ADENO VIRUS

ছোটদের সুস্থ করতে এবার বড়রা
মাস্ক পড়ুন, মত চিকিৎসকদের

জাতীয়

ADENO VIRUS

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়

অ্যাডিনো ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরুণ সিং। তিনি জানিয়েছেন, অ্যাডিনোয় আক্রান্ত শিশুদের ৯৫ শতাংশের সামান্য ওষুধেই সুস্থ হয়ে ওঠে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করে উপশম মেলে। দুই বছর পর্যন্ত শিশুদের এর প্রকোপটা বেশি। ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দরকার পরে। সামান্য অক্সিজেন, স্যালাইন আর ওষুধ পেলেই তাঁরা সুস্থ হয়ে যায়। 

আর যাঁদের বয়স পাঁচের বেশি তাঁদের হাঁপানি বা কোন দুরারোগ্য রোগ না থাকলে তাঁরা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। তাই শিশুদের নিয়ে অযথা ছোটাছুটি না করাই ভালো। বাড়ির ছোটোদের কথা ভেবে এখন বড়দের মাস্ক পরাটা জরুরি। বাড়ি ফিরে প্রথমেই ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়াটা দরকার। মনে রাখতে হবে বাচ্চারা কিন্তু ঘরেই থাকে। বাইরে থেকেই ওরা সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। 

কলকাতার বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ অ্যাডিনো সংক্রমণকে করোনার থেকেও ভয়ঙ্কর মহামারী বলে ব্যাখা করেছেন। বয়স্কদের করোনা বেশি হওয়ায়, তাঁদের বাকি জীবনের তুলনায় সদ্যোজাতের বাকি জীবনকালের ব্যাপক ফারাক থাকায় শিশুদের যে কোন মর্মান্তিক পরিণতি বেশি বেদনাদায়ক।   

অ্যাডিনো ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তের এই সময় ছোটদের কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, ডে-কেয়ার সেন্টার, ক্রেজ, গ্রুমিং সেন্টারে রাখা যাবে না। ডাঃ ঘোষও বারংবার শিশুদের নিয়ে ভিড় এড়ানোর কথা বলেছেন। ডাক্তার দেখাতেও ভিড় করা চলবে না। এই সময় বইমেলা, পুষ্প প্রদর্শনী, প্রেক্ষাগৃহ বা সামাজিক অনুষ্ঠানে কোলের শিশুকে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। 

যেহেতু দুই বছরের মধ্যের বাচ্চাদের ফুসফুস পুরোদস্তর গঠিত হয় না। তাই অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে শিশু সুস্থ হলেও তাঁর ফুসফুসে পরবর্তী সময়ে স্থায়ী ক্ষতি হয়ে থাকে। অ্যাডিনো ভাইরাসের  ৫৪ রকমের প্রজাতি (সেরোটাইপ) রয়েছে। এর মধ্যে অ্যাডিনো টাইপ-৭ নম্বর প্রজাতি হানাদারি এবার সদস্যা তৈরি করছে। 

এই প্রজাতি রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে। অনেক সময় বাচ্চার প্রস্রাবে ছিটেফোটা রক্তও দেখা যাচ্ছে। অক্সিমিটারের স্যাচুরেটেড অক্সিজেনের পরিমাণ ৯৪ পর্যন্ত মানা যেতে পারে। কিন্তু ৯০-৯২ নেমে গেলে অক্সিজেনের জোগানটা জরুরি। কেননা রক্তে ধারাবাহিক অক্সিজেন কমে গেলে কিডনি বিকলের একটা আশঙ্কা তৈরি হয়। 

অ্যাডিনো সংক্রমণের জেরে জ্বর সাত দিন, কোন কোন ক্ষেত্রে ১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। জ্বর ১০১-১০৫ পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ছয় ঘন্টা অন্তর নিয়ম করে জ্বরের ওষুধ দিয়ে যেতে হবে। আর জ্বর বাড়লেই একাধিবার স্নান করিয়ে দিতে হবে আক্রান্ত শিশুকে। আসলে মাত্রারিক্ত জ্বরের জেরেই মাঝে সেপটিক শক্‌হতে পারে। তাই বারেবারে স্নানটা খুব জরুরি। 

ছোট বাচ্চারা যেহেতু নিজের সমস্যার কথা বলতে পারে না, তাই তাঁদের ওপর নজরদারিটা জরুরি। প্রথমে লক্ষ্য করতে হবে বাচ্চা ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা। গলায় ব্যথার জন্য খাওয়া কমে গেলেও একেবারে না খেলে নজর করতে হবে। এরপর দেখতে হবে শিশু জোরে শ্বাস নিচ্ছে কিনা। 

যদি শ্বাস নেওয়ার দ্রুততর হয় তখন কোন দিক না তাকিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে। কেননা তখন শিশুকে অক্সিজেন, স্যালাইন দেওয়ার দরকার পড়ে। জ্বরে ওষুধের সঙ্গে সামান্য ওই টুকুর ব্যবস্থা করতে পারলেই শিশু সুস্থ হয়ে যায়। তাই ফিভার-ফুড-ফার্স্ট ব্রিদিংদিকে সব সময় নজর রাখতে পরামর্শ দিয়েছেন ডাঃ ঘোষ।

আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত হয়। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। একই ভাইরাস বাচ্চাদের সঙ্গে বড়দের আক্রমণ করে। কিন্তু বাচ্চাদের সংক্রমণজনিত অ্যান্টিবডির মাত্রা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার জন্য রোগের জটিলতা বাড়ে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডাঃ অমিতাভ নন্দী। তিনি জানান, এই ডিএনএ ভাইরাসটি শিশু রোগীর অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ডে পাওয়া যায়। অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভাইরাসের নাম অ্যাডিনো ভাইরাস নাম দেওয়া হয়েছে। 

বাচ্চাদের জন্মের প্রথম অবস্থা থেকে ৮-১০ বছর পর্যন্ত অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়। এরপরে ধীরে ধীরে তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। প্রতিরক্ষা তন্ত্র (ইমিউনিটি) ভালোভাবে গঠিত হলে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ হলেও তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে সাধারণত যায় না। তবে বিগত দুই বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কোভিড এবং ভ্যাকসিনেশনের পরবর্তী পর্যায়ে মানুষের জীবন নিয়ম মাফিক চলছে না। 

কোভিড ভাইরাস তথা ভ্যাকসিনের কারণে সামাজিকভাবে প্রবল সংক্রমণের জন্য মৃদু সংক্রমণ হোক বা জটিল সংক্রমণ, সব ক্ষেত্রে মানুষের সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মানুষের সামগ্রিকভাবে কমেছে। ডাঃ অমিতাভ নন্দীর সন্দেহ আমাদের শরীরে সামাজিকভাবে তৈরি হওয়া নানাবিধ সংক্রমণ বিরোধী ইমিউনিটি বা সংক্রমণ বিরোধী প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারছে না। তাই অনেক মামুলি সংক্রমণও জটিল হয়ে যাচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment