Tripura Attack

জয়ের পরেই ত্রিপুরায় তীব্র সন্ত্রাস বিজেপি’র

জাতীয়

Tripura Attack

স্বর্ণেন্দু দত্ত : আগরতলা


আশঙ্কামতোই ত্রিপুরায় জয়ের পরেই সিপিআই (এম) কর্মী সমর্থকদের উপরে বেপরোয়া হামলা, আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি। বিশেষ করে যে সব জায়গায় জয়ী হয়েছে পার্টির প্রার্থীরা, সেখানে আক্রমণ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার পরে পরেই। ওইদিন রাতভর আক্রমণের পরেও শুক্রবারও আক্রমণ চলেছে সারাদিন। এদিন বেশি রাত পর্যন্তও পরপর আক্রমণের খবর আসছে। সাব্রুম, খোয়াই, বিলোনিয়া, প্রতাপগড়, সোনামুড়া প্রভৃতি কেন্দ্রে সিপিআই (এম)’র জয়ী আসনগুলিতে মানুষের উপর নির্বিচার আক্রমণ চলছে। এরমধ্যেই পুলিশ কিছু ব্যবস্থা নিলে তেলিয়ামুড়া থানা আক্রমণ করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। তেলিয়ামুড়া থানার ওসি সহ পুলিশ কর্মীরা আক্রান্ত হন। বাধারঘাটেও বিজেপি’র দুষ্কৃতী বাহিনীর হামলা ঠেকাতে বাহিনী লাঠিচার্জ করলে এদিন রাতে আমতলি থানা আক্রমণ করেছে বিজেপি’র বাইক বাহিনী। সংবাদ লেখা পর্যন্ত হামলা চলছে। রাত পর্যন্ত মহকুমা এলাকাগুলি থেকে পার্টিকর্মীরা প্রাণ হাতে নিয়ে আগরতলার নানা জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।

 


সাব্রুমে বৃহস্পতিবার সারারাত আক্রমণ চলেছে বিভিন্ন এলাকায়। শ্রীনগর, মাধবনগর, দমদমা, হরিণার বিস্তীর্ণ এলাকায় রাতভর আক্রমণের জেরে পার্টিনেতা, কর্মী, সমর্থকরা প্রাণ বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা জঙ্গলে লুকিয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিপিআই(এম) রানির বাজার ছোটখিল অঞ্চল অফিসে আগুন দেওয়া হয়। মাধবনগরে সিপিআই(এম) রাজনগর অঞ্চল সম্পাদকের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। হামলা আক্রমণ থেকে মহিলারাও রেহাই পাচ্ছেন না। হরিণায় পার্টি সমর্থক শংকর রায়ের বোনের মাথা ফাটিয়ে দেয় বিজেপি দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় বনকুল সিআইটিইউ সাব্রুম মহকুমা সম্পাদক দীপক দে রাবার বাগানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পার্টিকর্মী, সমর্থকদের উপরে আক্রমণের পরিস্থিতি এত গুরুতর হয়েছে যে, বৃহস্পতিবার ফলপ্রকাশের পর থেকে সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি সাব্রুমে রয়ে গেছেন। এদিন তাঁর আগরতলা ফেরার কথা থাকলেও আসেননি।

 


পাশের বিলোনিয়া মহকুমাতে দুশোর বেশি বাড়ি ঘর দোকান আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুন লাগিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে রবার বাগান। আক্রমণ করা হয় বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে।  বিলোনিয়া মহকুমার ৩টি আসনের মধ্যে ২টিতে জয় পেয়েছে সিপিআই (এম)। এরমধ্যে বিলোনিয়া আসনে নতুন করে জয় এসেছে। ভোটগণনার সময়েই হলের ভেতরে আক্রমণ শুরু করে। বিজেপি দুর্বত্তদের আক্রমণ জোরের সঙ্গে মোকাবিলা করে পার্টিকর্মীরা গণনা কেন্দ্রে অনড় থেকে জয় ছিনিয়ে আনেন। এরপরেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে বিজেপি’র দুষ্কৃতী বাহিনী। রাজনগর, বিলোনিয়া, ঋষ্যমুখ তিনটি বিধানসভার বিভিন্ন এলাকায় বিজেপি’র বাইক বাহিনী আক্রমণে নেতৃত্ব দেয়। শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয় ঋষ্যমুখ ও বিলোনিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী অশোক মিত্র ও দীপঙ্কর সেন সহ বহু কর্মী সমর্থক দরদি।

 

খোয়াই বিধানসভা এলাকায় আক্রমণের তীব্রতা সর্বব্যাপী। বিধানসভার ৫৭টি বুথ এলাকার প্রতিটিতে আক্রমণ হচ্ছে। জোর করে তোলা আদায় করা হচ্ছে সিপিআই (এম) সমর্থক পরিবারগুলির থেকে। দোকানপাট ভাঙচুর করে মালপত্র, টাকাপয়সা লুট করে নেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলগুলির সমর্থক ব্যবসায়ীদের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক মানুষ বাড়িঘর ছাড়া। মহিলাদের ওপর শ্লীলতাহানির ঘটনাও বাদ যাচ্ছে না। আক্রান্ত সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িঘর সহ দোকানপাটও। আক্রান্তদের হাসপাতালে ন্যূনতম চিকিৎসার সুবিধাও নেওয়া যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার ভোট গণনার দিন দুপুর থেকে শুক্রবার রাত আটটা পর্যন্ত কয়েকশো আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে শুধু খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রেই। রাতে প্রাক্তন বিধায়ক সমীর দেবসরকারের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। রাতেই কৃষকসভার মহকুমা সভাপতি বিশু রঞ্জন দেব ও লালছড়ায় পার্টির মহকুমা কমিটির সদস্য কানন দত্তের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। এছাড়াও বহু পার্টিকর্মীর বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। 
সিপিআই(এম) সোনামুড়া মহাকুমা সম্পাদক রতন সাহার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। ধনপুরে বিভিন্ন এলাকায় পার্টি সমর্থক, কর্মীদের বাড়িঘর আক্রমণ করে লুটপাট করা হয়েছে। ৫০ হাজার থেকে ১লক্ষ টাকা জরিমানা ঘোষণা করা হয়েছে। অনাদায়ে আবারও আক্রমণ হবে বলেও জানিয়ে গেছে।

সোনামুড়া মহকুমার সোনামুড়া এবং বক্সনগরে জয়ী হয়েছে সিপিআই(এম)। ভোট গণনার মধ্যেই আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। দুপুরে মেলাঘর ডিওয়াইএফআই ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সদস্যা মানি দে’র ঘরে আগুন দেয় বিজেপি’র বাইক বাহিনী। মানি দে’র  স্বামী যুবকর্মী রাজু পাল তখন সোনামুড়া ভোট গণনা কেন্দ্রে ব্যস্ত কাউন্টিং এজেন্ট হিসাবে। দুর্বৃত্তরা প্রথমে ঘরের দরজা ভাঙে এবং ভিতরে ঢুকে সমস্ত জিনিসপত্র ভাঙচুর করে এবং স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। মানি দে ও তার একমাত্র শিশুকন্যাকে নিয়ে বাপের বাড়ি পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। এইরকম অজস্র ঘটনা প্রায় প্রতিটি এলাকায় ঘটছে। একটি প্রতিবেদনে আক্রমণের ব্যাপকতা প্রকাশ করা অসম্ভব। 
যুবরাজনগর বিধানসভা কেন্দ্রের সিপিআই (এম)’র বিজয়ী প্রার্থী শৈলেন্দ্রচন্দ্র নাথের রাবার বাগানে আগুন ধরিয়ে তিনশো গাছ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে  এরকমই আরও একটি রাবার বাগান পুড়িয়ে ফেলা হয়। অমরপুরের তৈদুবাজারের পাঁচ ব্যবসায়ীর রাবার বাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রতন দেব নামে এক ব্যবসায়ী শুক্রবার দুপুরে জানিয়েছেন নির্বাচনের আগের রাতে তাঁর বাগানের সাতশো রাবার গাছ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার রাতে আবারো আটশো গাছ জ্বালিয়ে দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ভয়ে থানায় মামলা দায়ের করেননি।

তেলিয়ামুড়া কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অশোক বৈদ্যের বোন, যুব কংগ্রেসের নেতা শঙ্কর পালের বাড়ি সহ বহু বামকর্মী সমর্থকের বাড়ি ঘর আক্রান্ত হয়েছে। তেলিয়ামুড়া থানার পুলিশ দুইজন দুষ্কৃতীকে পাকড়াও করে তেলিয়ামুড়া থানায় নিয়ে আসলে মুহূর্তের মধ্যে থানা আক্রমণ করে বিজেপি দুর্বৃত্তরা। 
প্রাক্তন বিধায়ক কেশব দেববর্মা বিশ্রামগঞ্জ থেকে আগরতলা যাওয়ায় পথে চড়িলামে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত, আহত হয়ে জিবি হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর দেহরক্ষীও আক্রান্ত হয়। বড়জলা ভিটারবন ঋষিপাড়া মুল্লাপাড়া ভাটিঅভয়নগর প্রতাপগড়ে আক্রমণ হচ্ছে। কুঞ্জবনে রাতে ভাঙচুর হয়েছে বাড়িঘরে। উদয়পুর মহকুমারও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, বিশালগড়েও আক্রমণ তীব্রতর হয়েছে।

চণ্ডীপুর ও কৈলাসহর দুই বিধানসভা এলাকাজুড়ে বিজেপি’র আনন্দ উল্লাসের নামে বহু বাড়িঘরে আক্রমণ চালানো হয়েছে। আক্রান্ত দুই যুবককেই মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক চণ্ডীপুর কেন্দ্রের প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরি, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিধায়ক বীরজিৎ সিংহসহ সিপিআই(এম) ও কংগ্রেস দুই দলের জেলা নেতৃত্ব যৌথভাবে আক্রান্ত এলাকা ও আক্রান্ত পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। এরপরে চণ্ডীপুরের প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরির বাড়িতেই আক্রমণ করে বিজেপি দুষ্কৃতীরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment