Taliban Raj Bengal Model

তালিবান রাজের বাংলা মডেল

সম্পাদকীয় বিভাগ

অন্যান্য রাজ্যের মতো নিয়ম মাফিক এরাজ্যেও একটি সরকার আছে। একজন সর্বগুণসম্পন্না, সবজান্তা মুখ্যমন্ত্রীও আছেন। শাসন করার জন্য পাইক-বরকন্দাজ, মন্ত্রী-সান্ত্রী, আমলা-পুলিশ সবই আছে। মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম করে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠকের পর বৈঠক করেন। হুমকি, ধমক, চোখ রাঙানি মানুষ নিত্য দেখছেন ও শুনছেন। বিস্তর জ্ঞান ও উপদেশ বিতরণেও খামতি নেই। তাঁর আচার-আচরণ, ঠাঁট-বাঁট, মন-মেজাজ, বাচন ভঙ্গি দেখে মোটেই মনে হবে না তিনি জনপ্রতিনিধি। বরং মনে হবে রাজ্যের মালকিন। বাকিরা সব তাঁর খাস তালুকের প্রজা। পুলিশ-আমলা, সরকারি আধা সরকারি কর্মচারীরা তাঁর দয়া বা মরজির পাত্র। তাই সংবিধান, আইন, সরকারি নিয়ম কানুন অনুসরণ করে কেউ নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে দায়বদ্ধ নয়। সকলেই তাকিয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। কখন তিনি কিসে রুষ্ট হন বা আহ্লাদিত হন সেটা নিখুঁতভাবে অনুধাবনের চেষ্টা করেন। মুখ্যমন্ত্রী যখনই ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রকাশ করবেন, আদেশ-উপদেশ দেবেন অথবা ক্ষোভ প্রকাশ করবেন তখনই গোটা অনুচর বাহিনী সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়বেন মুখ্যমন্ত্রীকে তুষ্ট করার জন্য।

মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ আবিষ্কার করলেন কলকাতা সহ রাজ্যের শহরগুলির রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে। ১৩ বছরের শাসনে বিষয়টা তাঁর নজরে পড়েনি। নজরে পড়তেই প্রবল ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ-পৌর কর্তৃপক্ষকে গাল পাড়লেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রামগ্ন পুলিশ ও পৌর কর্তৃপক্ষ ঢাল-বন্ধুক-বুলডোজার নিয়ে রাজ্যজুড়ে হকার উচ্ছেদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গুঁড়িয়ে দেয় গরিব মানুষের ভাত জোগাড়ের সম্বলগুলি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন পার্কিং নিয়ে দুর্নীতি চলছে। যত্রতত্র বৈধ-অবৈধ পার্কিং বানিয়ে দেদার টাকা তুলছে দলের নেতা ও পুলিশ। পরদিনই পুলিশ পার্কিংয়ে থাকা গাড়ি তুলে নিতে শুরু করে দেয়।

এদিকে গত বেশ কিছুদিন রাজ্যের সর্বত্র পুলিশ প্রশাসনহীন হয়ে পড়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায়, বিধান নগরে, কলকাতায়, ঝাড়গ্রামে, উত্তর দিনাজপুরে নানা অজুহাতে গুজব ছড়িয়ে শাসক দলের ছত্রছায়ায় লালিত পালিত মাতব্বরদের উসকানিতে দুষ্কৃতীরা গণপিটুনির অভিযান চালাচ্ছে। তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেলেও পুলিশকে দেখা যাচ্ছে না। হতাহতের মতো চরম বিপর্যয় ঘটে যাবার পর হেলতে দুলতে পুলিশ আসে। তারপর তাদের গা গরম করতেই লেগে যায় আরও বেশ কিছুক্ষণ। এইভাবে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটে যাচ্ছে। পুলিশের প্রতি মানুষের আর আশা-ভরসা কিছুই নেই। তারা বুঝে গেছেন পুলিশের কাজ মুখ্যমন্ত্রীর ধামা ধরে থাকা। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায় তাদের নেই। আইনকে কবজা করে ফেলেছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের দায়িত্ব হুকুম মতো দুষ্কৃতীদের আড়াল করা। তারা যাতে সাজা না পায়, পেলেও মামুলি সাজা হয় তার ব্যবস্থা করা। দুষ্কৃতীরাজের দৌরাত্ম্যে রাজ্য এখন মধ্যযুগীয় বর্বর শাসনে অধীন। সাধারণ মানুষ এখানে অসহায়। নিরীহ নিরপরাধ মানুষের বেঘোরে জীবন যাচ্ছে। মস্তান, গুন্ডা, মাফিয়ারাই এখন এলাকার দাদা, সমাজপতি। তারাই আইন, তারাই বিচারক। সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

 

Comments :0

Login to leave a comment