CPI(M) RALLY KOLKATA

বসন্তের বার্তা কলকাতার রাস্তায়

রাজ্য কলকাতা

CPIM LEFT FRONT WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION TMC CORRUPTION BJP BENGALI NEWS

ঘড়িতে তখন সাড়ে তিনটে। রানী রাসমণি অ্যাভিনিউতে সিপিআই(এম)’র কলকাতা জেলা কমিটির ডাকা সমাবেশ শুরু হতে আরও আধঘন্টা। কিন্তু ইতিমধ্যেই সমাবেশ স্থল প্রায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে। এর কিছু পরেই মঞ্চ থেকে পুলিশের উদ্দেশ্যে ভেসে আসে- ‘‘আমাদের ব্রিগেডগুলি ঢুকতে শুরু করেছে। বহু মানুষ আসছেন। আপনারা রানী রাসমণির বাকি দুটি লেনে যান চলাচল বন্ধ করে দিন। নইলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে!’’

বিকেল ৪টে থেকে শুরু হয় সমাবেশের কাজ। সিপিআই(এম)’র প্রতিষ্ঠাতা নয় পলিটব্যুরো সদস্য বা ‘নবরত্নের’ নামে গঠিত হয় ৯টি ব্রিগেড। শহরের ৯টি প্রান্ত থেকে এই ৯টি ব্রিগেড মিছিল করে পৌঁছয় ধর্মতলায়। কলকাতা জেলার ৫০টিরও বেশি এরিয়া কমিটির সদস্যরা এলাকা ভিত্তিতে যোগ দেন এই ব্রিগেডগুলিতে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে অংশ নেওয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরাও হাঁটেন ৯টি মিছিলের কোনও একটিতে। 

সোমবার কলকাতার রানী রাসমণি অ্যাভিনিউতে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটি। সিপিআই(এম) সূত্রে দাবি, কেবলমাত্র কলকাতা জেলা সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে এদিনের মতো জমায়েত সাম্প্রতিক সময়ে হয়নি।

২০২৩ সালে পার্টির প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের হয়েছে কলকাতায়। কলকাতার প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে, অর্থাৎ সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির দপ্তরে, ২৭ জানুয়ারি থেকে চলে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। এই বৈঠককে সামনে রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হয় শহর কলকাতায় এক সমাবেশ করার। কলকাতা জেলা সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, গ্রামে ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, এবং গ্রামীণ দুর্নীতিকে সামনে রেখে লাগাতার কর্মসূচি সাজিয়েছে পার্টি।

পার্টি কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষ হয়েছে গান্ধী হত্যার দিনে। এই সূচি জানার পরই ঠিক করা হয় ওই দিনই হবে সমাবেশ। জীবিকার লড়াই আর মেহনতিকে নিয়ে বিভাজন রোখার লড়াই মিশবে সমাবেশে।’’

কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনের পর শহর কলকাতাতেও গতি বেড়েছে সিপিআই(এম)’র রাজনৈতিক কর্মকান্ডের। গণসংগ্রহ থেকে শুরু করে মিছিল, শহর জুড়েই জনসংযোগ ঝালিয়ে নেওয়ার কাজ নিয়মিত ভাবে করে চলেছেন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা। সেই সমস্ত কিছুর যোগফল হিসেবে ভিড়ে ঠাসা সমাবেশ করে দেখানোর চ্যালেঞ্জ নেন জেলা পার্টির নেতৃত্ব। 

সেই অনুযায়ী শহরের সমস্ত এরিয়া কমিটির অন্তর্গত এলাকায় শুরু হয় মিছিল। রাসবিহারী, টালিগঞ্জ ফাঁড়ি, মল্লিকবাজার,বেহালা থেকে শুরু করে শহরের উত্তর প্রান্ত- কলকাতার অধিকাংশ বড় রাস্তার রেলিং মুড়ে ফেলা হয় লাল ঝান্ডায়। সমাবেশের কথা টাঙানো হয় ফ্লেক্সও। একইসঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় চলা গণসংগ্রহ অভিযানে বাড়তি জোর দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র সহ রাজ্য পার্টির প্রথম সারির সমস্ত নেতাই অংশ নেন গণসংগ্রহে। ছোট এবং মাঝারি জনসভার মাধ্যমেও প্রায় ১ মাস ধরে কলকাতা জুড়ে  সোমবারের এই সভার প্রচার চলে। প্রচলিত প্রথার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়াতেও শেষ সাতদিন ধরে সোমবারের এই সভার জোর প্রচার চালান সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা, বিশেষত ছাত্র যুব কর্মীরা। 

শুধু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিংবা পুলিশের দেওয়া হিসেবেই নয়, সোমবারের সমাবেশে জনতার ঢল তা রানী রাসমণি এভিন্যিউতে চা, জল কিংবা প্যাটিসের ফেরিওয়ালাদের কথাতেও স্পষ্ট। সভা শুরু হওয়ার আধঘন্টার মধ্যেই অধিকাংশ প্যাটিস বিক্রেতার কাঠের বাক্স খালি হয়ে যায়। ঘন্টা খানেকের পর থেকে আর পানীয় জলের বোতল শেষ।

এদিনের সভা পরিচালনা করেন সিপিআই(এম)’র কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার। তিনি স্পষ্ট বলেন, শহর জুড়ে সাধারণ মানুষ সাহায্য না করলে এত কম সময়ের মধ্যে এই সমাবেশ করা সম্ভব হত না। তাঁর বক্তব্যের প্রতিফলন এদিনের সমাবেশের জমায়েতে মিলেছে। জেলা সিপিআই(এম)’র দাবি, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি মানুষ এদিনের সমাবেশে এসেছেন। 

কল্লোল মজুমদারের পাশাপাশি এদিন দেবলীনা হেমব্রম, সীতারাম ইয়েচুরি এবং মহম্মদ সেলিম বক্তব্য রাখেন। 

Comments :0

Login to leave a comment