SUNDERBAN FOREIGN TRAWLER

রাজ্যের মদতে অবাধে ঢুকছে
বিদেশি ট্রলার, সঙ্কটে সুন্দরবন

রাজ্য জেলা

SUNDERBAN FOREIGN TRAWLER এভাবেই অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন সাধারণ, ছোট মৎস্যজীবীরা।

সমন্বয় ভট্টাচার্য

সমুদ্র ও উপকূলবাসীদের সুরক্ষা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সুন্দরবন ব-দ্বীপ অঞ্চলকে বহুজাতিক কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার দুরভিসন্ধি চালাচ্ছে প্রশাসন। তার ফলে কাজ হারাচ্ছেন স্থানীয় মৎসজীবীরা। এমনটাই জানালেন সারা ভারত মৎসজীবী ও মৎস্যশ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি তুষার ঘোষ। 

মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘নিজেদের কুমতলব সিদ্ধি করতে বিভিন্নভাবে সুন্দরবন উপকূলকে ব্যবহার করছে তৃণমূল। ক্ষমতায় এসেই একাধিক সামুদ্রিক আইনকে বাতিল করার পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁরা। মুরারি কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, সুন্দরবন অঞ্চলের সমুদ্রের পাড় থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগরের ভারতীয় সীমানা পর্যন্ত বিদেশি ট্রলার আনোগোনা বন্ধের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনকে। কারণ বিদেশী ট্রলার তাদের উন্নত প্রযুক্তির জোরে মাছের আতুড়ঘর পর্যন্ত হানা দিয়ে সমস্ত সামুদ্রিক মাছ আত্মসাৎ করার ক্ষমতা রাখে। তাতে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন স্থানীয় মৎসজীবীরা, আরেকদিকে সংকটের মুখে পড়ে অন্যান্য সামুদ্রিক জীব-বৈচিত্র্যও।’’  

মৎস্যজীবী এবং সংশ্লিষ্ট অংশ জানাচ্ছে, মুরারি কমিশনের রিপোর্টের তথ্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিদেশী ট্রলারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তৎকালীন সরকার। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর পুঁজিপতিদের স্বার্থসিদ্ধি করতে সমুদ্র সম্পর্কিত সমস্ত আইনকে নস্যাৎ করে দেয় বর্তমান তৃণমূল সরকার। ব্লু-ইকনমির নাম করে, বিশেষত মাছ পাওয়া যায়, এমন অঞ্চলে বিদেশি ট্রলার যাতায়াতের পথ খুলে দেয় তারা। আর তার ফলে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছোটো নৌকো এবং দেশীয় ট্রলার। বিদেশি ট্রলারের সঙ্গে প্রযুক্তিতে পেরে না ওঠায় ক্রমশই মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় ক্রমশই পিছিয়ে পড়তে থাকে ক্ষুদ্র মৎসজীবীরা 

তুষার ঘোষ বলেন, ‘ সমুদ্র উপকূলবর্তী আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপকূল  অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ আইন অকেজো করে দিয়েছে প্রশাসন। এই আইন অনুযায়ী সমুদ্রের উপকূল থেকে ৫০০ মিটার পর্যন্ত যে কোনোরকম নির্মাণ কার্যের ওপরই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এই আইন বাতিল করার ফলে অঞ্চলের মৎসজীবীদের এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সেখানে রিসোর্ট, হোটেল বানানোর ব্যবস্থা করে দেয় সরকার। অর্থাৎ নয়া উদারনীতির পূর্ণ ব্যবহার করে বহুজাতিক কোম্পানিদের হাতে রাজ্যের মৎসক্ষেত্রকে তুলে দেওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে তৃণমূল। এর ফলবশত ক্রমবর্ধমান হারে কাজ হারিয়ে চলেছেন উপকূলবাসীরা। বলাই বাহুল্য, সরকারের তাঁদের নিয়ে কেনে মাথাব্যাথা নেই।’ 

সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক দেবাশিস বর্মন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র উপকূল এলাকায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে আশেপাশের বিভিন্ন রাসায়নিক কারখানার বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রের জলে পড়ে ভয়ানক জলদূষণ সৃষ্টি করে চলেছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাছ সহ সমুদ্রের অভ্যন্তরের বিশাল প্রাণীসম্পদ। সমুদ্র ও সামুদ্রিক সম্পদ নিয়ে সরকারের যে নূন্যতম চিন্তাও নেই তা এই বিষয়গুলি থেকেই প্রমাণিত হয়ে যায়।’ 

নেতৃবৃন্দ জানান, সামুদ্রিক প্রাণী ও ঊপকূলবাসীদের সঙ্গে সরকারের এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদে রাজ্য তথা সারা দেশ জুড়েই আন্দোলন করে আসছে সারা ভারত মৎসজীবীও মৎস্যশ্রমিক ফেডারেশন। পশ্চিমবঙ্গে মিটিং, মিছিল করে একাধিকবার মন্ত্রকের কাছে ডেপুটেশন জমা দিয়ে এসছেন তাঁরা। সর্বভারতীয় স্তরে বড়ো জমায়েত করে কেরালা থেকে তামিলনাডু পর্যন্ত মিছিল করা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এখনও অবধি কেন্দ্র বা রাজ্য কোনো প্রশাসনের কাছ থেকেই কোনোরকম সহযোগিতার কথা বলা হয়েনি। যতদিন না গরিব মৎসজীবীদের সমস্ত সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করছে প্রশাসন, উপকূলের প্রান্তিক মানুষের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে যাবেন তাঁরা।  

ছবি: দিলীপ সেন                                                      

Comments :0

Login to leave a comment