খোলা বাজারে ব্যবসায়ী হাঙরদের কবল থেকে খাদ্য উৎপাদক কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখার তাগিদে বহু লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে চালু হয়েছে ফসলের এমএসপি তথা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা। প্রতি বছর নানাদিক বিবেচনা করে সরকার কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে। এই ঘোষিত মূল্যে সরকার নিজে যেমন কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কিছু ফসল কিনে নেয় তেমনি ব্যবসায়ীদেরও সেই দামে কৃষকের কাছ থেকে ফসল কেনার কথা। অবশ্য বাস্তবে সেটা সব ক্ষেত্রে হয় না। কর্পোরেট ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত খোলা বাজার এমনভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় সেখানের ফসলের দাম এমএসপি থেকে অনেক কম থাকে। তাই কোনও ব্যবসায়ী এমএসপি-তে কৃষকের কাছ থেকে ফসল কিনতে উৎসাহ দেখায় না। বিপদে পড়ে কৃষক। ধারদেনা করে চাষ করার পর ফসল উঠলে তা বেচে দেনা শোধ করার কথা। তাই ফসল বিক্রির তাড়া থাকে কৃষকের। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাজারে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েন। বাজারে মূল্য যাই থাকুন এমএসপি’তে কৃষকের ফসল বিক্রির কোনও ব্যবস্থাপনা সরকারের নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে এমএসপি থেকে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। স্বাভাবিকভাবেই তাদের বিপুল লোকসানের ধাক্কা খেতে হয়।
এমএসপি মানে কোনও আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ নয়, যে সেই দামে বিক্রি করলে কৃষক ভালো পরিমাণ লাভ ঘরে তুলতে পারে। যে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে এমএসপি নির্ধারিত হলে কৃষক ফসলের প্রত্যাশিত লাভজনক দাম পেতে পারে সেভাবে দাম ঠিক হয় না। এক্ষেত্রেও সরকার গুরুতর কারচুপির আশ্রয় নিয়ে কৃষকদের ঠকায়, প্রতারিত করে। ১৯ বছর আগে বামপন্থীদের সমর্থনে গঠিত ইউপিএ সরকারের আমলে গঠিত স্বামীনাথন কমিশন সমস্ত দিক পর্যালোচনা করে এমএসপি নির্ধারণের সূত্র তৈরি করে দেয়। কৃষি উপকরণের মূল্য, কৃষিতে ব্যবহৃত শ্রমের মূল্য, কৃষির গৃহীত ঋণের সুদ, জমির খরচ বা ভাড়া ইত্যাদিকে যুক্ত করে চাষের মোট খরচ ঠিক করা হয়। তার উপর লাভ হিসাবে আরও ৫০ শতাংশ যোগ করে হয় এমএসপি। এই ফরমূলা (সি ২+ ৫০ শতাংশ) অনুসরণ করলে কৃষকরা সত্যি সত্যি লাভজনক দাম পেতে পারেন। ক্ষমতায় আসার পর কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে অনেক হাততালি কুড়িয়েছিলেন মোদী। বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি অধরাই থেকে গেছে কারণ, মোদীরা স্বামীনাথন কমিশনের সেই ফরমুলা কার্যকর করেনি। পরিবর্তে প্রতিবছর নিজেদের খেয়ালখুশি মতো একটা এমএসপি ঘোষণা হয় বাস্তবে সেটা কৃষকের স্বার্থসিদ্ধির বদলে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী করে।
চলতি বছরে খরিফ ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে মোদী সরকার বিরাট কিছু করে ফেলেছে বলে নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়াতে শুরু করেছে। বাস্তবে চাষের খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে এমএসপি বৃদ্ধির কোনও ভারসাম্যই রক্ষা করা হয়নি। ফলে কৃষকের লোকসানের যন্ত্রণা আগের থেকেও বাড়বে। এবার ধানের এমএসপি বেড়েছে কুইন্টাল প্রতি ৬৯ টাকা। আগের বছর বেড়েছে ১১৭ টাকা। তার আগের বছর বেড়েছিল ১৪৩ টাকা। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এ বছর ধানের এমএসপি বেড়েছে সবচেয়ে কম। সার্বিকভাবে ইউপিএ জমানায় দশ বছরে ধানে গড় এমএসপি বৃদ্ধির হার ছিল ১.১৭ শতাংশ। মোদী জমানায় সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ০.৫৩ শতাংশ। মোদী সরকার যে পুরোপুরি কৃষকের স্বার্থবিরোধী তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
MSP
প্রতারণা:

×
Comments :0