু সে একাই যুক্ত ছিল নাকি আরও কয়েকজন ছিল, এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর এদিন সিবিআই-র তরফে দায়ের করা ৫৮ পাতার চার্জশিটে নেই বলেই জানা গেছে। 
৫৮ পাতার চার্জশিট, অ্যানেক্সার নিয়ে ২০০র বেশি পাতার চার্জশিট শিয়ালদহ আদালতে জমা দিয়েছে সিবিআই। চার্জশিটে প্রায় ২০০জনের নাম সহ তাঁদের বয়ান উল্লেখ করা হয়েছে এই ঘটনায়। মূলত সাক্ষী এবং সন্দেহভাজন বা ঘটনা সম্পর্কে অবহিত এমন প্রায় ২০০জনের জেরা থেকে উঠে তথ্যও যুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে-দাবি সিবিআই-র। আদালতের একটি সূত্রে জানা গেছে আদালত সূত্রের খবর, সিবিআই-র দাখিল করা চার্জশিটে ২০০ জনের বয়ানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অন্যতম মূল অভিযুক্ত হিসেবে এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ওই সিভিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এটা আদৌ কোনও চূড়ান্ত চার্জশিট নয়। তদন্তের স্বাভাবিক অগ্রগতিতে আরও একাধিক নাম আরও একাধিক চার্জশিটে যুক্ত হতে পারে বলেই জানা গেছে সিবিআই-র তরফে।
এএইচএসডি’র যুগ্মসম্পাদক ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী সিবিআই-র এই চার্জশিট দায়েরের প্রসঙ্গে বলেন- সংবাদমাধ্যমে শুনেছি সিবিআই প্রাথমিক চার্জশিট জমা দিয়েছে। তা তো আমরা দেখিনি, মুখবন্ধ খামে দিয়েছে। আমরা চাই সত্য সামনে আসুক। কারা তথ্য প্রমাণ লোপাট করল তাও সামনে আসুক। এর আগে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টে যখন মুখবন্ধ খাম জমা দিয়েছিল সিবিআই, তা দেখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বের বেঞ্চ প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনেই বলেছিলেন ‘ভেরি ডিস্টার্বিং’। খোদ প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ যে রিপোর্ট দেখে শিউরে উঠেছিল সেই তদন্তে চূড়ান্ত ভাবে কী সত্য সামনে আসে তা আমরা সকলেই দেখতে চাই। আমরা চূড়ান্ত চার্জশিটের দিকেই তাকিয়ে আছি’। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররাও এদিন জানিয়েছেন এটা প্রথম দফার চার্জশিট, চূড়ান্ত চার্জশিটের দিকেই তাকিয়ে আছি। সত্য সামনে আসা জরুরি। লক্ষ লক্ষ মানুষসেই অপেক্ষায়’।
আদালতের একটি সূত্রে জানা গেছে সিএফএসএলের রিপোর্ট, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে সঞ্জয় রায়ের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে সিবিআই। প্রথম থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল সেদিন ভোর রাতে চারটের পরে যদি ঘটনা ঘটে থাকে তবে মাত্র ২৯ মিনিটের মধ্যে কীভাবে এক মদ্যপ অবস্থায় থাকা ব্যক্তি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটিয়ে, দেহ পরিপাটি করে রেখে নিশ্চিন্তে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে গেল? সিবিআই সূত্রে জানা গেছে সেদিন পুলিশের দেওয়া ফুটেজ অনুযায়ী সেদি ভোর ৪টে ৩ মিনিট নাগাদ চার তলার সেমিনার রুম সংলগ্ন করিডোরে দেখা যায় ধৃত সিভিককে। ৪টা ৩২ মিনিট নাগাদ তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। একজনের পক্ষে ২৯ মিনিটে এতকিছু করা সম্ভব? তার স্পষ্ট উত্তর প্রথম দফার চার্জশিটে আছে কী? সিবিআই-র তরফে জানানো হয়েছে তদন্ত চলছে। ওই পড়ুয়া চিকিৎসকের ওপর নৃশংস ভাবে অত্যাচার হয়েছে, মৃত্যুর আগে রীতিমত নৃশংসভাবেই মারধোর করা হয়েছে তাও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে। 
এদিকে আর জি করে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে এবার জেলে গিয়ে সন্দীপ ঘোষকে জেরার করার আবেদন জানানো ইডি। ২ সেপ্টেম্বর এই দুর্নীতির মামলাতেই মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ আর জি করের প্রাক্তন ধিক্কৃত অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, হাওড়ার ব্যবসায়ি সক্রিয় তৃণমূল কর্মী বিপ্লব সিং, ওষুধ সরবরাহকারী সুমন হাজরা ও আর জি করের ক্যান্টিন চালানো তৃণমূল কর্মী আফসার আলি খান। সন্দীপ ঘোষ সহ ধৃত বাকী তিনজনকেও এই মামলায় জেরা করার জন্য আদালতে আবেদন জানায় ইডি। সোমবার আলিপুরের সিবিআই-র বিশেষ আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছে।

Comments :0

Login to leave a comment