তৃণমূল পরিচালিত শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ডের অহেতুক অর্থ অপচয়ের বিরুদ্ধে এবার সরব হলেন তৃণমূলেরই দলীয় এক কাউন্সিলার। ড্রেন করার পয়সা নেই। অথচ ভলিবল টুর্নামেন্টের নামে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় বরাদ্দ কেন ধরা হয়েছে এই প্রশ্ন তুলে মেয়রকে তীব্র আক্রমণ করলেন তার দলেরই কাউন্সিলার। তর্কবিতর্কের জেরে সরগরম হয়ে উঠলো কর্পোরেশনের বোর্ড সভা। চাপে পড়ে একরকম বাধ্য হয়েই মেয়র এদিন বোর্ড সভায় পেশ করা পৌর কর্পোরেশনের ভলিবল টুর্নামেন্টের বরাদ্দকৃত ব্যায়ের অর্থ সংশোধন করার কথা জানালেন।
সোমবার শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের দ্বাদশ বোর্ড সভায় অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। একদিকে মেয়র তার নিজের দলের এক কাউন্সিলারের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়ে বারবার মেজাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে গরীবের জন্য পৌর পরিষেবা বন্ধ রেখে লোক দেখানোভাবে কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলারদের হাতে ৭ হাজার টাকার ব্লেজার তুলে দেবার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সভাকক্ষ ছেড়েছেন সিপিআই(এম)’র নুরুল ইসলাম সহ বাকি তিন কাউন্সিলার। যদিও মেয়রের বক্তব্য মাত্র সাত হাজার টাকায় উন্নয়নের কিছু এগোবে পিছোবে না। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত শিলিগুড়ি পৌরসভা বিগত এক বছরে প্রতিশ্রুতি মতো কোনরকম উন্নয়নমূলক কাজ করেনি। পৌরসভার তৃণমূল বোর্ড বিরোধীদের কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না।
এই একাধিক অভিযোগ তুলে এদিনের বোর্ডসভা বয়কট করে বিরোধী বিজেপি কাউন্সিলাররাও। যেখানে ওয়ার্ড উৎসব পিছু প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের বরাদ্দ মাত্র ২লক্ষ টাকা। সারা বছরের খেলাধূলার জন্য মাত্র ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয় ওয়ার্ডগুলিকে সেখানে তিনদিনের ভলিবল টুর্নামেন্টের জন্য ১০ লক্ষ টাকার বিশাল বরাদ্দ করা হয়েছে কর্পোরেশনের তরফে। আর তা কর্পোরেশনের রিপোর্টে প্রকাশিত করাও হয়েছে। যদিও মেয়র বলছেন স্পোর্টস ডিপার্টমেন্ট ১০ লক্ষ টাকার বাজেট দিলেও পৌর কর্পোরেশনের অনুমোদন ৫ লক্ষ টাকা। এর বেশী আমরা খরচ করতে পারব না। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে বাকি টাকা আসবে কোথা থেকে। দলীয় কাউন্সিলারের প্রশ্নের মুখে জেরবার মেয়র ভুলভ্রান্তির কথা বললেও দলীয় কাউন্সিলার কিছুতেই মেয়রের উত্তরে সন্তুষ্ট না হয়ে একই প্রসঙ্গে আলোচনা দীর্ঘায়িত করেছেন। ভলিবল টুর্নামেন্টের জন্য বড় অঙ্কের টাকা খরচের দীর্ঘ তালিকা তৃণমূল কাউন্সিলার একে একে তুলে ধরেছেন মেয়রের সামনে। ৩৬নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার রঞ্জনশীল শর্মা বোর্ডসভাতে তিনদিনব্যাপী ভলিবল টুর্নামেন্টের নামে ১০লক্ষ টাকা ব্যায় বরাদ্দ করার যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে তার তীব্র বিরোধীতা করেন। প্রকাশ্যে আসে দলীয় কোন্দল। বাধ্য হয়েই ভরা সভায় মেয়র জানান, ওভারলুক হয়ে বাজেটে এসেছে। সেটি পুর্নবিবেচনা করে খরচের বিষয়টি সংশোধন করা হবে।
ওয়ার্রকারদের সেফটি বেল্ট না পড়া ও মেকানিক্যাল কারনকেই শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের ৪০ ও ৪২নং ওয়ার্ডে বেআইনী নির্মান কাজে যুক্ত শ্রমিক মৃত্যুর মূল কারন বলে এদিনের বোর্ড সভায় পেশ করা রিপোর্টের একটি অংশে উল্লেখ করার আপত্তি করে সিপিআই(এম) কাউন্সিলার নুরুল ইসলাম বলেন, দুইজন শ্রমিকের প্রান গেলো বেআইনী নির্মানকাজে। আর পৌরবোর্ড তাদের ওপরেই দায় চাপিয়ে দিলো। কর্পোরেশনের মনিটারিং’র অভাবে বেআইনী নির্মান প্রমোটাররাজ চলছে শিলিগুড়ি শহর জুড়ে। সাজানো রিপোর্ট দিয়ে পৌরসভা পার পেতে চাইছে।
এছাড়াও এনএইচ ৩১ জাতীয় সড়ক সম্প্রসারনের কাজে গৃহহীন গরীব মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত সরকারী পদক্ষেপ, থমকে যাওয়া শহরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ, ওয়ার্ক অর্ডার দেবার পরেও কাজ শুরু না হওয়া, কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সময়মতো ঠিকাদারদের টাকা না দেওয়ায় অনেক কাজ অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে থাকা, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় পথকুকুরদের দৌরাত্ম্য, বেআইনী নির্মান, বিল্ডিং প্ল্যানের আনুসাঙ্গিক কর বৃদ্ধি ইত্যাদি একাধিক বিষয়ে প্রশ্ন, মোশন উত্থাপন করেছেন সিপিআই(এম) কাউন্সিলার জয় চক্রবর্তী, মৌসুমী হাজরা, দীপ্ত কর্মকাররা।
Comments :0