ভয়ে চুপ করে থাকা মানুষ এখন সাহসের সঙ্গে লাল ঝান্ডা হাতে তুলে সরব হয়েছেন, বোমা বন্দুক দেখিয়ে তৃণমূল আর তাঁদের চুপ করিয়ে রাখতে পারবে না। মঙ্গলবার নদীয়া জেলার তেহট্টের নাজিরপুর রসুন হাটে সিপিআই(এম)’র ডাকা একটি জনসভায় একথা বলেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, এটা ২০১৮ সাল নয়, এটা ২০২৩ সাল। তৃণমূল যদি ভেবে থাকে যে কিছু গুন্ডা মস্তান নিয়ে বোমা বন্দুক দেখিয়ে ফের পঞ্চায়েত দখল করবে তাহলে মানুষই তৃণমূলকে বাংলা ছাড়া করবে। দশবছর ধরে ভাঁওতা দিয়ে, ভয় দেখিয়ে মানুষকে চুপ করিয়ে রেখেছিল তৃণমূল, এখন মানুষ লাল ঝান্ডা হাতে সরব হয়েছেন।
চোর তাড়িয়ে, সাম্প্রদায়িক শক্তি হটিয়ে বাংলা বাঁচানোর ও জনগণের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার আহ্বানে সিপিআই(এম)’র তেহট্ট উত্তর এরিয়া কমিটির ডাকে নাজিরপুর রসুন হাটে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে ৬টি অঞ্চল থেকে ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ দৃপ্ত মিছিল করে অংশ নিয়েছেন। সেলিম ছাড়াও সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন পার্টির জেলা সম্পাদক সুমিত দে, পার্টি নেতা রঞ্জিত মণ্ডল, সতীশ সরকার এবং গোলাম রাব্বি। সভাপতিত্ব করেন পার্টি নেতা মানস মণ্ডল।
সমাবেশে সেলিম বলেন, অনেক লুট হয়েছে, চুরি জোচ্চুরি হয়েছে, মা বোনেদের ওপর ইজ্জতের ওপরে আক্রমণ হয়েছে, বামপন্থী কর্মীরা খুন হয়েছেন। এই তেহট্টের এলাকাতেও তৃণমূলের জল্লাদ বাহিনী খুন করেছে সিপিআই(এম)’র দুই নেতাকে। মানুষ এসব ভুলতে পারবে? যারা গরিব মানুষের প্রাপ্য, বার্ধক্য ভাতা বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্কলারশিপের টাকা, হস্টেল ভাতা, আবাসের টাকা লুট করেছে, মানুষ তাদের ছেড়ে দেবে? এই তৃণমূল গরিবের ন্যায্য অধিকার, নদী থেকে বালি, কয়লা খাদান থেকে কয়লা পাচার, গোরু পাচার, চন্দন কাঠ পাচার কিছুই বাদ রাখেনি লুট করতে। কী করে পারলো? বিজেপি-আরএসএস, জামাত, মাওবাদী নকশাল, সবাইকে একজোট করে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, লাল হটাও, বাংলা বাঁচাও। তখন সিপিআই(এম)’কে উনি বলতেন হার্মাদ। এদের সুরে সুর মিলিয়ে ছিল চিট ফান্ডের টাকার লোভে একাংশের বুদ্ধিজীবীরাও। ওরা মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নানা অংশকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ছিল। কিষানজীকে বলেছিল জঙ্গলমহল দিয়ে দেবে, বিমল গুরুংকে বলেছিল গোর্খাল্যান্ড দিয়ে দেবে। গ্রেটার কোচবিহার আলাদা রাজ্য করে দেবে। হিজাব পরে মুসলমানদের ধোঁকা দিয়েছিল। মানুষকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতায় এসেছিল আজকের শাসক তৃণমূল।
সেলিম বলেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ অভিজ্ঞতায় কী দেখছেন? আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে চাকরি না পেয়ে আজ রাস্তার ধারে। আর তৃণমূলের মন্ত্রী বিধায়কদের বদান্যতায় অযোগ্যরা চাকরি করছে শিক্ষকপদে টাকার বিনিময়ে। কোটি কোটি টাকা তুলে কালীঘাটের পিসি ভাইপো’র কাছে জমা দিয়েছে। হিসাব দিতে হবে না মানুষকে?
তিনি বলেন, তৃণমূলকে জন্ম দিয়েছে কে? আরএসএস। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক একের পর এক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী। মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করার জন্য মুসলমানদের জন্য আলাদা মেডিক্যাল কলেজ, চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আরএসএস তাই দেখিয়ে বলেছে, এই দেখো সব মুসলমানদের পাইয়ে দিচ্ছে, হিন্দুরা বঞ্চিত। মানুষ সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন, কেউ ভেবেছিলেন মন্দির হবে, কেউ ভেবেছিলেন ইফতার পার্টি হবে। কিন্তু অভিজ্ঞতা হলো এই যে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে। আরএসএস’এর রাজনীতি প্রশ্রয় পাচ্ছে। মানুষের জীবনজীবিকার সঙ্কট বাড়ছে।
কেবল বামপন্থীরাই যে মানুষের জীবনজীবিকার সঙ্কট দূর করতে পারে দৃঢ়তার সঙ্গে সেকথা উচ্চারণ করে সেলিম বলেছেন, এরাজ্যের বেকার যুবকরা কাতারে কাতারে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন রাজ্যের বাইরে। তারপরে ভিনরাজ্যে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। আমাদের রাজ্যের ছাত্রদের শিক্ষা দীক্ষা মেধা প্রযুক্তি দিয়ে আমরা বামপন্থীরাই পারে রাজ্যকে গড়তে, রুটি রুজির সংস্থান করতে। কিন্তু মোদী-মমতা-আম্বানিরা তা চায় না। তাই মমতা ব্যানার্জিকে দুর্গা বানিয়েছিল এই আরএসএস। আর সিপিআই(এম)-কে বানিয়েছিল হার্মাদ। এক শ্রেণির মিডিয়া মমতাকে বানিয়েছিল অগ্নিকন্যা। তারপর থেকে চলছে লুটেরাদের রাজত্ব। রাজ্যে দিদির লুট, দেশে মোদীর লুট। এক লুটেরার বিরুদ্ধে আরেক লুটেরা কখনো লড়তে পারে না। এই দুই ফুলই মানুষকে এপ্রিল ফুল বানিয়েছে। মানুষ আর এপ্রিল ফুল হবে না। আমরা বলেছি দুই দলেরই চোর ধরো জেল ভরো। গাত্রদাহ শুরু হয়েছে দুই শাসকদলের। কিন্তু গ্রাম জাগছে, মানুষ তার হক বুঝে নিতে চাইছে, তাঁদের আর চুপ করিয়ে রাখা যাবে না। এখন আমাদের কাজ সমাজের সব অংশের আক্রান্ত শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য।
Comments :0