103rd Foundation Day

বিজেপি’র হাত থেকে দেশকে বাঁচানোই এখন প্রথম কাজ

রাজ্য

সোমবার প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সভায় বলছেন সীতারাম ইয়েচুরি।

পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় ইয়েচুরি 

কলকাতা, ১৭ অক্টোবর— ভারতকে বাঁচানোর জন্য বিজেপি’কে আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনেই সরকার থেকে সরাতে হবে। তবেই দেশকে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করা যাবে। সোমবার কলকাতায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ১০৩তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি একথা বলেছেন। ক্ষমতা থেকে বিজেপি’কে সরানোর জন্য রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক শক্তিগুলির সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তোলার কথা জানিয়ে ইয়েচুরি বলেছেন, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি-বিরোধীদের এককাট্টা করে নির্বাচনে বিজেপি’কে হারাতে পারলে জাতীয় স্তরে নির্বাচনোত্তর বিকল্প তৈরি করতে অসুবিধা হবে না। বিজেপি’র হাত থেকে দেশকে বাঁচানোই এখন প্রথম কাজ, তবেই সমাজতান্ত্রিক উত্তরণের পথে অগ্রসর হওয়া যাবে। 
রাজ্যস্তরে বিজেপি বিরোধীদের এককাট্টা করার ওপরে জোর দিলেও সীতারাম ইয়েচুরি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল আদৌ বিজেপি-বিরোধী নয়। এরাজ্যে নির্বাচনে তৃণমূল বিরোধী ও বিজেপি বিরোধী ভোট একত্রিত করতে হবে।’ তিনি একথাও বলেন, ‘বাংলায় বামপন্থী আন্দোলনের তীব্রতা না বাড়লে ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের বিকাশ সম্ভব নয়। বাংলায় বামফ্রন্ট সরকার ছিল বলেই কেন্দ্রে যুক্তফ্রন্ট এবং ইউপিএ সরকার তৈরি করা গিয়েছিল। এখনও বাংলার বামপন্থী আন্দোলনকেই দেশে দিশা দেখাতে হবে, আপনাদের ওপরে এই বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। এখন পশ্চিমবঙ্গে যে প্রতিবাদ আন্দোলন জোরদার হচ্ছে সেই বার্তা দেশের অন্যান্য অংশেও যাচ্ছে এবং সেখানেও উৎসাহের সৃষ্টি হচ্ছে।’ 


এদিন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, এছাড়াও ভাষণ দেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ‘আজকের ভারত- আমাদের কাজ’ বিষয়ক আলোচনায় তাঁরা অংশ নেন। সভায় প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা বিমান বসু সহ পার্টির রাজ্য নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। ১০২ বছর আগে তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামে কমিউনিস্টদের অবদান এবং স্বাধীনোত্তর ভারতের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিকতা নিশ্চিত করায় কমিউনিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ করে সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, সংবিধানের বুনিয়াদি স্তম্ভগুলিই এখন আক্রান্ত। ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে ভারতকে একটি ফ্যাসিবাদী হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি করতে এগচ্ছে বিজেপি। এটা রোখাই এখনকার সময়ের চ্যালেঞ্জ।
ভারতের অর্থনৈতিক সব সূচকের বেহাল দশা, ক্ষুধা সূচকে ভারতের তলানিতে নেমে যাওয়া ইত্যাদির উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেছেন, সব রাষ্ট্রীয় সম্পদ কর্পোরেট হাতে তুলে দিচ্ছে মোদী সরকার। এই দুর্নীতিকে আইনসম্মত করতে ইলেক্টোরাল বন্ডের ব্যবস্থা করেছে, কর্পোরেটের ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকায় বলীয়ান হয়ে বিজেপি এখন ভোটে হারলেও বিভিন্ন রাজ্যে সরকার গড়ছে। দেশের ভিতরে শত্রু সাজিয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর রাজনীতি করছে, অযৌক্তিকতার চাষ করছে, প্রতিবাদীদের মুখবন্ধ করতে আইনের অপব্যবহার করে গ্রেপ্তার করছে। 
এই অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে বিজেপি বিরোধীদের এককাট্টা করার প্রসঙ্গে ইয়েচুরি বলেছেন, যত বেশি সম্ভব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে একজোট করতে হবে। রাজ্যস্তরে যে সব আঞ্চলিক দল বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়ছে তাদের একজোট করতে হবে, যেমন বিহারে এবং তামিলনাডুতে হয়েছে। বাজপেয়ী সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঠানোর সময়েও জাতীয় স্তরে কোনো বিকল্প নির্বাচনের আগে ছিল না, কিন্তু এভাবেই বিকল্প গড়ে উঠেছিল নির্বাচনের পরে। 

তৃণমূল প্রসঙ্গে ইয়েচুরি বলেন, আমি আজকেও পশ্চিমবঙ্গে এসে দেখলাম নিয়োগ দুর্নীতির শিকার চাকরি প্রার্থীরা এখনও আন্দোলন করছেন, চাকরির পরীক্ষায় পাশ করেও তাঁরা চাকরি পাননি। তৃণমূলের এই দুর্নীতি চলছে কী করে? কারণ, সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির ৮ বছর পরেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কিছুই করেনি। বিজেপি সরকার সারা দেশে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির অপব্যবহার করছে ঠিকই, কিন্তু তৃণমূল অপব্যবহারের প্রশ্ন তোলে কী করে? ৮ বছর ধরে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির তদন্ত থেকে দুর্নীতিগ্রস্তরা ছাড় পেল কী করে সেটাই তো আসল প্রশ্ন। আসলে বাংলার বুকে বিজেপি-আরএসএস’কে পা রাখার জায়গা করে দিয়েছে তৃণমূল। আরএসএস’কে মর্যাদা দিয়েছে, এমনকি বিজেপি’র মন্ত্রীসভাতেও থেকেছে। ওদের বিজেপি বিরোধিতার অবস্থানের কোনও ধারাবাহিকতা আছে নাকি! 
সভায় সূর্য মিশ্র বলেছেন, সারা দুনিয়ায় নয়া ফ্যাসিবাদের উত্থানের প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতের রাজনীতিতেও তাই ঘটছে। কর্পোরেট আর রাষ্ট্রকে এক করে দিচ্ছে দক্ষিণপন্থীরা। আরএসএস’এর অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দল বিজেপি দক্ষিণপন্থী এই বিপদ নিয়ে এসেছে, তার বিরুদ্ধে সংগ্রামই এখনকার সময়ের চ্যালেঞ্জ। ১৯২৫ সালে আরএসএস’এর প্রতিষ্ঠার সময় থেকে মুঞ্জে ইতালি থেকে ফ্যাসিবাদের দর্শন নিয়ে এসেছিলেন, তারপরে ফ্যাসিবাদ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেনি, নয়া ফ্যাসিবাদের প্রবক্তারা ইউরোপ, আমেরিকা, লাতিন আমেরিকায় সক্রিয়। ভারতেও আরএসএস সেই কর্মসূচি নিয়ে এগচ্ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment