প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়
যে দুজন জনপ্রিয় অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং বিশ্বনাথ বসু। তাঁরাই এখানে দোল উৎসব নিয়ে বলেছেন, তাঁরা এখন আর দোল উৎসবে গা ভাসাতে পারেন না। তাঁদের জীবনেও ছোটবেলা ছিল। আমাদের মতই মজার ছোটবেলা। যা বড়বেলায় এসে বেশি করে আঁকড়ে ধরে। এখন তাঁরা দোল না খেললেও তাঁদের মন উত্তাল করে ছোটবেলার দোলের স্মৃতি। দোল উৎসব এলেই তাঁদের ব্যস্ত জীবনেও উঁকি মারে ছোটবেলার দোল উৎসবের ধরে রাখা স্মৃতিগুলো। কেমন ছিল এই দুই জনপ্রিয় অভিনেতার ছোটবেলার দোল? অল্প কথায় তাঁরা সেই স্মৃতিই এখানে তুলে ধরেছেন।
শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের দোল
ছোটবেলার দোল মানেই আমার মামারবাড়ি। আমার মামারবাড়ি হচ্ছে উত্তর কলকাতার কৈলাস বোস স্ট্রিটের চাটুজ্জে বাড়ি। আমার বেশ মনে আছে, দোলের আগে নেড়া পোড়া হত। এখন এসব হয় কিনা জানি না। আমার ওই নেড়া পোড়ার দিনটা মামারবাড়িতেই কাটত। নেড়া পোড়ানোর পরেরদিন হত দোল খেলা। তবে দোল খেলায় আমার বাড়ি চলে আসতাম। উত্তর কলকাতার ছিদাম মুদি লেনে। তখন সেই ছোটবেলায় বীভৎস রঙ খেলা হত। সেই রঙ খেলায় কি না কি রঙ ব্যবহৃত হত, মানে মারাত্মক মারাত্মক রঙ আর কি। দোল খেলার পর সেই রঙ পরিষ্কার করতে অনেক সময় কেটে যেত।
এখনও আমার মনে আছে, তখন আমরা পেতলের পিচকারি দিয়ে দোল খেলতাম। অনেক বন্ধু বান্ধব জমা হত। তারপর শুরু হত সে এক দোল খেলা বটে। অনেক সময় বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পড়তাম। কোনও সময় বা দোতলার ঘরের জানলা গলিয়ে পিচকারি দিয়ে বাইরের লোকজনের গায়ে রঙ দিতাম। তারপর শুরু হত হৈ হুল্লোড়। অনেকেই রেগে যেতেন। শেষ পর্যন্ত বাবা মা’র বকুনি। ছোটবেলায় যা হয়, এগুলোতে খুব মজা লাগত।
এমনকি বেলুনে জল ভরে রাখতাম। এখন হয়ত এই বেলুন ছোঁড়া হয় তবে তাতে জল থাকে না অন্য কিছু থাকে জানি না। আমরা লুকিয়ে ওই জল বেলুন লোকের গায়ে ছুঁড়ে মারতাম। আরেকটা জিনিস আমাদের ছোটবেলায় থাকত সেটা হলো কুমকুম। সেটা ছুঁড়ে মারা হত। এখন হয়ত কমে গেছে ব্যাপারটা।
তখন দলবেঁধে পাড়ায় দোল খেলতে বের হতাম। প্রথমেই হত কী বড়রা আমাদের ধরে এমন রঙ মাখিয়ে দিত যে, আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজেরা নিজেদের চিনতে পারতাম না। তবে এর মধ্যে একটা মারাত্মক ব্যাপার ছিল, মুখে নানা রকমের যে রঙ মাখিয়ে দেওয়া হত সেগুলো সাংঘাতিক ছিল। তুলতে জান বেরিয়ে যেত যেমন তেমনি ক্ষতি হবার ভয় থাকত। বিশেষ করে চোখে লাগলে ভয় ছিল। এখন এই সব রঙ দিয়ে হয়ত খেলা হয় না। অনেক রকম উন্নতমানের রঙ বেরিয়েছে। ভেষজ রঙও এসে গেছে।
ছোটবেলার দোল খেলার এই সব স্মৃতির সঙ্গে আরেকটা জিনিস জড়িয়ে থাকত সেটা হলো মঠ আর ফুটকড়াই। এগুলো অবশ্য এখনও আছে। তা দোল উৎসব এলেই এই স্মৃতিগুলো এখনও আমায় ঘিরে ধরে। মনে পড়ে যায় ছোটবেলার দোল খেলার কথা। আনমনেই কেমন নস্টালজিক হয়ে পড়ি।
বিশ্বনাথ বসুর দোল
ছোটবেলার দোল খেলা বলতে আমার কাছে রঙ খেলার তেমন স্মৃতি নেই। আসলে ছোটবেলায় পূর্ণিমার দোলের চেয়ে পঞ্চমীর দোল আমার কাছে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। যে দোলটা হত পূর্ণিমার পাঁচদিন পর আমার দেশের বাড়িতে। এখনও হয়, গত মাস থেকে শুরু হয়েছে। আসলে এই উৎসবটায় দোল খেলা সেই ভাবে হয় না। পূর্ণিমা উৎসবে আমাদের দেশের কাবাসি পাড়ায় একটা মেলা হয়। বহু মানুষজন আসেন। বলতে গেলে মানুষের মিলনমেলা সেটা। গান বাজনা হয়, খাওয়া দাওয়া হয়। আমরা দলবেঁধে সেই মেলায় যেতাম। খাওয়া দাওয়া হত, হৈ হুল্লোড় হত। এখনও সেসব হয়। আমি দোল উৎসবে গ্রামের বাড়িতেই যাই। ছোটবেলার সেই স্বাদটা যেন ফিরে আসে। পূর্ণিমার দোলের চেয়ে পাঁদিন পরের উৎসবটাই আমাকে বেশি টানে। জীবনে ব্যস্ততা থাকলেও গ্রমের বাড়িতে হাজির হই। ওই উৎসবটার স্বাদ নিতে। আমার ছোটবেলার দোল এটাই আর কি।
Comments :0