প্রাণ যাওয়ার পর হুঁশ ফিরলো প্রশাসনের। হাতির উপদ্রবে শঙ্কিত জঙ্গল এলাকার পড়ুয়াদের গাড়ি করে মাধ্যমিক পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে গেল প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বৈকন্ঠপুর বনবিভাগের মহারাজ ঘাট এলাকায় হাতির হানায় মৃত্যু হয় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের। রাজ্য বন দপ্তর নির্দেশ দেন সব পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সুরক্ষা রাখতে হবে।
শুক্রবার সকাল থেকে বন দপ্তরের বেশ কিছু গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল টাকিমারি এলাকায়। এই এলাকার সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা একত্রিত হওয়ার পর বনদপ্তরের গাড়িতে যায় পরীক্ষা দিতে। অন্য দিকে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যে সকল রাস্তা রয়েছে তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
অর্জুন এবং তার বাবাকে আক্রমণ করেছিল যে হাতিটি বনদপ্তর তার ওপর নজরদারি চালাচ্ছে। শুক্রবার সকালেও সেই হাতিটিকে দেখা গিয়েছে জঙ্গলের ভেতরের রাস্তায়।
মৃত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অর্জুন দাসের পরিবারের হাতে সরকারিভাবে ৫ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন জলপাইগুড়ি জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু।
বৃহস্পতিবার, পরীক্ষা শুরুর প্রথম দিনে, বাবার সঙ্গে বাইকে চেপে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিল অর্জুন দাস। মাঝপথে হাতি রাস্তা আটকে দাঁড়ালো। বাবা বিষ্ণু দাস বেঁচে গেলেও দাঁতাল হাতির আক্রমণ এড়াতে পারেনি অর্জুন। আহত অর্জুনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
টাকিমারি চর এলাকার এক প্রাথমিক শিক্ষক জানান ভেলাকোপা থেকে টাকিমারী চর পর্যন্ত যাওয়ার সমস্ত রাস্তা ভাঙা। জলপাইগুড়ি শহর থেকে টাকিমারির চর অর্থাৎ যেখানে ভোরের আলো প্রজেক্ট তৈরি হয়েছে, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বারপাটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বোদাগঞ্জ এলাকার ভামড়ি দেবী মন্দিরের পাশ দিয়ে যে রাস্তা ধরে গজলডোবা যাওয়া যায়, বারবার পর্যটন ব্যবসায়ীরা সেই রাস্তা সারানোর অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি। প্রকল্প অনুমোদিত হয়ে থাকা সত্ত্বেও কাজ থমকে রয়েছে। ক্ষোভ রয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদেরও।
জলপাইগুড়ি শহর থেকে গজলডোবা ওদলাবাড়ির রাস্তার দূরত্ব কম। কিন্তু বোদাগঞ্জ বাজার থেকে মিলনপল্লী বাজার পর্যন্ত যাওয়ার এই রাস্তা একেবারে খারাপ দশা। প্রায় সাড়ে বারো কিলোমিটার রাস্তা শুধু বেড মেটেরিয়াল ফোলে রাস্তায় তাপ্পি দেওয়া রয়েছে। তাছাড়া রাস্তা খারাপ হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও রয়েছে।
জানা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় এই রাস্তা হয়েছিল। তার রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্ব জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের। স্থানীয়রা বহুবার রাস্তা সারানোর দাবি তুলেছেন। কাজ হয়নি। রাস্তা গর্তে ভরা শুধু ন,য় রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে। এভাবেই পড়ে রয়েছে প্রায় এক বছর।
এই রাস্তা এড়াতেই বাবা সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল এলাকার রাস্তা দিয়ে। তার জেরেই বৃহস্পতিবারের মর্মান্তিক পরিণতি।
টাকিমারি চর এলাকার গ্রামবাসী নৃত্যেন মণ্ডল জানান, হাতির হামলা আমাদের এই এলাকায় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। বনে হাতির খাবার নেই। তাই মূলত শীতের শুরু ও শেষে ফসল পাকলে, আলু খেতে হাতি চলে আসে। খাবারের খোঁজে স্কুলের ঘরে রাখা মিড ডে মিলের চালও দেওয়াল ফাটিয়ে খেয়ে যায় হাতি। মাঝেমধ্যেই স্থানীয়দের আক্রমণ করে হাতি কিছুদিন আগে রংধামালির চর এলাকায় রাতে হাতির হামলায় মৃত্যু হয়েছিল চর এলাকায় এক বয়স্ক ব্যক্তির। কিন্তু হাতির হামলায় মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মৃত্যুর মতো ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি
Comments :0