গঙ্গাসাগর মেলায় দুই মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীকে রেখে চম্পট দিয়েছেন স্বামী, এমনই অভিযোগ। গুয়াহাটির খানাপারা থানা এলাকার এক বাসিন্দা সস্ত্রীক মেলায় এসেছিলেন। একসাথে তাঁরা মেলা ঘুরেছেন। মকর সংক্রান্তির স্নান সেরেছেন। সোমবার থেকে আর স্বামীর খোঁজ পাচ্ছেন না স্ত্রী। হয়তো ভিড়ের সুযোগে স্ত্রীকে রেখে মেলা ছেড়ে চম্পট দিয়েছেন সেই যুবক। স্বামীর মতলব পরিকল্পনা আগে বুঝতে পারেননি স্ত্রী।
ওই গৃহবধূর কথায়, মাস ছয়েক আগে তাঁদের বিয়ে হয়। মাস দুই হলো অন্তঃস্বত্তা হয়েছেন তিনি। মেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরেছেন স্বামীর খোঁজে। সন্ধান পাননি। মঙ্গলবার সকালে নিজের এই জীবন না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সাগরের জলে ঝাঁপ দেন। উত্তাল সমুদ্রের জলে ভেসে যাচ্ছিলেন তিনি। কর্মরত জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তাঁকে উদ্ধার করে। পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শ মতো তাঁরা উদ্ধার হওয়া ওই গৃহবধূকে বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে। কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে তাঁদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মেলা শেষে রওনা দিলেন তাঁদের কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবকরা। উল্লেখ্য, মেলার শুরু থেকে যাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে মোট ১৪২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেছেন।
আসামের বাসিন্দা ওই গৃহবধূই শুধু নয়, গঙ্গাসাগর মেলায় ভিড়ে দলছুট পরিবার পরিজন হারানো বিহারের বাসিন্দা সাবিত্রী দেবী (৭০), বাসন্তী দেবী (৫০), ঝাড়খণ্ডের সুলক্ষণা দেবী (৬৫), মধ্য প্রদেশের বাসিন্দা রামচন্দ্র বসুদাস (৭৮) সহ মোট ৪০ জন যাত্রীকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার লোকজন। বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা এই যাত্রীদের তাঁদের স্বেচ্ছাসেবকরা পৌঁছে দেবেন।
মেলার ভিড়ে, আসা যাওয়ার পথে দলছুট হয়ে কেউ নিখোঁজ হয়েছেন। আবার ভিড়ের সুযোগে কেউ সঙ্গীর হাত ছেড়ে মেলায় রেখে চম্পট দিয়েছেন। প্রতি বছরই গঙ্গাসাগর মেলায় এ এক চিরাচরিত দৃশ্য। পরিবার পরিজন কিংবা সঙ্গী হারানো নিখোঁজ মানুষদের আর্তনাদে ভারী হয়েছে বাতাস।
পরিবারকে খুঁজে না পাওয়ায় আর কখনো বাড়িতে ফিরতে না পারার আশঙ্কা, যন্ত্রণায় চোখের জল ফেলেছেন নীরবে। মেলা চলাকালীন হারিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষই ফিরে পেয়েছেন তাঁদের প্রিয়জনদের। আর যাঁরা খুঁজে পেলেন না মঙ্গলবার মেলা শেষে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা প্রশাসনের সহায়তায় তাঁরাও রওনা দিলেন।
গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে এবার পরিবার হারানো ২৮জন যাত্রী ও কাকদ্বীপের লট এইটে ১২জন যাত্রী মোট ৪০ জন যাত্রীকে মেলা শেষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁদের সকলকেই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এবারে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে যাত্রীদের ভিড়ে দলছুট হওয়া ১৮০২ জনকে মেলা চলাকালীন তাঁদের পরিবার পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। নামখানা পয়েন্টে ৪৫ জনকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিবারের লোকজনদের কাছে।
মকর সংক্রান্তির স্নানকে কেন্দ্র করে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে। ছোট থেকে বড় কেউ পথ ভুলেছেন আবার কেউ দলছুট হয়েছেন যাত্রীদের ভিড়ে। সাগরের জলে ডুব দেওয়ার পর সৈকতে দাঁড়িয়ে থাকা সাথীদের অনেকেই আর খুঁজে পাননি। বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা বিভিন্ন ভাষাভাষীর স্বজনদের হারিয়ে ফেলা এই মানুষেরা মেলা প্রাঙ্গণে সূচনা কেন্দ্রের নিচে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শিবিরে আশ্রয় নেন। পুলিশকর্মী কিংবা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা দলছুট হওয়া এই যাত্রীদের এই শিবিরেই পৌঁছে দেন।
মঙ্গলবার রাত ১২টায় সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফে এবারের গঙ্গাসাগর মেলা সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মেলায় আসা যাত্রীদের বিভিন্ন পরিষেবা দিতে ১৪২টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করলেও ক্যাম্প ফায়ারে উপস্থিত থাকলেন না তাঁরা কেউই। হিন্দু সৎকার সমিতির স্বেচ্ছাসেবক ছাড়া সকলেই মঙ্গলবার মেলা প্রাঙ্গণ ছেড়ে তাঁদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। যাত্রীদের মতোই চূড়ান্ত অব্যবস্থার মধ্যে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁদের। ফিরে যাওয়ার সময় কচুবেড়িয়ায় জেটিঘাটে তাঁদের হয়রান হতে হয়েছে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তারা এদিন অভিযোগ করে বলেছেন, গঙ্গাসাগর মেলায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি। অথচ রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসনের কাছে তাঁদের অভিজ্ঞতা ও মতামতের কোনও গুরুত্ব নেই। গঙ্গাসাগরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা প্রেস ক্লাব, কিশোর বাহিনীর জমি দখল হলো অথচ সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী, রাজ্য সরকার ও জেলা প্রশাসন নীরব।
Comments :0