CPIM CENTRAL COMMITTEE KOLKATA

জীবিকার পক্ষে, বিভাজন রুখতে দেশজুড়ে টানা কর্মসূচি সিপিআই(এম)’র

জাতীয় রাজ্য

সোমবার কলকাতায় রানি রাসমণি রোডে সমাবেশে সীতারাম ইয়েচুরি।

জনতার জীবিকা-রোজগারের ওপর লাগাতার হামলা চলছে। বাড়ছে বৈষম্য, বাড়ছে কর্মহীনতা। কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতিই তার কারণ। দেশজুড়ে প্রতিবাদের বার্তা পৌঁছাতে ফেব্রুয়ারির ২২-২৮ প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করল সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি। 

পার্টির পর্যবেক্ষণ, দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ আরও তীক্ষ্ণ হচ্ছে। মেহনতি জনতার ঐক্য ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে পুরোদমে। প্রতিরোধের ঐক্য গড়তে ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিলের জন্য পরপর কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। 

সোমবারই কলকাতায় শেষ হয়েছে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠক। এদিন বিবৃতি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। রবিবার আলোচনার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। 

৫ এপ্রিল দিল্লিতে কৃষক,খেতমজুর, শ্রমিক সমাবেশে পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। মার্চ মাস জুড়ে পার্টি প্রচার করবে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আঘাত, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ভেঙে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের লাগাতার প্রয়াসের বিপদ সম্পর্কে। 

অবাধ এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার নিয়েও মার্চে চলবে প্রচার। প্যালেস্তাইনের জনগণের ওপর জায়নবাদী আগ্রাসী ইজরায়েলের রাষ্ট্রীয় আক্রমণের প্রতিবাদ হবে। সংহতির প্রচার চলবে প্যালেস্তাইনের জনতার লড়াইয়ে। 

এদিন বিবৃতিতে ফের সিপিআই(এম)’র দাবি, আদানিকাণ্ডের তদন্তে গড়তে হবে কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের প্রতিদিনের নজরদারিতে সময় বেঁধে তদন্ত শেষ করতে হবে। এলআইসি এবং স্টেট ব্যাঙ্কের সংযোগ থাকায় দেশের কোটি কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে। বাজেট অধিবেশনে এই দাবি তুলতে সংসদে অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখবে সিপিআই(এম)। ত্রিপুরা প্রসঙ্গেও অবস্থান ফের ব্যাখ্যা করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লাগামছাড়া সন্ত্রাসের রাজনীতি এবং হিংসা নামিয়েছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন ধ্বংস করা হয়েছে। তাই ত্রিপুরায় সরকার থেকে বিজেপি’কে সরাতে ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তির সমন্বয় চাইছে পার্টি।  

বিবৃতিতে দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের পর বিরোধিতার বিষয়গুলিও যুক্ত হবে প্রচারে। সোমবার কলকাতায় পার্টি কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে সমাবেশেও সেই দাবি ব্যাখ্যা করেছেন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

বাজেটে সিপিআই(এম)’র দাবি, কাজ দিতে পারে এমন পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে সরকারকে। ভরতুকিতে আরও ৫ কেজি খাদ্য দিতে হবে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার উপভোক্তাদের। গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প, চালু কথায় রেগার, বরাদ্দ এবং মজুরি দুই-ই বাড়াতে হবে। বড়লোকদের ওপর বসাতে হবে সম্পত্তি কর এবং উত্তরাধিকার কর। বড়লোকদের করছাড় দেওয়া চলবে না। বরং বিপুল বিত্তের মালিকদের ওপর কর বসাতে হবে। খাদ্য এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর জিএসটি বাতিল করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্নদাতা যোজনাকে খাদ্য সুরক্ষা আইনের সঙ্গে মিসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লকডাউনের সময় নেওয়া বিনামূল্যে খাদ্যের প্রকল্প থেকে ৫ কেজি শস্য বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এই প্রকল্পের উপভোক্তাদের বাকি শস্য কিনতে হবে বাজার দামে। সিপিআই(এম) এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। দাবি, বাকি ৫ কেজি খাদ্যশস্য খাদ্য সুরক্ষা আইনে ভরতুকিতে দিতে হবে। 

ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘সিপিআই(এম) জনমুখী প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছে। সরকারপন্থীরা বলবে, টাকা আসবে কোথা থেকে? আমরা বলছি, বিপূল বিত্তশালীদের থেকে কর বসিয়ে টাকা আদায় করো।’’  

তথ্য তুলে ধরে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এই বিত্তশালীদের করছাড় দিয়েই তো আয়ের বৈষম্য বাড়ছে দেশে। মহামারীর দু’বছরে সৃষ্ট সম্পদের ৪০ শতাংশ গিয়েছে ওপরতলার ১ শতাংশের হাতে। নিচের তলার ৫০ শতাংশের হাতে এসেছে মাত্র ১ শতাংশ সম্পদ।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment