MONDA MITHI | DOLJATRA | RISHIRAJ DASS | NEW FRIEND | NATUNPATA — 2025 MARCH 15

মণ্ডা মিঠাই | দোলযাত্রা | স্বর্ণেন্দু দাস | নতুন বন্ধু | নতুনপাতা — ২০২৫ মার্চ ১৫

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  DOLJATRA  RISHIRAJ DASS  NEW FRIEND  NATUNPATA  2025 MARCH 15

মণ্ডা মিঠাই | নতুনপাতা

দোলযাত্রা

স্বর্ণেন্দু দাস

নতুনবন্ধু

ধরা ভূমি হতে আকাশ যেন নীল নয় হয়ে গেছে রঙিন। সময়টা ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা বা বাংলা ক্যালেন্ডারের শেষ পূর্ণিমা। যা বাংলার শেষ উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়, সকল বৈষ্ণব তথা বাঙালির তথা মানব জাতি আবেগ ও আন্তরিকতার সাথে উৎযাপন করে দোলযাত্রা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে একত্রে রঙের উৎসবে রঙিন হয়ে ওঠে এই সময়ের বর্ণনাতীত সৌন্দর্য। দানবরাজ প্রহ্লাদ থেকে আজকের প্রবীণরা পর্যন্ত, সকলেই মেতেছে এই উৎসবে। দোল উৎসব একটি সংস্কৃতী যার পৌরানিক ব্যাখ্যা ও মতবাদ ভিন্ন, যা বর্ণিত হয়নি ইতিহাসেও কারন দোলের চিত্রপট হয়তোবা চিত্রাংঙ্কন এর মাধ্যমে অথবা লিপিবদ্ধ করে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। যদিওবা আজকের দোলকে অনেকাংশেই হোলির এক ভিন্ন নাম হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এদের ব্যাখ্যা এবং উৎপত্তি দুই ভিন্ন।

হোলি এবং দোলযাত্রার পার্থক্য- দোল বা হোলির মধ্যে উৎসব গত মিল থাকা সত্বেও এদের মধ্যে পৌরাণিক এবং ধর্মগত পার্থক্য রয়েছে বিস্তর। এখানে হোলির ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে দানবরাজ প্রহ্লাদ সর্বদাই ছিলেন পরম ধার্মিক তাকে সর্বদা হত্যা করার চেষ্টা করে বার্থ হয়েছে হিরণ্যকশিপুর। আবার একদিন সময় বুঝে হিরণ্যকশিপুর এর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও বা সেই আগুনে তার কোন ক্ষতি হতো না, কারণ সে বর প্রাপ্ত ছিল। কিন্তু অসৎ কাজে সে নিজস্ব শক্তি বিনিয়োগ করায় বিষ্ণুর আশীর্বাদে প্রহ্লাদে কোন ক্ষতি হয় না কিন্তু হোলিকা সেখানেই পুড়ে যায়। আসলে নিরাপুড়ায় যে বুড়ির ঘর পোড়ানো হয় পৌরাণিক মতে এই হোলিকাই সেই বুড়ি এবং এই হোলিকা এর নাম থেকেই আসে হোলি, যা মধ্যপ্রদেশ সহ উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে রঙিন উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়। আবার এক মতবাদ অনুযায়ী দ্বাপর যুগে বিষ্ণুর এক অবতার শ্রীকৃষ্ণ বসন্ত পূর্ণিমার দিন, কেসি নামক এক অশুরকে বধ করেন। সেই খুশিতেই রঙের উৎসব হোলির সূচনা হয়।

আবার প্রকৃতপক্ষে যে দোল খেলা হয় তা যে শ্রীকৃষ্ণের হোলি নয় তা সম্পর্কে অনেক ধর্মীয় মতবাদ এবং মতান্তরে রয়েছে। নানা মুনির নানা মত কেউবা মনে করেন রবীন্দ্রনাথই হয়তো সৃষ্টি করেছে আধুনিক দোল। হয়তোবা হতেও পারে কারন আধুনিক অর্থে তৎকালীন যা বোঝা তো তা হয়তো আজ কেবল শান্তিনিকেতনই চরিতার্থ করতে পারে। আবার বিভিন্ন মতান্তরে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে চৈতন্য বৃন্দাবন থেকে স্বচক্ষে দেখে এসেছেন, সেখানকার হোলি যা এখানে এক নতুন রূপে রূপাহিত করেছেন যার নাম দিয়েছেন দোলযাত্রা। নগর যাত্রার সাথে দোলযাত্রার মিল যে কতখানি তা এই শব্দ দুটোর আভিধানিক অর্থ থেকেই বোঝায় যায়। যদিও বা বাংলায় দোলের সর্বোচ্চ পুরাতন ভাষ্কর্য পাওয়া যায় ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে। আধুনিক উৎযাপন- বর্তমানের দোল উৎযাপনের সাথে যদিও পৌরানিক দোলের কোনরূপ দৃঢ় মেলবন্ধন নেই। তবুও বাঙালির দোল বা মধ্য ভারতের হোলি মানুষের দৈনন্দিন কর্মব্যাস্তময় জীবনে এক রঙিন বিরতী নিয়ে আসে। যদিও এই বিরতীর বেশীয়ভাগ অংশই দখল করেছে বর্তমানে বসন্ত উৎসবের সংগীত ও নৃত্য। বাচ্চাদের মনে দোলের সংঙ্গা বদলেছে, পাল্টেছে দোলের ভাবধরা, কিন্তু আজও দোল নিজ মাধুর্য এবং সৌন্দর্য মনুষ্য মনে বজায় রেখেছে। সর্বশেষ এই দোলিই সমস্ত ধর্ম, জাতি, বর্ণ ও লিঙ্গকে একই সুতোয় গাঁথতে সম্ভ্রম। এই দিনই ধরভূমিকে আমরা রঙিন ফুলের রেণুর মতো ছড়িয়ে দিতে পারি-

"আলোকরসে মাতাল রাতে 
         বাজিল কার বেণু।
দোলের হাওয়া সহসা মাতে,
         ছড়ার ফুলরেণু।"
                                      -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  
 
নবম শ্রেনী
কল্যাণনগর বিদ্যাপীঠ,
কল্যান নগর, খড়দহ,
উত্তর ২৪ পরগনা

দূরভাষ-৮৮২০৩৯৪০৫০

Comments :0

Login to leave a comment