ছিল ১ শতাংশের কম। ফেব্রুয়ারিতে সেই রাশিয়ার থেকে তেল ভারতের মোট আমদানির ৩৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরবের দেশের তুলনায় রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলরে দামও কম পড়ছে।
এক বছর ধরে চলছে ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত। আর্থিকভাবে রাশিয়াকে দুর্বল করার লক্ষ্য জানিয়েই ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেল আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে গত বছরের ডিসেম্বরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা জারির প্রক্রিয়ার মধ্যেই ভারত বাড়িয়েছে রাশিয়ার থেকে তেলের আমদানি।
ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রতি দিন রাশিয়া থেকে ১৬ লক্ষ ব্যারেল তেল আমদানি হয়েছে। ইরাক এবং সৌদি আরব থেকে মোট আমদানির চেয়েও বেশি অপরিশোধিত তেল ভারতে এসেছে রাশিয়া থেকে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজেদের তেল রপ্তানির জন্য ছাড়ও দিয়েছে রাশিয়া। ভারত তার পুরো সুযোগ তুলেছে।
ফেব্রুয়ারিতে ইরাক গড়ে প্রতিদিন পাঠিয়েছে ৯ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯২১ ব্যারেল এবং সৌদি আরব পাঠিয়েছে ৬ লক্ষ ৪৭ হাজার ৮১৩ ব্যারেল করে তেল।
হিসেবে দেখা গিয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র ০.২ শতাংশ মিলত রাশিয়া থেকে। এই ফেব্রুয়ারিতে অনুপাত পৌঁছেছে ৩৫ শতাংশে। গত পাঁচ মাস ধরে রাশিয়াই ভারতে সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত তেল জোগানো দেশ। এই তেল পরিশোধিত হচ্ছে ভারতের পরিশোধনাগারে।
অপরিশোধিত তেলের জন্য ভারতকে বিদেশ থেকে আমদানির জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়। কিন্তু পরিশোধন কাঠামোয় এগিয়ে যাওয়ায় পেট্রোল, ডিজেলের মতো তৈরি পেট্রোপণ্য উৎপাদন হয় ভারতেই। তার কাঁচামাল অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেলের আমদানি কমছে ভারতে। সৌদি আরবের থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় আমদানি কমেছে ১৬ শতাংশ। এই হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ৩৮ শতাংশ। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদিও জানিয়েছে যে রাশিয়ার থেকে তেল আমদানিতে তাদের আপত্তি নেই।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশ মনে করছে ভারতে এই বিপুল তেল আমদানি কেবল দেশের অর্থনীতিতে পেট্রোপণ্য জোগানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে না। রাশিয়ার থেকে কম দামে তেল কেনার সুযোগ ভারতের জনগণের কাজেও লাগছে না। দেশে পেট্রোপণ্যের দান কমছে না। বরং গুজরাটের একাধিক বেসরকারি পরিশোধনাগার এবং সমুদ্র বন্দর থেকে তৈরি পেট্রোপণ্য যাচ্ছে ইউরোপ এবং আমেরিকায়। পশ্চিমের দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা রেখে খাতায় কলমে ভারতের মাধ্যমে পেট্রোপণ্য আমদানি করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ভারতের তেল জোগানদারদের তালিকায় ছিল চার নম্বরে। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে গিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। আমিরশাহির মুদ্রা দিরহামের মাধ্যমে ভারত মেটাচ্ছে রাশিয়ার তেলের দামের একাংশ। জ্বালানির বাজার গবেষণা সংস্থা ‘ভোরটেক্সা’ জানাচ্ছে রাশিয়াকে তেলের দামের অন্তত ২৫ শতাংশ দিরহামে মেটাচ্ছে ভারত।
ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘে ইউক্রেনের পক্ষে আনা প্রস্তাবে ভোট দেয়নি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত থেকে গত এক বছরে ৬ বার। ভারত যদিও স্পষ্ট করেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে জানিয়েছে যে সামরিক সংঘাতের অবসান হওয়া জরুরি। পারস্পরিক আলোচনাই মেটাতে পারে দ্বন্দ্ব।
Comments :0