রাজ্য শিশু মৃত্যু বেড়েই চলেছে। শুক্রবার রাত থেকে শুধুমাত্র কলকাতার বি সি রায় হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছে তিনজন। গত ৮ দিনে রাজ্যে মৃত্যু হল ৩৩ জন শিশুর। প্রতিদিনই শিশুদের এই মৃত্যুর খবর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। বিভিন্ন জেলাতেও অ্যাডিনো সংক্রমণ বাড়ন্ত।
জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা অনেক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। জানা যাচ্ছে জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ বাচ্চাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। রাজ্য প্রশাসন শুধু স্বস্ত্বির বাণী দিয়ে চলেও শিশু চিকিৎসার চিরাচরিত পরিকাঠামোয় কোন বড় পরিবর্তন এখনো আনা হয়নি। বেলেঘাটার বি সি রায় হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, শুক্রবার রাত থেকে মৃত্যু হয়েছে ৩টি শিশুর। তাঁদের একজনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগণার দমদমে। ১১ মাসের ওই শিশুর নাম রায়ান গাজি। শিশুটি জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভুগছিলো। পরিবারের সদস্যরা প্রথমে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তার শ্বাসকষ্ট না কমায় তাকে বি সি রায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। শনিবার শিশুর মৃত্যু হয়।
উত্তর ২৪ পরগণার হাতিয়ারার বাসিন্দা আরাধ্যা চ্যাটার্জি তাঁর বয়স ২ মাস ১৫ দিন। জ্বর, সর্দি, কাশি ছিলো। আরাধ্যার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরেই নাকি ওই শিশু জ্বরে ভুগছিল। প্রথমে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে স্থানীয় একটি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসার পরেও জ্বর না কমায় পরের আর একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানেও কাজ না হওয়ায় গত শুক্রবার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। শনিবার মৃত্যু হয় ওই শিশুর। এদিন ভোররাতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত মৃত্যু হয়েছে ছয় মাসের এক শিশুর। জানা গেছে, ওই শিশুটি নদীবার কল্যাণীর বাসিন্দা। জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাকে প্রথমে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার বি সি রায় হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর চারটে নাগাদ মৃত্যু হয়ে ওই ছোট্ট শিশুর। যদিও ওই শিশুরা অ্যাডিনো ভাইরাস সংক্রমণের শিকার কিনা তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
করোনা সংক্রমণের মতো শিশু মৃত্যুর ঘটনাও চেপে যাচ্ছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। জ্বর, শ্বাসকষ্টে গত ১৫দিনে কত শিশুর মৃত্যু হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সেই তথ্য দিতে চায়নি ওয়ার্ডমাস্টার অফিস থেকে। শিশু মৃত্যুর পুরো ঘটনায় চেপে যেতে চায়ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জ্বর, শ্বাসকষ্টে নাকি মৃত্যুর খবর তাদের কাছে নেই কিন্তু ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে গত ১৫ দিনে শিশু মৃত্যুর কোন তথ্যই মিলছে না। ঠিক করোনার মতো মৃত্যুর সংখ্যা চেপে যেতে হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুনিয়েছেন যাদের ওজন কম, হার্টের ওষুখ আছে, বা অন্যান্য রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন তাদের ছাড়া বাকি শিশুদের কোন ভয় নেই। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বেড’র সংখ্যা ১৮৬ বলে দাবি করেছেন অধ্যক্ষ কিন্তু সেই বেড’এ আরো অনেক বেশি রোগী ভর্তি আছে। একই বেড’এ দু’জন করে শিশু ভর্তির ফলে অন্য রোগ নিয়ে যে শিশুরা ভর্তি হয়েছে তারাও অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে! ২০০ অনেক বেশি শিশু ভর্তি থাকলেও তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জ্বর, শ্বাস কষ্ট নিয়ে ভর্তি হচ্ছে এটা হাসপাতালের অধ্যক্ষ দাবি করেছেন। এই শিশুরা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রাক্ত কিনা তা স্যাম্পেল টেস্ট করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগই পজিটিভ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসার জন্য বেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিদিনই প্রচুর শিশু ভর্তি হচ্ছেন জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে কিন্তু গত ১৫ দিনে কত শিশুর মৃত্যু হয়েছে সেই চিত্র স্পষ্ট করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে প্রতিদিনের শিশু মৃত্যুর সব তথ্যই নাকি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সেই খাতা না থাকার জন্য এই শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দেওয়া যাচ্ছে না।
Comments :0