কে বলেছিলেন বিজেপি স্বাভাবিক মিত্র? বিজেপি জোট সরকারে মন্ত্রী থেকেছেন কে? আর আজ বিজেপি’র দলত্যাগীদের দলে নিয়ে পদে বসাচ্ছেন কে? পশ্চিমবঙ্গে মন্দির-মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতীক নিয়ে রাজনীতি করছেন কে?
মমতা ব্যানার্জির বিজেপি বিরোধিতার দাবি উড়িয়ে পরপর এভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘বরাবর আরএসএস’র ‘প্রেসক্রিপশন’ মেনে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি। আজও চলছেন।’’
বৃহস্পতিবার সাগরদিঘির বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের ফল বেরিয়েছে। জয়ী হয়েছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সমঝোতাকে ‘অনৈতিক’ আখ্যা দিয়ে এদিনই সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল প্রধান মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেছেন, বিজেপি’র ভোট পেয়েছেন বাম-কংগ্রেস প্রার্থী।
ব্যানার্জির বক্তব্যে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। এদিন কলকাতায় মুজফ্ফর আহমদ ভবনে সেলিমের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনিও।
চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘তৃণমূলের ভোট প্রায় ৩০ হাজার কমেছে। বিজেপি’র কমেছে প্রায় ২০ হাজার ভোট। তা’হলে তৃণমূলের ভোট কোথায় গেল? কেন তৃণমূলের ভোট বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর দিকে চলে এল? এই বাস্তবতা অস্বীকার করছেন তৃণমূল নেত্রী।
মমতা ব্যানার্জি এদিন ঘোষণা করে দেন যে ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী সমঝোতায় তিনি শরিক হবেন না। সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বলেন, ‘‘তৃণমূল আর মানুষের জোট হবে। আমরা ওদের (বাম আর কংগ্রেস) কারও সঙ্গে যাব না। একা লড়ব মানুষের সমর্থন নিয়ে।’’
তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস একসঙ্গে রয়েছে। বিজেপি’র ভোটও ওদের সঙ্গেই গিয়েছে।’’ এরপর তাঁর সংযোজন, ‘‘এমন অনৈতিক জোট হলে কংগ্রেস, সিপিএম কী করে বিজেপি’র সঙ্গে লড়বে?’’
এই বক্তব্যেরই কড়া সমালোচনা করেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। তাঁরা মনে করিয়েছেন, বিজেপি’রও ভরাডুবি হয়েছে সাগরদিঘি। সেলিম এবং চক্রবর্তী মনে করিয়েছেন যে তৃণমূল জিতলে বিজেপি দ্বিতীয় হয়। তৃণমূল হারলে বিজেপি’র ভরাডুবি হয়।
সেলিম বলেছেন, ‘‘আমরা বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস সমঝোতা করেছি বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী ভোট ভাগ না হতে দেওয়ার জন্য। আর সাগরদিঘিতে তৃণমূলের এবার যিনি প্রার্থী হয়েছে তাঁকে তৃণমূলই বহিষ্কার করেছিল বিজেপি’কে সহায়তা করা অভিযোগে। আর বিজেপি’র যিনি প্রার্থী তিনি গত নির্বাচনে কাছের বিধানসভায় বিজেপি’র প্রার্থী ছিলেন। মানুষ এসব দেখছেন না?’’ ত্রিপুরায় বিজেপি’কে সহায়তা করার অভিযোগেও সরব হন সেলিম। তিনি বলেন, গোয়া থেকে মেঘালয়ে বিজেপি বিরোধী ভোট ভাঙতে একই ভূমিকা নিয়েছে তৃণমূল। আর ২০০২’এ গুজরাটে গণহত্যার পর নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী ফের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় মমতা ব্যানার্জি যে ফুল পাঠিয়েছিলেন মনে করিয়ে দেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ।
সেলিম বলেন, ‘‘আরএসএস’র নির্দেশিকা মেনে বরাবর চলেছছেন তৃণমূল নেত্রী। সে জন্যই কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল গড়ে বিজেপি’র জোটে শামিল হয়েছিলেন। আজও বাংলায় ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনৈতিক আবহ তৈরি করে চলেছেন তিনি। একেবারে আরএসএস’র পরিকল্পনা মাফিক। সে জন্যই তিনি আর ভাইপো জেলের বাইরে আছেন।’’
গথ বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের পর। বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট তৃণমূল এবং বিজেপি দুয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই করেছিল। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী করে বিজেপি’র প্রাক্তনী যশোবন্ত সিন্হাকে। সে সময় দিল্লিতে একাধিক বৈঠকে বিরোধীদের একত্রিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দীর্ঘ বক্তৃতাও করছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তার কিছু পরে উপরাষ্ট্রপতি ভোটেই ভোলবদল করে নেয় তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থী এবং এ রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন দিতে অস্বীকার করে।
এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘুদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে দেখারও কড়া সমালোচনা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘ভোটদাতারা ভোট দিয়েছেন বাংলার নাগরিক হিসেবে। মানুষ কখনও ব্যাঙ্ক হয় না। এই শব্দবন্ধ আরএসএস’কে খুশি করে, কিন্তু মানুষকে অপমান করে।’’
সেলিমের ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষ বুঝছেন যে যারা লুট করে তারাই ভাগ করে। মানুষ দেখেছেন প্রতিবাদীদের পুলিশ মিথ্যা মামলা দেয়। আনিস খানকে খুন হতে হয়, জেলে যেতে হয় নওসাদ সিদ্দিকীকে। মানুষ দেখছেন শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগের নামে কী দুর্নীতি হয়েছে। দেখেছেন কাদের বাড়িতে গয়না, টাকার স্তূপ পাওয়া যাচ্ছে। কারা জ্বালানি গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। বিভাজনের খেলা আর চলবে না।’’
Comments :0