২০১৭ সালে শেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেখেছে রাজ্য। যদিও সেটা ছিল দখলদারির। গায়ের জোরে ইউনিয়ন দখল করেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর কোনও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। কিন্তু প্রতি বছর নিয়ম করে স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়ার সময় দিতে হচ্ছে ‘ইউনিয়ন ফি’। কিন্তু ইউনিয়ন কোথায়? কোথায় নির্বাচিত ছাত্র সংসদ?
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অভিযানের ডাক দিয়েছে এসএফআই। যেই দাবিগুলি সামনে রেখে সেদিনের অভিযান তার মধ্যে অন্যতম ‘ছাত্র সংসদ নির্বাচন’।
এসএফআই কলকাতা জেলা সভাপতি দেবাঞ্জন দে বলছেন, ‘‘ছাত্র সংসদ মানে ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়াকে তুলে ধরবার প্ল্যাটফর্ম। গত পাঁচ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রেখে, কলেজ ক্যাম্পাসগুলোকে দখলে রেখে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ইউনিয়নগুলোকে পরিণত করেছে কার্যত কাটমানি জেনারেটরে। নির্বাচন হলেই এই তোলাবাজদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দেবে ছাত্রছাত্রীরা। সিলেকশনবাজ টিএমসিপি তাই ভয় পাচ্ছে ইলেকশনে। আমাদের সাফ কথা, ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়াকে সামনে তুলে আনতে অবিলম্বে কলকাতা সহ রাজ্যের সমস্ত ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করাতে হবে।’’
এসএফআই নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকায় উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের দাবি। এসএফআই কলকাতা বিশ্বিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সম্পৃক্তা বোস বলছেন, ‘‘নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকায় কর্তৃপক্ষের কাছে ছাত্র ছাত্রীদের দাবি কোনোভাবেই তুলে ধরা যাচ্ছে না।’’
মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন ছাত্রদের কাজ রাজনীতি করা নয়। ছাত্র সংসদ সব ছাত্রের। ছাত্র সংগঠনগুলি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি জানায়। ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন অবাধ নির্বাচন হলে। ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিনের সমস্যা, পড়াশোনার সমস্যা, ক্যাম্পাসের মধ্যে আর বাইরে কোনটির কী কারণ, মত বিনিময় হতে পারে।
যেমন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলিপুর ক্যাম্পাস। রাষ্ট্রবিঞ্জান, ইতিহাস, সমাজতত্ত্বের মতো একাধিক বিষয় আলিপুরে পড়ানো হয়। ১৯৮৯ থেকে এই ক্যাম্পাসের পথ চলা শুরু। ছাত্র সংসদ পরিচালনা করত এসএফআই। সেই সময় সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের কথা ভেবে তৈরি হয়েছিল চিপ ক্যান্টিন। যা আজও আছে। যেখানে ১৫ টাকায় পাওয়া যায় পেট ভরার মতো খাবার।
উদাহরণ আরও রয়েছে। অধ্যাপকরা যেই নোট পড়ার জন্য দিতেন, বাইরে থেকে তা জেরক্স করতে অনেক টাকা লাগত। এসএফআই পরিচালিত ছাত্র সংসদ সেই সময় উদ্যোগ নিয়ে ক্যাম্পাসের ভিতর তৈরি করে জেরক্স সেন্টার। সেই সেন্টার থেকে আজও বাজারের থেকে কম টাকায় জেরক্স কিনে পড়ছে পড়ুয়ারা।
আগে ছাত্র সংসদ ছিল। ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের সমস্যার কথা সেখানে জানাতে পারতেন। কিন্তু এখন কোন ছাত্র সংসদ নেই। আর তাই ছাত্র ছাত্রীরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে বিভাগীয় প্রধানের দ্বারস্থ হচ্ছেন। আর একাধিক ব্যস্ততার মধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের দাবি মেটাতে জেরবার হচ্ছেন অধ্যাপকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদ থাকলে ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা, সরাসরি কর্তৃপক্ষকে জানানো যায়। কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু এখন সেই ছাত্র সংসদ না থাকায় পড়ুয়ারা আমাদের কাছে এসে নিজেদের সমস্যার কথা জানাচ্ছে। আমরা যতটা পারছি সমাধানের চেষ্টা করছি।’’ স্কলারশিপের টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হলেও অধ্যাপকদের দারস্থ হতে হচ্ছে ছাত্র ছাত্রীদের।
বিগত কয়েক বছরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি কোর্স বন্ধ হয়েছে। সেমিস্টার ফি বেড়েছে। এই সব বিষয় প্রাক্তন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী’র কাছে দ্বারস্থ হয়েছে এসএফআই। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি।
সোনালি চক্রবর্তী এখন আর উপাচার্য নন। আশিস ব্যানার্জি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হয়ে কাজ চালাচ্ছেন। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের দাবিতেও সরব হয়েছে এসএফআই। কিন্তু ইউনিয়ন রুম দখল করে থাকা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এই বিষয় চুপ।
ছাত্র সংসদ নেই। কিন্তু নেওয়া হয় ইউনিয়ন ফি। ইউনিয়ন রুম দখল করে বসে থাকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। কিন্তু একজন সাধারণ পড়ুয়া যখন সমস্যায় পড়েন তখন দেখা যায় না শাসক দলের ‘দুষ্টু ছেলেদের’।
এসএফআই চাইছে ক্যাম্পাসে গণতন্ত্র ফেরাতে। ২০ ফেব্রয়ারি দাবি জোরালো করতে হবে মিছিল, বলছেন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অভিযানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বিভিন্ন কম্পাসে প্রচার চালাচ্ছে এসএফআই। অলিপুর ক্যাম্পাসে এসএফআই’র অন্যতম সংগঠক মাল্যবান গাঙ্গুলির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আলিপুর ক্যাম্পাসে বেশিরভাগ প্রান্তিক অংশের ছেলে মেয়েরা পড়তে আসেন। স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন যেই সমস্যার মুখোমুখি পড়ুয়ারা হচ্ছেন সেই সব দাবি নিয়েই আমাদের অভিযান। ছাত্র ছাত্রীদের কাছে এই সব সমস্যা তুলে ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অভিযান প্রচার চালাচ্ছি তখন তারা আমাদের দাবির সাথে সহমত হচ্ছেন।’’
Comments :0