শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের চোখ রাঙানি, হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ঘর্মঘটের প্রভাব সর্বত্র। রাজ্য কোষাগার থেকে বেতনপ্রাপ্ত শ্রমিক কর্মচারী শিক্ষক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চের এবং সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহবানে শুক্রবার যে ধর্মঘট ডাকা হয়েছিলো আলিপুরদুয়ার সরকারি দপ্তর গুলি প্রায় ফাঁকা ছিলো। স্কুলগুলি খোলা থাকলেও শিক্ষক ছাত্র প্রায় ছিলো না বললেই চলে। ধর্মঘটিরা এ বি টি এ, এ বি পি টি এ - ডি আই (প্রাথমিক) এবং ডি আই (মাধ্যমিক) অবস্থান করে বিক্ষোভ দেখায়। আলিপুরদুয়ার ল'ক্লার্ক এসোসিয়েশন আদালত চত্বরে মিছিল করে আদালত চত্বরে। আলিপুরদুয়ার জংশন এরিয়া কমিটির উদ্দোগে ধর্মঘটের পক্ষে বিক্ষোভ অবস্থান হয়।
কোচবিহার জেলা জুড়ে সর্বাত্মক ধর্মঘটে শামিল হলেন রাজ্য কোষাগার থেকে বেতন প্রাপ্ত কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষা কর্মীরা। গোটা রাজ্যের পাশাপাশি কোচবিহার জেলাতেও অধিকাংশ কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষা কর্মীরা এই ধর্মঘটে যোগ দেন। এদিন সকালে কোচবিহার শহরের অফিস পাড়া হিসেবে পরিচিত সাগরদিঘী চত্বরে মিছিল করেন এই ধর্মঘট সমর্থনকারীরা। বিভিন্ন দপ্তরে মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান বিক্ষোভে শামিল হন তারা। এদিন কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরের সামনে জমায়েত করেন জেলার ব্যাপক অংশের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীরা। তবে এদিন কর্মচারীদের এই ধর্মঘটকে বানচাল করতে নির্লজ্জ আস্ফালন দেখা যায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের। এই তালিকা থেকে বাদ যাননি রাজ্য মন্ত্রিসভার মন্ত্রীও।
এদিন ডুয়ার্সে মাল মহকুমা ও কালিম্পং জেলার গরুবাথানে ধর্মঘটে অভূতপুর্ব সাড়া ফেলেছে। পাহাড়ী জেলা কালিম্পং অধীন গরুবাথান ব্লকে ধর্মঘট পালন পাহাড়ের রাজনৈতিক চিত্র পালটে দিল। ভয়ভীতি দূরে সরিয়ে একশ শতাংশ ধর্মঘট সফল করতে আগুয়ান হয়েছেন। গরুবাথানের চঞ্চল কেন্দ্র বি ডি ও অফিসে কেউ কাজে আসেননি। অন্যসব অফিসে খুব সামান্য বাদ দিলে আর সব ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন। সরকারি কলেজ গরুবাথান। সেখানে ধর্মঘট সফল। জীবনের বাস্তবতা ও গনতান্ত্রিক চেতনা জাগ্রত করেছে লড়াই এর উন্মাদনাকে। রাজ্য কো অর্ডিনেশন কমিটির কেন্দ্রীয় সমিতির কোষাধক্ষ লিটন পান্ডে ও ব্লক কো অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক পলাশ ঘোষ সমগ্র কর্মচারী ও কলেজের অধ্যাপকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
শুক্রবার মাল মহকুমার সব সরকারি অফিস ও মহকুমা শাসকের অফিসে ধর্মঘটে সাড়া পড়েছে। মহকুমা শাসকের অফিসে ৭ জন চুক্তিভিত্তিক কাজে যোগদান করেছে। মাল বি ডি ও অফিসে ৪ জন স্থায়ী কর্মী আর সব চক্তিভিত্তিক চারজন বাদে বাকীরা ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন। নাগ্রাকাটা বি ডি ও অফিসে তিনজন কাজে আসেন। যদিও বি ডি ও সবাইকে উপস্থিত দেখিয়েছেন। মেটেলী বি ডি ও অফিসে তিনজন অফিসে আসেন। কো অর্ডিনেশন কমিটির মাল মহকুমা সম্পাদক ধর্মঘট রতন বড়ুয়া, সফল করার জন্য কর্মচারীদের অভিননন্দন জানান। মাল মহকুমার বিভিন্ন স্কুলে ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। দুই একটি স্কুল বাদদিলে ধর্মঘট সফল। কোন স্কুলে কেউ ই আসেন নি। কোন স্কুলে ৯৫ শতাংশ ধর্মঘট করেছেন।
এদিন ধর্মঘটের প্রভাব জলপাইগুড়িতে লক্ষ্য করা গেলো সকাল থেকেই। ধর্মঘট সফল করায় শিক্ষক শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদের অভিনন্দন জানায় ধর্মঘটিরা। রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকেই কার্যত ফাঁকা স্কুল প্রাঙ্গণ। কিছু সংখ্যক অভিভাবক শিশু দের নিয়ে স্কুলের সামনে এসেও গেট বন্ধ থাকায় ফিরে যাবার দৃশ্য উঠে এলো ক্যামেরার।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে এ বি পি টি এর জলপাইগুড়ি জেলার সম্পাদক বিপ্লব ঝা জানান, সকাল থেকেই প্রাইমারি স্কুল গুলোতে ছাত্র ছাত্রীরা আসেনি, এবং এই চিত্র গোটা জেলা তথা রাজ্য জুড়ে বলেই আমাদের কাছে খবর আসছে, আমরা অভিনন্দন জানাই শিক্ষক শিক্ষিকা সহ অভিভাবকদের আমাদের পাশে থাকার জন্য। যদিও পরে পুলিশ এসে বিদ্যালয়ের গেট থেকে বেনার খুলে নিয়ে চলে গেলে শিক্ষক শিক্ষিকারা ভিতরে ঢুকলে ও ছাত্র ছাত্রী দের দেখা যায় নি।
শিলিগুড়িতে বহু সরকারি দপ্তরে পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে। শুধুমাত্র সমতলের শিলিগুড়ি নয়, দার্জিলিঙ পাহাড়েও বিভিন্ন সরকারী দপ্তর, কলেজগুলিতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। গরুবাথান কলেজ, কোর্ট, বিডিও অফিস সহ বিভিন্ন সরকারী অফিসগুলিতে সফল ধর্মঘট পালিত হয়েছে। দার্জিলিঙ জেলার স্কুল, কলেজগুলোতেও ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ধর্মঘটের সমর্থনে দার্জিলিঙ জেলার ইলাপাল হাইস্কুল, মিলনগড় হাইস্কুল ও বলাইগছ্ জুনিয়ার স্কুল এই তিনটি স্কুল এদিন পুরোপুরিভাবে বন্ধ ছিলো। পশ্চিমবঙ্গ কলেজ শিক্ষা কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কলেজগুলিতে সফল ধর্মঘট হয়েছে। এবিটিএ দার্জিলিঙ জেলা শাখার উদ্যোগে ডি আই দপ্তরের সামনে মঞ্চ বেঁধে অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্মঘটকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে ধর্মঘটীরা প্রত্যেকেই অবস্থান কর্মসূচীতে যোগদান করেছেন। তৃণমূলী দুষ্কৃতিদের বাধাকে উপেক্ষা করেই এদিন চলেছে অবস্থান কর্মসূচি।
এদিন মালদা জেলায় সরকারি কর্মচারীর ৯০০ এর উপরে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে যৌথ কমিটি ১৪০৪ জন ধর্মঘটের অংশগ্রহণ করেন ৷ ৮৭ জিপি অফিস বন্ধ ছিল। মোটামুটি আমাদের জেলার ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে প্রাইমারি এবং হাই স্কুল মিলিয়ে পাঁচ হাজারের উপরে শিক্ষকরা ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে। একশোর উপরে বিদ্যালয় বন্ধ ছিল৷ ৷
এদিন ইসলামপুর চোপড়া ব্লকে তৃণমূলের নেতারা নিজেরাই পঞ্চায়েত দপ্তর বন্ধ করে দিয়েছে। পঞ্চায়েত কর্মচারীরা দায়িত্ব নিয়েই ধর্মঘটে সামিল হন। প্রশাসনের এক পদস্ত আধিকারিকের বক্তব্য উত্তর দিনাজপুর জেলার ৯৮টা গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭৩৫ জন সরকারি কর্মী, এদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ জন কর্মী পঞ্চায়েতের তালা খুলেছে। জেলার সমস্ত স্কুল কলেজ প্রায় বন্ধ, জেলা প্রশাসনের অভ্যন্তরে অফিস খোলা থাকলেও কর্মচারীদের সংখ্যা হাতে গোনা। ধর্মঘট ভাঙ্গতে সব চেষ্টা উড়িয়ে দিয়ে রাজ্য সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মচারী, শ্রমিক নতুন সন্ধিক্ষণের সৃষ্টি করলেন। এ লড়াই বাঁচার লড়াই , এ লড়াই জিততে সবাই এককাট্টা। বিপুল পরিমান সমর্থনে ১০মার্চ সর্বাত্মক ধর্মঘট।
Comments :0