Hawkers Eviction

কোচবিহারে জেসিবি দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হল ৭৫ টি দোকান

জেলা

নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে সোমবার কলকাতা শহরের হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, রাজারহাট, সেক্টর ফাইভ সহ বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাত দখল করে অস্থায়ী দোকান বসানো সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এরপরই অতি সক্রিয় হয়ে উঠলো কোচবিহার জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের ঘুম ভাঙার আগেই কোচবিহার ২নং ব্লকের মহিষবাথান এলাকায় সদ্য গড়ে ওঠা কোচবিহার জেলা পরিবহণ ভবনের মূল ফটকের দুই পাশে, জাতীয় সড়কের ফুটপাতে প্রায় ২৫ বছর যাবত ব্যবসা করে আসা প্রায় ৭৫ জন ব্যবসায়ীর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল জেলা প্রশাসন। 
শুধু এখানেই নয়, কোচবিহার শহরের রাসমেলা ময়দান সংলগ্ন এলাকায় ৫মিনিটের জন্য আগাম জানিয়ে ফুটপাত উচ্ছেদের অভিযোগ উঠলো পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে। রীতিমতো জেসিবি ব্যবহার করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় তাদের একমাত্র উপার্জনের প্রতিষ্ঠানগুলি।
মহিষবাথান এলাকার উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, তারা ৩৪নং জাতীয় সড়কের পাশে ফুটপাতে দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর যাবত ব্যবসা করে আসছেন। এই ব্যবসার মাধ্যমেই সংসার প্রতিপালিত হয় তাদের। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোমবার সন্ধ্যায় মাইক প্রচার করে বলা হয় সংশ্লিষ্ট এই দোকানগুলি মালিকের যাতে তাদের দোকান ভেঙে সরিয়ে দেন। এই ঘোষণার পর এই ব্যবসায়ীরা ঠিক করেছিলেন যে তারা নিজ নিজ খরচায় মিস্ত্রি দেখে তার নিজেদের দোকান ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দোকানের থাকা বিভিন্ন সামগ্রীয় তারা নিয়ে যাবেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে দিনের আলো ফোঁটার আগেই তাদের দোকানগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় কোচবিহার জেলা প্রশাসন। দোকানে থাকা প্রচুর সামগ্রী নষ্ট হয়ে যায় তাদের। লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তারা। একেই তাদের আয়ের রাস্তা বন্ধ করে দিল প্রশাসন। তার ওপর দোকানে থাকা সামগ্রী নষ্ট করে দিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে বাটি হাতে রাস্তায় বসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তাদের কাছে বলে এদিন জানান উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীরা।
তারা জানান, তারা বারবার প্রশাসনিক কর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হলে, তাদের প্রত্যেকের পরিবার সীমাহীন সংকটের মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে। কারণ ফুটপাতে ব্যবসা করে যে সামান্য আয় হয় তাতেই সংসার প্রতিপালন করে আসছেন তারা। সবকিছু জানার পরেও প্রশাসনের বিন্দুমাত্র সহানুভূতি দেখালো না এই ফুটপাত ব্যবসায়ীদের প্রতি বলে এদিন আক্ষেপ করেন এই ব্যবসায়ীরা। 
তাদের দাবি দ্রুততার সাথে তাদের পুনর্বাসন এর ব্যবস্থা করুক প্রশাসন তা না হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে তাদের। ২৫মে জেলা প্রশাসনের এই উচ্ছেদ অভিযান আটকে দেন ফুটপাত ব্যবসায়ীরা, রীতিমতো মহকুমা শাসককে ঘিরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। অবশেষে এদিন রীতিমতো জোরপূর্বক এই ফুটপাত ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হলো। কর্মহীন হয়ে পড়লেন প্রায় ৭৫টি পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তিরা। 
একইভাবে এদিন রাসমেলা ময়দান সংলগ্ন ফুটপাতের প্রায় ৫০টি দোকান ভেঙে গুড়িয়ে দেয় পুলিশ প্রশাসন। তাদেরকে দোকানগুলি খুলে নিয়ে যাওয়ার বা দোকানের সামগ্রী সরিয়ে নেবার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে এদিন অভিযোগ করেন উচ্ছেদ হওয়া এই ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। এই মুহূর্তে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি তারা বলে এদিন জানান।

এদিন সকাল থেকেই কলকাতা, বিধাননগর সহ একাধিক জায়গায় হকার উচ্ছেদ অভিযানে নামে প্রশাসন। কোথাও অল্প কিছু সময় দেওয়া হচ্ছে তো কোথাও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বহু বছর ধরে ফুটপাতে ব্যবসা করে আসা হকারদের দোকান। আচমকা এই অভিযানে রুটি রুজি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ছোটো ব্যবসায়ীরা।

Comments :0

Login to leave a comment