একটিমাত্র বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ১০ হাজারের ওপর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন!
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নদীয়ার কালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে জন্য ভোটার তালিকা বিশেষ সংশোধন করার কাজে নামা হয়েছিল। তাতেই এই বিপুল সংখ্যক নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ মৃত ভোটার। বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য বিশেষ অভিযানে নামার পর ভোটারকে অন্যত্র চলে যাওয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
গত ৮ এপ্রিল থেকে ২৪ এপ্রিল সময়কালে নদীয়ার কালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত করার জন্য বিশেষ সংশোধন অভিযানে নামে নির্বাচন কমিশন। তাতেই এই বিপুল ভুয়ো ভোটারের অস্তিত্ব টের পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছ, বাতিল ভোটারদের মধ্যে প্রায় সাত হাজারের ওপর মৃত ভোটারের সন্ধান মিলেছে। ভোটার পরিচিতপত্র থাকার পরও অন্তত ৩ হাজারের ওপর ভোটারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা অন্যত্র চলে গিয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, কালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের মোটা ভোটারের সংখ্যা ২ লক্ষ ৫২ হাজার। তারমধ্যে প্রায় ৪ শতাংশ ভোটারের নাম বাদ চলে যাওয়ার ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন ঘটনা। সাধারণভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করার প্রক্রিয়ায় মোটা ভোটারের সংখ্যা থেকে ২ শতাংশ ভোটারের নাম বাদ গেলে পুনরায় মূল্যায়ন করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, ‘ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় এরআগে এরাজ্য থেকে এই বিপুল সংখ্যায় নাম বাতিলের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ৪ শতাংশ নাম একটি বিধানসভা থেকে বাদ পড়ার অর্থ, মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় থেকে গেছে। তবে বৈধ ভোটাররা যাতে কোনোভাবেই তালিকা থেকে বাদ না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।’
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামের দলের কর্মীসভা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে ভুয়ো ভোটারকে ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ সামনে এনেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনারকে পর্যন্ত কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনলাইনে দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে ভোটারদের এনে এরাজ্যের ভোটার তালিকায় ঢুকিয়ে দেওয়া আটকাতে দলে কোর কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন। ইন্ডোরের সভার পর গোটা রাজ্যের বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকা হাতে নিয়ে দলের কর্মীরা ভুতুড়ে ভোটার খুঁজতে নামেন।
নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তোলার পর সেই কমিশনই রাজ্যের একটিমাত্র বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন করতে নেমে ৭ হাজার মৃত ভোটারকে খুঁজে পেয়ে তা বাদ দিয়েছে। এরাজ্যে বিরোধীদের দীর্ঘদিন ধরেই ভোটার তালিকায় মৃত ভোটারদের নাম বাদ না দেওয়া নিয়ে অভিযোগ করে আসছিলেন। এমনকি রাজ্যের পঞ্চায়ে, পৌরসভা ও কর্পোরেশনে লুটের ভোটেও বুথে মৃত ভোটারদের ভোট পড়ার ঘটনা নিয়ে বহুবার সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা। এবার সেই মৃত ভোটারদের বিপুল সংখ্যাকে বাদ দেওয়ার ঘটনা কার্যত বিরোধীদের অভিযোগের সত্যতাকেই সামনে আনল।
সাধারণভাবে গোটা দেশে অক্টোবর মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলে। ওই সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকায় সংযোজন, বিয়োজন সহ অন্যন্য কাজ করার জন্য বিএলও (বুথ লেবেল অফিসার)-দের কাজে নামার নির্দেশ দেয়। কিন্তু নদীয়া জেলার কালিগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনকে মাথায় রেখে এই ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন অভিযানে নামার নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কারণ, কালিগঞ্জ বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ গত ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যান। ফলে বিধায়ক শূন্য কালিগঞ্জ বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনকে মাথায় রেখেই এই ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন করার কাজ হাতে নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মৃত ও অন্যত্র চলে যাওয়া মিলিয়ে ১০ হাজারের ওপর নাম বাদ পড়ার পাশপাশি ‘ফরম ৬’ পূরণের মাধ্যমে ১৮ বছর পার করা প্রায় ১ হাজার ৬৬৯ জন নতুন ভোটারকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
Fake voter scam
কালিগঞ্জ কেন্দ্রে বাদ বিপুল নাম

×
Comments :0