শিশুমৃত্যুর বিরাম নেই রাজ্যে। ফের কলকাতার বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে মারা গিয়েছে পাঁচ শিশু। অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ কিনা তা স্পষ্ট না হলেও জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়েই ভর্তি হচ্ছে শিশুরা।
পরিকাঠামোর অভাব ধরা পড়ছে বারবার। তবু রাজ্য সরকার পরিস্থিতি সামলাতে ঝাঁপানোর মনোভাব দেখাচ্ছে না।
গত চব্বিশ ঘন্টায় বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালে আর চার শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। আগের চব্বিশ ঘন্টায়, শুক্রবার রাত থেকে শনিবারের মধ্যে কেবল এই হাসপাতালেই তিন শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছিল।
রাজ্যে কেবল গত ৮ দিনেই ৩৩ শিশুর মৃত্যুর খবর মিলেছে। সরকারি তথ্য অস্পষ্ট। তথ্য লুকানোর অভিযোগ রয়েছে। রাজ্যের অন্যত্রও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শিশু মৃত্যুর খবর আসছে অবিরত। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার বিসি রায় হাসপাতাল চত্বরে মৃত শিশুর বেদনার্ত পরিজনদের দেখা গিয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বেড়াচাপা বেলিয়াঘাটা থেকে সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন অশোক ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন, চিকিৎসকরা শিশুকে দেখেই বলেছিলেন ভেন্টিলেশনে দিতে হবে। কিন্তু ভেন্টিলেটর ফাঁকা নেই। জ্বর ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছিল দু’মাসের শিশুটির। অনেক পরে ভেন্টিলেটর ফাঁকা হওয়ায় শিশুকে দেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।
বাবা অশোক ঘোষ বলেছেন, ‘‘এমনি বেডে রেখেই চিকিৎসা চলছিল। ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়নি ফাঁকা ছিল না বলে। ভেন্টিলেশনে দেওয়ার দু’ঘন্টার মধ্যে মারা যায়।’’
হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের পরিজনরা বসে রয়েছেন একরাশ উদ্বেগ নিয়ে। পরিকাঠামোর সমস্যা ঘিরে অভিযোগ সর্বত্র। কলকাতায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ৫০ বেডের শিশু শয্যা চালু সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। অভিযোগ, এখনও তা পুরোদমে চালু হয়নি।
জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে শিশুদের মৃত্যুর একের পর এক ঘটনা সামনে আসছিল প্রায় এক মাস ধরে। কিন্তু রাজ্য অনেক দেরিতে জারি করে নির্দেশিকা। অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণে শিশুদের একাংশের শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু এই ভাইরাসে কতজন আক্রান্ত, কতজনের অসুস্থতা গুরুতর হওয়ার কারণ অন্য তা নিশ্চিত হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরিকাঠামো থাকছে না। অনেক শিশু আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়াতেও।
রাজ্যের নির্দেশিকায় জেলা স্তর থেকে রেফারের ওপর নিয়ন্ত্রণ জারির চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু ‘সুপার স্পেশালিটি’ বলে ঘোষণা হলেও আধুনিক পরিকাঠামো না থাকার অভিযোগ জেলায় জেলায়। সরকারের তরফে সচেতনতা তৈরির প্রয়াসে গুরুতর ঘাটতির অভিযোগও তুলছে বিশেষজ্ঞ মহল। উদ্বেগ বেড়েই চলেছে গোটা রাজ্যে। মর্মান্তিক অবস্থা কাটার লক্ষণ নেই।
(ছবি: দিলীপ সেন)
Comments :0