আরও একটি থ্রিলার। এবার হার ভারতের। শেষ হাসি শ্রীলঙ্কার। ২০১৬’তেও এই মাঠে ভারতকে হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। দু’ম্যাচ পর সিরিজ এখন ১-১। ফাইনাল শনিবার। রাজকোটে।
ভারতীয় দলকে পরীক্ষার সামনে এনে দাঁড় করিয়েছিলেন অধিনায়ক হার্দিক। টসে জিতে বোলিং নিয়ে। পুনের উইকেটে সাধারণত প্রথম ব্যাটিং করা দলই বেশিরভাগ সময়ে জিতেছে। এই পরিসংখ্যানটি হয়তো হার্দিক জানতেন! কিন্তু তিনি দলকে প্রতিকূল পরিস্থিতির সামনে ফেলে দেখতে চান, দল কিভাবে মেলে ধরে?
প্রথম পরীক্ষাতে ভারতীয় দলকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলা যাবে না। অন্তত লোয়ার মিডল অর্ডারের জন্য। ২০৭ রান তাড়া করতে নেমে ১৬ রানে হার। টপ অর্ডারের ব্যর্থতাই দায়ী। তাঁদের জন্যই অক্ষর প্যাটেল ও সূর্যকুমারের (৫১) জান কবুল লড়াই দাম পেল না। সূর্য ও অক্ষরের বিধ্বংসী ব্যাটিং একটা সময় ভারতীয় দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল! যদি না ভারত পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে চার উইকেট হারাতো।
ভারতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারে ১২রান উঠলেও ধ্বস নামে পরের থেকেই। দ্বিতীয় ওভারে ফেরেন দুই ওপেনার ইশান কিষান (২) ও গিল (৫)। দু’জনের ঘাতক কাশুন রাজিথা। অভিষেককারী রাহুল ত্রিপাঠী শুরুটা ভালো করেছিলেন। চার মেরে খাতা খোলেন। পরের দু’বলে আরও দু’টি চার মারেন। মধুশঙ্কার জন্য ত্রিপাঠীর ইনিংসটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক ত্রিপাঠীর হাতে ধরা পড়েন।
হার্দিকও(১২) ভালো শুরু করে ভরসা দিতে পারেননি। হুডাও ব্যর্থ। ৫৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়ার পর মরণ কামড় দেয় ভারত। ক্রিজে এসেই পালটা আক্রমণ করেন অক্ষর। হাসারঙ্গাকে ছয় মেরে। এক প্রান্তে উইকেট পড়তে দেখেও ধৈর্য্য হারাননি সূর্যকুমার। অক্ষরকে চালিয়ে খেলার আত্মবিশ্বাস দেন সূর্য।
আত্মবিশ্বাসে ভরপুর অক্ষর যা মারছিলেন, হয় চার, নয় ছয়। ১৪তম ওভারে তিনটি ছয় মারেন হাসারঙ্গাকে। ২০ বলে অর্ধশতরান করেন অক্ষর। এবার গিয়ার পরিবর্তন করেন সূর্যও। ৩৬০ ডিগ্রি ব্যাটিং শুরু করেন। তিনিও ছয় মেরে পঞ্চাশ করেন। মধুশঙ্কাকে ছয় মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন হাসারঙ্গার। বল হাতে ৫৩ দিলেও ব্যাটিংয়ে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন মাভি। অক্ষরের সঙ্গে জুটি দলের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। শেষ ওভারে ২১ রান তুলতে পারেননি অক্ষর(৬৫) ও মাভি (২৬)। মারতে গিয়ে দু’জনে আউট হন। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট কার্যকরী স্পেল রাজিথার (৪-০-২২-২)।
শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাটিং করে ভারতের সামনে লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল ২০৬/৬। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ইনিংস শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা। শেষটাও করেছে একই ছন্দে। ইনিংসের মাঝের ওভারে পরপর উইকেট হারিয়েও খেই হারায়নি তারা। প্রথম থেকেই হাত খুলে খেলতে থাকেন মেন্ডিস। নোঙরের ভূমিকায় ছিলেন আরেক ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা। ভারতীয় বোলারদের খারাপ লাইন লেংথের সুযোগ নিয়ে আট ওভারে ৮০ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। উমরানকে ছয় মেরে ২৮ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন মেন্ডিস। চাহালের বলে মেন্ডিস (৫২) ফিরতেই তাল কাটে দলের। ১১০ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
উমরান দুরন্ত বলে বোল্ড করেন ভানুকা রাজাপক্ষকে (২)। অক্ষর ফেরান নিসাঙ্কা (৩৩) ও ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে (৩)। এমতাবস্থায় মনে হচ্ছিল, শ্রীলঙ্কা হয়তো একশো ষাটের মধ্যেই আটকে যাবে। কিন্তু চার-ছক্কা মেরে স্কোরবোর্ড সচল রাখার কাজটি করে যাচ্ছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। ১৯ বলের ছোট্ট ইনিংসে চারটি ছক্কা মারেন। তবে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে শিকার হন উমরানের।
পরের বলেই হাসারাঙ্গাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান উমরান। ১৬ ওভারে শ্রীলঙ্কা ১৩৮/৬। এরপর শুরু হয় দাসুন শানাকার তাণ্ডব। যার জেরে শেষ চার ওভারে উঠল ৬৮। শানাকা একাই ভারতীয় পেসারদের পাড়ার স্তরে নামিয়ে আনলেন। এরমধ্যেই অর্শদীপ একাধিক নো’বল করেছেন। তবে ভালো বোলিং করেছেন দুই ভারতীয় স্পিনার। এমনিতেই শানাকার ভারতের বিরুদ্ধে একটু বেশিই ভালো খেলেন। এদিনও করলেন ২২বলে ৫৬ (২চার, ৬ছয়)। শানাকার সঙ্গী ছিলেন চামিকা করুণারত্নে। বোলিং এন্ডে দাঁড়িয়ে শানাকার বিধ্বংসী ইনিংস উপভোগ করলেন। শানাকার জন্যই কার্যত শ্রীলঙ্কা টি-২০ সিরিজে সমতা ফেরাতে পারল।
Comments :0