মা মেচেদায় সবজি বিক্রি করেন। সংসারের আয় বলতে এটুকুই। বাবা অসুস্থ, শয্যাশায়ী। ছোট মেয়ে ২০ বছর বয়সি মলিনা কর মানসিক রোগী।
বুধবার ভোরে প্রতিদিনের মতো মা বেরিয়েছিলেন সবজি বেচতে। বস্তির পাশের ঝুপড়ি থেকে আগুনের লেলিহান শিখা যখন উন্মত্তের মতো গ্রাস করছে তাঁদের ঘর, তখন চেষ্টা করেও বেরোতে পারেননি শয্যাশায়ী গোকুল কর (৫৫) ও মেয়ে মলিনা। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে গেলেন বাবা-মেয়ে একসঙ্গেই।
বুধবার ভোরে এই মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায়। ঝুপড়ির এক রান্নাঘর থেকে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ আগুনে ছাই হয়ে গেল মেচেদার রেললাইন সংলগ্ন বস্তির একাধিক ঘর। অন্য ঘরগুলি থেকে কোনমতে বাকিরা বাইরে বেরিয়ে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও অসহায় মৃত্যু হলো গোকুল কর ও মলিনা করের।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ওঁরা তিনজনই থাকতেন ওই ঘরে। ভোরের আলো ফোটার আগেই মেচেদা বাজারে সবজির পসরা নিয়ে গিয়েছিলেন মা। সংসারে ভাতের জোগাড় করতে হয় তাঁকেই। স্বামী বেশ কিছুদিন ধরে শয্যাশায়ী। চার মেয়ের মধ্যে তিনজনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ছোট মেয়ের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে বাইরে বেরোনোর ক্ষমতাই ছিল না তাঁর।
মেচেদা রেললাইন লাগোয়া এই বস্তির প্রায় ১৫ টি ঘর এদিন সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। ঘিঞ্জি বস্তি, ঘরগুলি গায়ে গায়ে লাগানো। মুহূর্তে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে আগুন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন। উদ্ধারে নামে কোলাঘাট থানার পুলিশও। পরে গোকুল কর এবং মলিনা করের দগ্ধ দেহদু’টি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, মূলত দিনমজুরদের বাস এই বস্তিতে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গেই পেটের তাগিদে বেরিয়ে পড়তে হয় কাজে। এদিন ভোর পাঁচটা নাগাদ বস্তির এক গৃহবধূ রান্না সেরে কাজে বেরোনোর তোড়জোড় করছিলেন। রান্নার পর বাইরে কাজে চলে যান তিনি। পরে সেই উনুন থেকেই তাঁর গোটা ঘরে আগুন ধরে যায়। বাতাসে সেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বস্তির পাশের ঘরগুলিতে।
কোলাঘাট থানার ওসি ইমরান মোল্লা বলেন, ‘‘মেচেদা রেল ব্রিজের কাছে বস্তির প্রায় ১৫টি ঘর আগুনে পুড়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগাই।’’
এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গ স্ট্রিট হকার্স ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দুপুরে ডেপুটেশন দেওয়া হয় শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিডিও’র কাছে। প্রতিনিধিদলে ছিলেন চিত্ত খান, বাসুদেব গায়েন, স্নেহাশিস ঘড়া সহ অন্যান্যরা। পুড়ে যাওয়া বস্তিগুলির বাসিন্দাদের স্থায়ী পুনর্বাসন এবং মৃত বাবা-মেয়ের পরিবারের জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।
Comments :0