মোদীর বছরে ২কোটি চাকরির প্রতি প্রতিশ্রুতি কবেই উধাও,এবারে বাজেটেও খুঁজে পাওয়া গেলো না বেকারি ও চাকরির নিয়ে কোন শব্দ। বাজেটে উপেক্ষিত থেকে গেল বেকারির হাহাকার নিয়ে কোন শব্দ। কর দাতাদের করের ন্যূনতম সীমা বাড়িয়ে ৭লক্ষ করায় হৈচে তুলেছে বিজেপি। ক‘জনের আর মাসে ৬০হাজার টাকা আয়ে কর দাতার সীমায় পৌছায়?।সরকারের হিসাব বলছে মাসিক আয়ের এই প্রত্যক্ষ করদাতার সংখ্যা হবে ৫.৮ কোটি। যা জনসংখ্যার ৫ শতাংশের কম। পরিস্কার দেখা গেল মোট জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের কোন কর যোগ্য আয় নেই। তাদের ভালো আয়ের ব্যবস্থাও নেই। এবারের বাজেটে দেখা গেল তাদের জন্য কোন মাথা ব্যাথা নেই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। এদিন তাঁর ৫৪ পাতার বাজেট ভাষণে বেকারি, চাকরি কর্মসংস্থান, দারিদ্র জাতীয় শব্দগুলিকে যেন ইচ্ছা করেই বাদ দিয়ে দিয়েছেন সীতারামন। তাই দেখা গেল, দেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান প্রকল্প রেগায় কমে গেল বরাদ্দ। সরকারি চাকরির নিয়োগ বাড়ানো তো কবেই উধাও হয়ে গেছে অগ্রাধিকার তালিকা থেকে। বাদ পরে গেছে সরকারি পরিকাঠামোয় বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ।
বর্তমানে দেশ জুড়ে মন্দা নেমে আসায় কাজের হাহাকার।গ্রাম ভারতে ১০০দিনের নিশ্চিত কর্মসংস্থানে গ্রহন করা হয়েছিল রেগা কর্মসংস্থান প্রকল্প। সেই গ্রামীন কর্মসংস্থান প্রকল্পেই বাজেটে বরাদ্দ কমিয়েছে কেন্দ্র।এবারে বাজেটে রেগায় বরাদ্দ এক ধাক্কায় ৩২শতাংশ বা এক তৃতীয়াংশ হারে কমানো হয়েছে।বাজেটে রেগায় বরাদ্দ হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। তাতে গত বছর (২০২২-২৩) সালে সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ৮৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। রেগার বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় একধাপে কমানো হলো ২৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।এদিকে মহামারী ও মন্দায় বহু মানুষের কাজ চলে গেলেও দেখা গেছে প্রতিবছর রেগা কর্মসংস্থান প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। যেমন ২০২০-২১ সালে রেগায় বরাদ্দ ছিল ১লক্ষ ১১হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সলে কমিয়ে বরাদ্দ করা হলো ৭৩ হাজার কোটি টাকা তবে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ হয়েছিল ৯৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২২- ২৩ সালে ফের কমে হয়েছে ৮৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এবারে ২০২৩ সালে ফের কমে হলো ৬০ হাজার কোটি টাকা গত পাঁচ বছরে সর্বাধিক কমছে রেগায় বরাদ্দ।
এদিকে গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়নে গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। সেখানেও কোপ পরেছে বাজেটে। এবারে বাজেটে গ্রাম উন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে ১লক্ষ ৫৭ হাজার কোটি । গত বছর গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পে ১লক্ষ ২১ হাজার কোটি টাকা।এতে স্পষ্ট দেখা গেছে ১৩ শতাংশ হারে বরাদ্দ কমেছে।এদিকে বিশেষজ্ঞদের মত,মন্দা চলায় বর্তমানে গ্রাম ভারতে রেগার কাজের চাহিদা বেড়েছে। গ্রাম ভারতে এই সময়ে বছরে ১০০ দিন নিশ্চিত কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বছরে ২.৭২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা প্রয়োজন সেখানে কেন্দ্র থেকে তার চার ভাগের একভাগ অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে। কেন্দ্র যে আর্থিক সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে গ্রাম ভারতে এই সময়ে রেগায় কর্মসংস্থান প্রকল্পের চাহিদা বিপুল হারে বেড়েছে। মহামারী পূর্ববর্তী অবস্থা বা ২০১৮-১৯ সালে যে চাহিদা ছিল তার থেকেও রেগা কাজের চাহিদা বেশি।কাজের চাহিদা বাড়লেও দেখা গেল সরকার সেই রেগা প্রকল্পে বরাদ্দ প্রতিবছর কমিয়ে গেছে। রেগা ছাড়াও গরিবের কর্মসংস্থানে আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনা প্রকল্পে বরাদ্দ কমেছে। গত বছর বরাদ্দ ছিল ৫হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। তা বর্তমান বাজেটে কমিয়ে বরাদ্দ হয়েছে ২হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে।বিশেষজ্ঞদের মত, গ্রাম ভারতে গরিব মানুষের কর্মসংস্থানে কোন নজর দেয়নি কেন্দ্র। প্রায় উপেক্ষিত থেকে গেছে গ্রাম ভারতের গরিবের কর্মসংস্থান।
এদিকে গ্রাম ভারতের মতোই দেশের বড় বড় শিল্প শহরে কাজের হাহাকার চলছে। নতুন বিনিয়োগ নেই। যে সব নতুন শিল্পে বিনিয়োগ হয়েছে সেসব কলকারখানা মন্দার জেরে টিকে থাকতে পারেনি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও অর্থমন্ত্রী সীতারামন এবারে দাবি করেছেন ‘দেশের অর্থনীতি এবারে সঠিক পথে চলছে’। সেই সঠিক পথে কত কর্মসংস্থান হবে? তার লক্ষ্যমাত্রা কি? সেসব নিয়ে কোন আশ্বাস দেননি। প্রসঙ্গত চলতি আর্থিক বছরে দেশে নতুন শিল্পে বিনিয়োগ কমছে। গত বছর ২০২১ সালে আর্থিক বছরে যেখানে নতুন শিল্প বা স্টার্টআপ-এ বিনিয়োগ ছিল ৩৭ বিলিয়ন ডলার (১ বিলিয়ান=১০০ কোটি), ২০২২ সালের আর্থিক বছরে সেই বিনিয়োগ কমে হয়েছে ২৪ বিলিয়ন ডলার। এতে গত বছরের তুলনায় নতুন বিনিয়োগ কমেছে ৩৩ শতাংশ। শুক্রবার পিডব্লিউসি ইন্ডিয়ার সমীক্ষা রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে শিল্প বিনিয়োগ নিয়ে আরেকটি সমীক্ষক সংস্থা ট্রাক্সন ভারতের নতুন শিল্পে বিনিয়োগের হার কমছে বলে ডিসেম্বরে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। দুই সংস্থাই তাদের রিপোর্টে জানাচ্ছে,বিশ্ব জুড়ে মন্দা এবং ভারতে সুদের হার বেড়ে চলায় বাজারে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার কারণেই নতুন শিল্পে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না বিনিয়োগকারীরা। এতে দ্রুত হারে কমছে নতুন শিল্পে বিনিয়োগ। তার প্রভাব পড়ছে নতুন শিল্পের উৎপাদনে। কমছে উৎপাদন বৃদ্ধি হার। নতুন শিল্পে কমছে কর্মসংস্থান। ফলে পুরোন শিল্পের সঙ্গে আধুনিক শিল্পে নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হার একই সঙ্গে কমছে।
বর্তমানে বেশিরভাগ নতুন শিল্প হলো আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। এদিকে জাতীয় দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তার প্রতিবেদনে জানাচ্ছে মন্দা চলায় নতুন শিল্পে বিনিয়োগ হলেও সেই শিল্পের বিকাশের হার কম। ২০২১ সালে ৪২টি নতুন শিল্প তৈরি হলেও তার মধ্যে মাত্র ২১ শিল্প টিকে রয়েছে। নতুন ধারায় ই-বাণিজ্য নিয়ে প্রচুর প্রচার চললেও তাতে বিনিয়োগ বিপুল হারে কমেছে। গত বছরের তুলনায় তা কমেছে ৭১ শতাংশ হারে। প্রযুক্তি শিক্ষায় ই-বাণিজ্য কমেছে ৫৪ শতাংশ হারে।
এদিকে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি(সিএমআইই) জানাচ্ছে ডিসেম্বরে দেশে বেকার হার বেড়ে হয়েছে ৮.৩ শতাংশ। যা গত বছরের শুরুতে ছিল ৬.৫ শতাংশ। সীতারামন গত বছর বাজেটে জানিয়েছিলেন তার সরকারের উদ্যোগে অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভবনা দেখা গেছে। তাতে সবুজ কুড়ি তিনি দেখছেন। কিন্তু সেই অর্থনীতি ধসে পড়েছে। তবু দেখা গেল এবারে বাজেটে গরিব বেকারি অনাহারের কথাও নেই। এদিন এনিয়ে প্রতিক্রিয়ায় কংগ্রেস মুখপাত্র পি চিদাম্বরম বলেছেন, বাজেটে সরকারের চোখ কোন দিকে তা ভাষণ শুনলেই মোঝা যায়। তারা গরিব, বেকারি, অনাহার কিছুই দেখতে পায়না। তাই বাজেটে ভাষণে অর্থমন্ত্রীর তা নিয়ে একটি শব্দ নেই। তিনি দাবি করছেন মহামারীর পর বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে। তার তথ্য ঠিক নয় । বেসরকারি বিনিয়োগ কমছে। এতে শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমায় আর্থিক বৃদ্ধির হার কমছে।
চিদাম্বরম বলছেন, সীতারানমনের মুখে বেকার গরিব মানুষ নিয়ে কোন কথা নেই। তিনি প্রত্যক্ষ করদাতাদের স্বার্থ দেখা হয়েছে বলে দাবি করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কতজন প্রত্যক্ষ কর দেন। প্রত্যক্ষ কর দাতা হলেন দেশে ৫.৮ কোটি। যা মোট জনসংখ্যার ৫শতাংশের কম তাদের শুধু স্বার্থ তিনি দেখছেন বলে তার দাবি। তিনি দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষকে বাজেটের ভাষনের আওতা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। মধ্যবিত্তের জন্য নতুন কর ছাড়ের জমানা বলে যা বোঝাতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী, তা একটা বড় প্রতারনা ছাড়া কিছু নয় বলেও তিনি জানান।
Comments :0