Barasat Attack

পুলিশের সামনেই তৃণমূলের তাণ্ডব, মার খেয়েও জেদী সমাবেশ

রাজ্য

লব মুখার্জি: বারাসত

পুলিশের উপস্থিতিতে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে পার্টিকর্মীদের রক্তাক্ত করে, মঞ্চ ভেঙে পতাকা ছিঁড়ে সন্ত্রাস করেও শুক্রবার সিপিআই(এম) এবং আইএসএফ’র ডাকা সমাবেশ বানচাল করতে ব্যর্থ হলো তৃণমূলী বাহিনী। প্রতিবাদী মানুষের জেদে ফের মঞ্চ বেঁধে সমাবেশ সংগঠিত হলো বারাসত ২নম্বর ব্লকের অন্তর্গত কলুপাড়ায়। নির্ধারিত না থাকলেও হামলার খবর পেয়ে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ দাশ, পার্টির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী সমাবেশে চলে আসেন এবং পুলিশি মদতে তৃণমূলের আক্রমণের প্রতিবাদ করেন। আক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ফের মঞ্চ বেঁধে পতাকা লাগিয়ে সমাবেশ সফল করতে এগিয়ে আসার জন্য বারাসত ২নং ব্লকের মানুষকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানান।
 শুক্রবারের এই জমায়েত ডাকা হয়েছিল বারাসতের কেমিয়া খামার পাড়া এবং রোহান্ডা-চণ্ডীগড় অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে। তৃণমূলের তাণ্ডবের খবর রটে যেতেই বারাসত ২নং ব্লকের অন্তর্গত ৭টি পঞ্চায়েত অঞ্চল থেকেই সমাবেশস্থলে চলে আসেন বিরাট সংখ্যক মানুষ। জখম রক্তাক্ত পার্টিকর্মীরা মঞ্চে উঠে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রতিবাদ জারি রাখার ঘোষণা করেন। সুজন চক্রবর্তী, পলাশ দাশ, মৃণাল চক্রবর্তী ছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তন্ময় ভট্টাচার্য, আত্রেয়ী গুহ, আইএসএফ নেতা কুতুব উদ্দিন ফতেহি। উপস্থিত ছিলেন সোমনাথ ভট্টাচার্যও। সভাপতিত্ব করেন আহমেদ আলী খান।
  সমাবেশে আসা সিপিআই(এম) কর্মীরা জানিয়েছেন, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মান্নান ও বারাসত ব্লক ২-এর নেতা মানস ঘোষের নেতৃত্বে এদিন নৃশংস আক্রমণ হয়েছে। সশস্ত্র ৪০ জন হামলাকারীকে নিয়ে তাঁরা হামলা চালায়, হামলাকারীদের মধ্যে কিছুদিন আগে ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত দুষ্কৃতীরাও ছিল। মার খেয়ে জখম সিপিআই(এম) কর্মীরা রাস্তাতে পড়ে থাকলেও পুলিশ তাদের রক্ষা করতেও উদ্যোগী হয়নি, এমনকি তুলে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থাও করেনি। পুলিশ সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হামলা চালাতে দেখেছে। তৃণমূলী বাহিনী মঞ্চ এবং মাইক ভেঙে, সমাবেশে যোগদানকারীদের মোটরসাইকেল ভেঙে তাণ্ডব চালিয়েছে। পুলিশের সামনেই ঘটা সমস্ত ঘটনা লিখিতভাবে পুলিশের কাছেই অভিযোগ হিসাবে দায়ের করা হয়েছে সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে বারাসত ব্লক ২-এর আশপাশের অনেক এলাকাতে মিছিল হয়েছে শুক্রবারই। নিউবারাকপুরেও একটি প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। 
  দুপুর ১১টা নাগাদ এই হামলার ঘটনায় জখম মফিজুল রহমান, আবদুল্লাহ, হাসিবুর রহমান, কাশেম আলী, আলাউদ্দিন আলী, আবদুল রহমানকে মধ্যমগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। এরমধ্যে আলাউদ্দিন আলী সবচেয়ে বেশি মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বন্দুকের বাঁট, কোদালের বাঁট, রড, ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালানোয় এত বেশি সংখ্যায় মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। হামলার খবর পেয়ে  সিপিআই(এম)’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলী খান ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়ার সময়ে ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূরে গুস্থিয়াতে পুলিশ তাঁর পথ আটকায়। তখন সেখান থেকেই ফোনে যোগাযোগ করে তিনি আঞ্চলিক মানুষের সাহায্যে ছয়জন আহতকে একটি ম্যাটাডোরে গুস্থিয়াতে নিয়ে আসেন। তারপর সেখান থেকে মধ্যমগ্রাম গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের।
  এরপরেও জেদের সঙ্গে সমাবেশ অনুষ্ঠিত করেন সিপিআই(এম) এবং আইএসএফ কর্মীরা। সুজন চক্রবর্তী সমাবেশে বলেন, সমাবেশ বানচাল করতে যারা সশস্ত্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বন্দুক, কোদালের বাঁট ইত্যাদি দিয়ে নৃশংস আক্রমণ চালিয়েছে তাদের জনগণ ক্ষমা করবেন না। এক মাঘে শীত যায় না। সব অত্যাচার লুটের হিসাব নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর বীর বাঘ অনুব্রত মণ্ডলও কিন্তু এখন জেলের ভাত খাচ্ছেন।
 আক্রমণকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, পুলিশের পাহারায় না থাকলে তৃণমূলের কোনও সাহসই নেই। দিনে দিনে মানুষের ভয় ভাঙছে। তাই আতঙ্কে ছটফট করছে তৃণমূল। নওসাদ সিদ্দিকির মুক্তির দাবিতে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতার কেন্দ্রীয় মিছিল সফল করারও আহ্বান জানান তিনি।
পলাশ দাশ সমাবেশে বলেন, বখরা যায় বলে পুলিশের একাংশের অফিসারের নির্দেশে পুলিশবাহিনী তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের পাহারা দিচ্ছে। অত্যাচারীদের লুটেরাদের তালিকা তৈরি হচ্ছে। পুলিশ আজ যার হয়ে অত্যাচার করছে কাল সে জেলে যাবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বারাসত ব্লক ২-এর সন্ত্রাস কবলিত সব পঞ্চায়েতে লাল ঝান্ডার মিছিল হবে।  
তন্ময় ভট্টাচার্য সমাবেশে বলেন, প্রতিবাদী মানুষের সমাবেশ দেখে এখন ভয়ে পা কেঁপে যাচ্ছে বলেই পুলিশের মদতে হামলা করতে হচ্ছে তৃণমূলকে। তৃণমূলের অফিসে পুলিশের গাড়ি গিয়েছিল হামলার পরিকল্পনা তৈরি করতে।
আইএসএফ’র প্রতিষ্ঠা দিবসের সমাবেশে পুলিশের নৃশংস আক্রমণ এবং নওসাদ সিদ্দিকিকে জেলে আটকে রাখার প্রতিবাদ করে সমাবেশে আইএসএফ’র উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নেতা কুতুব উদ্দিন ফতেহি বলেন, মানুষকে একজোট করছে দেখে একমাত্র বিরোধী বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকিকে ভয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। চোর লুটেরার দলে নাম লেখাননি তিনি, এটাই তাঁর অপরাধ! জনগণের পঞ্চায়েত গড়তে আমাদের লড়াই কেউ ঠেকাতে পারবে না। 

 

Comments :0

Login to leave a comment