শম্ভুচরণ নাথ: আলিপুরদুয়ার
সবই প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব হলে বিদেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠাতে হচ্ছে কেন? ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বিদেশে গিয়েছেন বিরোধী বিভিন্ন দলের সাংসদরাও। সাধারণভাবে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশে গিয়ে ব্যাখ্যা দেন। সেনা অভিযানকে ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারে এই সব দিক আড়াল করা হচ্ছে।
শনিবার আলিপুরদুয়ারে সাংবাদিক সম্মেলনে এই মর্মে সরব হন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন আলিপুরদুয়ারে সাংগঠনিক সভার ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আলিপুরদুয়ারের জেলা সম্পাদক কিশোর দাস।
রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি’র রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি হচ্ছে বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে। যদি মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করত, তা’হলে মানুষের বিষয় নিয়ে কথা হতো। সেলিম এই প্রসঙ্গে চা শ্রমিকদের অবহেলার বিষয়েও সরব হন।
সেলিম বলেন, গত দু’টি নির্বাচনে দুই দলই চা বাগান নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চা রপ্তানি করে বিদেশী মুদ্রা আয় করছে দেশ। কিন্তু চা বাগান বন্ধ হচ্ছে। চা বাগানের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। তা নিয়ে দু’দলের কোনও কথা নেই। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে এমন বিষয় নিয়ে কথা হয় না।
সেলিম বলেন, পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে, কৃষি নিয়ে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি নিয়ে কোনও কথা নেই কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে। অথচ, এই বিষয়গুলি নিয়ে তো আলোচনা হওয়া উচিত।
সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নীতি আয়োগের বৈঠকে যাচ্ছেন না। অথচ একান্ত বৈঠকে যোগ দেন। সেখানে রাজ্যের প্রশ্নে কী আলোচনা হয়? আর বিজেপি পড়েছে সিঁদুর নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাচ্ছেন সেনা অভিযানকে সামনে রেখে নিজের কৃতিত্ব জাহির করছেন। সন্ত্রাসবাদী হামলার ক্ষেত্রে দেশকে এককাট্টা রাখতে হয়। আর বিজেপি এই সময়ে নিজের রাজনীতি করছে। এমন ভাষণ দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা যেন সেনা নয়, তারাই গিয়ে যুদ্ধ করে এসেছেন!
উল্লেখ্য, মধ্য প্রদেশে শনিবারও মোদী সমাবেশে বলেছেন ‘গুলি ছুঁড়লে কামানের গোলা ছুঁড়ে জবাব দেওয়া হবে।’
যে সময়ে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ভাষণে সেনা অভিযানকে ব্যবহার করে চলেছেন সে সময়েই সংসদের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করছে।
এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেন, অন্য দেশে যাতে ভুল বার্তা না যায় সে জন্য সংসদের সব দলের প্রতিনিধিরা পহেলগাম পরবর্তী সেনা অভিযানের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। সাধারণ এমন সফরে প্রধানমন্ত্রী যান, দেশের বক্তব্য বিভিন্ন দেশে তুলে ধরেন। সবই যদিও মোদীর কৃতিত্ব হয় তা’হলে অন্য দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে কেন ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে?
সেলিমের ব্যাখ্যা, সন্ত্রাসবাদের আক্রমণ হলে, অন্য দেশ হামলা করলে গোটা দেশকে এককাট্টা হতে হয়। সে কারণেই বিরোধীরাও সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলের অংশ হয়েছে, বিদেশের মাটিতে দেশের বার্তা দিচ্ছে। আরেকদিকে বিজেপি এবং আরএসএস হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কৌশলে কাশ্মীরের মানুষের বিরুদ্ধে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ভোট বাক্সে সুরক্ষিত করতে হবে। মহারাষ্ট্রে দেখা গিয়েছে। এরাজ্যে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। পঞ্চায়েতে দেখা গিয়েছে। মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গলদ ধরা পড়ল। আমরা দেখলাম বিজেপি এবং তৃণমূল একসঙ্গে সব ছেড়ে ভোটার লিস্ট নিয়ে পড়ল। ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই মমতা ভোটার তালিকাকে দায়ী করলেন। বিজেপি-ও তা নিয়ে পড়েছে। সংবাদমাধ্যমে খবর বের করা হচ্ছে যে ভোটার তালিকায় চার-পাঁচ কোটি বাংলাদেশী রয়েছে।’’
নির্বাচনে বামপন্থীদের সম্ভাবনা সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয় সেলিমকে। তিনি বলেন, সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। তার জন্য মানুষকে এককাট্টা করতে হবে। বিজেপি-তৃণমূল মানুষকে ভাগ করছে। মানুষ এককাট্টা হয়েই বিভিন্ন সমবায়ে বিজেপি-তৃণমূলকে হারিয়ে মানুষ বামপন্থীদের জয়ী করছেন।
সেলিম বলেছেন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে অপর বিষয়টি হলো বিপুল অর্থশক্তি, সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন অংশকে কিনে নিচ্ছে। সারাদিন বিজেপি-তৃণমূল নিয়ে প্রচার চালাতে থাকে। সংবাদমাধ্যমে আগে সাংবাদিকরা থাকতেন। এখন সব স্টিঙ্গার, অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত। ওয়েজ বোর্ড নেই, সামাজিক সুরক্ষা নেই সাংবাদিকদেরও। এই সব বিষয় সংবাদমাধ্যমে আলোচনার বিষয় নয়। গালাগালির ভিডিও নিয়ে সারাদিন আলোচনা চলছে। বীরভূমেই ডেউচা পাচামীতে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে তা আসছে না।
Comments :0