শেষ পর্যন্ত মাটিতে থুথু ফেলে আবার চেটে তা মুখে তুলে নিতে হলো আসামের চরম মুসলিম বিদ্বেষী মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে। বিগত বেশ কিছুকাল ধরেই বিশ্বশর্মার পুলিশ এবং অমিত শাহর বিএসএফ মিলে পাইকারি হারে মুসলিমদের ধরে সীমান্তে নিয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত ঠিক কতজনকে এভাবে তাড়ানো হয়েছে সরকারিভাবে তা জানানো হয়নি। কোনোদিন জানানো হবে বলেও মনে হয় না। অত্যন্ত গোপনে চলা এই প্রক্রিয়া জানাজানি হয়ে গেলে দেশজুড়ে প্রবল প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। বিষয়টি নিয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলাও হয়। আসাম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা চিঠিও লেখেন বিদেশ মন্ত্রীকে। অবশেষে বহুমুখে চাপে পড়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে তাড়ানো ৬৫জনকে দেশে ফেরত আনতে বাধ্য হয় মোদী এবং বিশ্বশর্মার ডাবল ইঞ্জিনের সরকার।
মোদী-শাহদের প্রশ্রয়ে বিশ্বশর্মা স্বৈরাচারী বাহুবলী সরকার চালাচ্ছেন আসামে। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ভারতের আসামে রাজত্ব করছে ভয়ঙ্কর এক মুসলিম বিদ্বেষী মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সংবিধান, আইন-কানুন, আদালতের রায় ইত্যাদি কোনও কিছুরই ধার ধারেন না এই ব্যক্তি। তাঁর মাথায় প্রতি মুহূর্তে ঘুরপাক খায় কীভাবে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বিভাজন তীব্র থেকে তীব্রতর করা যায়। যত বিভাজন হবে ততই হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-বিজেপি’র পোয়াবারো। তাই যখন যে কৌশলে পাচ্ছেন আসামে বসবাসকারী ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বাড়ি বুলডোজার দিয়ে তছনছ করে দেওয়া হয়। এভাবে গত কয়েক বছরে হাজার হাজার মুসলিম পরিবারকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে উদ্বাস্তু করেছে। এটা আসলে এক ধরনের মুসলিম বিরোধী জিগির যাতে হিন্দুত্বের আগ্রাসনকে চাঙ্গা রাখা যায়।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে এক রায়ে বিদেশে চিহ্নিত করে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হয়। তবে এই প্রশ্নে যাদের মামলার নিষ্পত্তি হয়নি তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না বলে জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এই রায়কে দেখিয়ে বিশ্বশর্মা যাকে পাচ্ছে তাকে ধরে সীমান্তের ওপারে পাঠাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোর্টের রায়কে অবজ্ঞা করে মামলাকারীদেরও ঘাড় ধাক্কা দিতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে অনেককে তাড়িয়ে আবার ফিরিয়ে আনতে।
বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফেরত পাঠানো নির্দিষ্ট বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়া আছে। কোনও নেতা বা মুখ্যমন্ত্রীর খেয়ালখুশি মতো তা করা যায় না। তাছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রত্যর্পণে দু’দেশের মধ্যে বোঝাপড়া, থাকতে হয়। নচেৎ ভারতে-বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করবে এমন কোনও বিধান নেই। ফলে দুই দেশ থেকে প্রত্যাখ্যাত মানুষ সীমান্তের মাঝখানে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হন। এক চরম অমানবিকতার পরিচয়ে বাংলাদেশের সীমান্তবাহিনী জানিয়েছে যারা বাংলাদেশের নাগরিক তাদের সসম্মানে ফেরত নিতে রাজি। কিন্তু যারা তাদের নাগরিক নন তাদের বাংলাদেশে ঢোকা যাবে না। এই প্রশ্নের সঙ্গে সীমান্তে সংঘাতের নতুন জমি তৈরি হচ্ছে। বিশ্বশর্মার এই কাণ্ডজ্ঞানটা থাকা উচিত। কোনও ব্যক্তি বিদেশি কিনা সেটা কোনও প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারেন না। শেষ কথা বলে অর্বোচ্চ আদালত। তাই আদালতকে অবজ্ঞা করে গায়ের জোরে প্রশাসন চালাতে গেলে নিজের থুথু নিজে চাটা ছাড়া উপায় কি?
Editorial
তাড়িয়েও ফেরত

×
Comments :0