Bardhaman Court

আদালতে দোষী সাব্যস্ত বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ার পার্সন সহ তৃণমূল নেতারা

রাজ্য জেলা

বর্ধমান আদালতে গ্রেপ্তারের পর কাকলী তা গুপ্তকে বর্ধমান জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাবার গুরুতর জখম হওয়ার ঘটনায় বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ার পার্সন, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, পঞ্চায়েতের প্রধান ও তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সহ ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল বর্ধমান আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এই ১৩ জনকে। তার মধ্যে আছে ৩৪১, ৩০৭, ৩২৬ ও ৩৪ ধারা।  সোমবার বর্ধমানের দ্বিতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক  ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন। বিচারক অরবিন্দ মিশ্র মামলায় দু’জনকে খালাস করে দেন। মঙ্গলবার এই ১৩ জনের সাজা ঘোষণা হবে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ৩০৭ ধারায় সের্বাচ্চ সাজার মেয়াদ ১০বছর। সাজা ঘোষণার পরই আদালত চত্বরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। গোটা আদালত চত্বর ঘিরে রাখে, পুলিশ ও র্যা ফ। এই  খবর ছড়িয়ে পড়তেই  তৃণমূলের বিধায়ক থেকে শুরু করে দলের নেতারা আদালত চত্বরে ভিড় জমান। পিপি’র সাথে তার দপ্তরে শাসকদলের নেতাদের  গোপন শলাপরামর্শ আদালত চত্বরে করতে দেখে ক্ষোভ ছড়িয়েছে আইনজীবীদের মধ্যে। আদালত চত্বরে পৌঁছে যান পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরাও। এদিন দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১৩ জনকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। কেসের সরকারি আইনজীবী হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ১৫জনের মধ্যে ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। বাকি দু’জনকে খালাস দিয়েছেন বিচারক। 
এদিন আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা নাগাদ রায়ান পঞ্চায়েতের তৎকালীন সদস্য জীবন পালের বাবা দেবু পাল বাড়ির কাছে নাড়িগ্রামের দাসপাড়ার দুর্গাতলায় বসেছিলেন। সেই সময় তাঁর উপর হামলা চালায় শাসকদলের দুষ্কৃতীরা। রড, টাঙি, তরোয়াল প্রভৃতি নিয়ে তাঁর উপর চড়াও হয় বেশ কয়েককজন। তাঁর ডান চোখে ছুরি মারা হয়। মারধরে তিনি গুরুতর জখম হন। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতার এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়েছিল। ঘটনার দিনই জখমের স্ত্রী সন্ধ্যা পাল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে কেস রুজু করে তদন্তে নামে থানা। অভিযোগ, ঘটনায় বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার চেয়ার পার্সন কাকলি গুপ্ত, বর্ধমান–১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ   মানস ভট্টাচার্য, রায়ান ১ পঞ্চায়েতর প্রধান কার্তিক বাগ, রায়ান–১ অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি ও পরিচিত দুষ্কৃতী শেখ জামাল সহ দলের বেশ কয়েকজনের নাম জড়ায়। কার্তিকের বাবা ও ভাইয়ের নামও জড়ায়। তদন্তে নেমে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে। তদন্ত শেষ করে ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার।   
অভিযোগ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বেশ কয়েকজন বয়ান বদল করেন। তাঁদের বিরূপ সাক্ষী ঘোষণা করা হয়। তবে, বর্ধমান হাসপাতালের দুই চিকিৎসক এবং এসএসকেএমের চিকিৎসকের বয়ান মামলার বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মত আইনজীবী মহলের। হাসপাতালে ভর্তির সময় চিকিৎসকের কাছে হামলায় কয়েকজন জড়িতর নাম বলা হয়। এফআইআরেও তাদের নাম রয়েছে।
অভিযোগ শুধু এই ঘটনা নয় দেওয়ানদিঘী অঞ্চলে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা প্রকাশ্য দিনের বেলায়  ২০১২ সালের ২২ফেব্রুয়ারি নৃশংসভাবে খুন করে পার্টি নেতা কমরেড প্রদীপ তা ও কমরেড কমল গায়েনকে। সেই খুনের মামলা এখনো চলছে। শাসকদল ও পুলিশের মদতে অপরাধীরা এখনও বাইরে ঘোরাফেরা করছে। গোটা এলাকায় তৃণমূলের গুন্ডারা জঙ্গলরাজে পরিণত করেছে। শুধু তাই নয় ২০২৩ সালে ১ জুলাই দেওয়ানদিঘী তৃণমূলের পার্টি অফিসের ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে এক গৃহবধুকে ঘরে ঢুকে তাঁর ছেলের সামনে ধর্ষণ করে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা। ধর্ষণের পর মহিলার যৌনাঙ্গে রড ঢুকিয়ে দিতে যাবার সময়  ছেলে কোন ক্রমে মা’কে রক্ষা করে। সেই ঘটনারও মামলা চলছে আদালতে। অপরাধীরা এখনো ফেরার। বর্তমানে ধর্ষিতা বাড়ি ছেড়ে শাসকদলের গুন্ডাদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment