Cuba Vaccine

সমাজতন্ত্রই বিকল্প কেন দেখাচ্ছে কিউবার টিকা

আন্তর্জাতিক

টিকা তৈরি করেছে কিউবা, নিজের জোরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আটকে রাখা যায়নি সমাজতান্ত্রিক কিউবাকে। কেবল নিজের জন্যই নয়, আগ্রহী অন্য দেশকে টিকা দিয়েছে কিউবা। 
হিসেব বলছে, কিউবার জনসংখ্যার ৮৬ শতাংশকে দেওয়া হয়েছে তিনটি ডোজই। ভারতের মতো তৃতীয় ডোজের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেনি সে দেশের সরকার। এর বাইরে আরও ৭ শতাংশ টিকা পেয়েছেন আংশিকভাবে।
কম আয়ের দেশগুলির পক্ষে কিউবার সাফল্য গুরুত্বপূর্ণ, স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমও। সিএনবিসি’র প্রতিবেদন, তার শিরোনাম এমন, ‘কেন কিউবার অসাধারণ টিকা সাফল্য কম আয়ের দেশগুলির পক্ষে সেরা সম্ভাবনা’।
টিকা প্রাপকদের মধ্যে ধরা হচ্ছে দুই বছর বয়সী শিশুদেরও, যারা বেশ কয়েক মাস আগে ভ্যাকসিন গ্রহণ করা শুরু করেছিল। দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য ওমিক্রন কোভিড ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার সীমিত করতে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক, শিশুদের বুস্টার ডোজ দিয়েছে। প্রায় ১কোটি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার এই দেশ গোটা লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানের একমাত্র, যেখানে কোভিডের জন্য দেশের প্রযুক্তিতে টিকা তৈরি করা হয়েছে। 


কিউবার জৈব প্রযুক্তি গবেষণা ক্ষেত্রের সম্ভ্রম রয়েছে উৎকর্ষের জন্য। দেশীয় গবেষণায় তৈরি হয়ে আবাডালা ( Abdala), সোবেরনা (Soberana 02) এবং সোবেরনা প্লাস (Soberana Plus)’র মতো পাঁচটি ভিন্ন কোভিড ভ্যাকসিন।  কিউবার গবষকরা বলছেন, প্রতিটি টিকারই তিনটি ডোজ দেওয়া হলে কোভিডের বিরুদ্ধে ৯০ শতাংশের বেশি সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।
কিউবার ‘ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল ট্রায়াল ডেটা’ অর্থাৎ মানুষের ওপর প্রয়োগের ফলাফল সমৃদ্ধ তথ্যের পর্যালোচনার এখনও আন্তর্জাতিক স্তরে হয়নি।  অন্য দেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এমনকি, হাভার্ডেরও গবষণাপত্রে তার সাফল্যের স্বীকৃতি রয়েছে। তবে আরও ব্যাপক পর্যালোচনার অপেক্ষায় রয়েছেন কিউবার গবেষকরাই।
তবে কিউবা তার তৈরি টিকা ‘জরুরি তালিকায়’ আনতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিকা ও ওষুধ বহুজাতিক ফাইজার বা মডার্না ব্যবহার করে ‘এম-আরএনএ’ (mRNA) প্রযুক্তি। কিউবার কোনও টিকাই যদিও এই প্রযুক্তিতে তৈরি নয়। বরং, ব্যবহার করা হয়েছে  ‘সাব ইউনিট প্রোটিন ভ্যাকসিন’ প্রযুক্তি। বহুজাতিক ওষুধ ব্যবসায়ী সংস্থা নোভাভ্যাক্স আবার একই প্রযুক্তিতে টিকা তৈরি করেছে। 
গবেষকরা বলছেন, নিম্ন-আয়ের দেশগুলির জন্য কিউবার প্রযুক্তিতে উৎপাদন বেশি নির্ভরযোগ্য। তাঁদের মত, এই প্রযুক্তিতে খরচ কম, সংরক্ষনের জন্য অত্যাধিক ঠান্ডা পরিকাঠামো দরকার হয় না। 
কতটা গুরুত্বপূর্ণ কিউবার টিকা উৎপাদন? আসলে দেখা দরকার কতটা বৈষম্য রয়েছে এ বিশ্বে করোনার টিকায়।


ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ৭০ শতাংশ লোককে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছে, মানে তিনটি ডোজই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরো আফ্রিকা হিসেবে ধরলে জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরও কম পেয়েছে তিনটি ডোজ। কিন্তু বিশ্বের অন্য দেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই টিকা পাঠাতে চাইলে প্রযুক্তিজনিত অনুমোদন প্রয়োজন। 
কিউবার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, উৎপাদন পরিকাঠামোর জন্য কয়েকটি শর্ত রেখেছে ‘হু’। তার জন্য খরচ দরকার। কিউবার পক্ষে একবারে এত খরচ করা কঠিন হচ্ছে। তবে কিছু দেরি হলেও পরিকাঠামো আরও উন্নত করা হবে। সে কাজে হাত দেওয়া হয়েছে।
২০২১’র ফেব্রুয়ারিতে, দেশীয় প্রযুক্তিতে ভ্যাকসিন তৈরি করার আগেই, কিউবা জানায় যে প্রত্যেকের জন্য টিকার ডোজ নিশ্চিত করা হবে। জনস্বাস্থ্য পরিকাঠামোই ভরসা সমাজতান্ত্রিক কিউবার। প্রত্যেকটি পাড়ায় ফ্যামিলি ডাক্তার এবং নার্স ক্লিনিকের মাধ্যমে। এই ক্লিনিকগুলির মধ্যে অনেকগুলি গ্রামীণ এবং দুর্গম এলাকায়। 
টিকায় গুরুত্ব বিকল্প কেন? দেশের সরকার বলছে, বিদেশি বহুজাতিকদের মতো মুনাফার জন্য টিকা তৈরি করে না কিউবা। কেবল কিউবার মানুষের জন্যও নয়। বিশ্ববাসীর পাশে দাঁড়াতে চায় ছোট্ট কিউবা।

Comments :0

Login to leave a comment