বিজেপি’র মতাদর্শগত অভিভাবক আরএসএস’র সঙ্গে তৃণমূল সম্পর্ক নিয়ে আগে সিপিআই(এম)-ই কথা বলত। এখন আর সেই নিবিড় সম্পর্কের সিপিআই (এম) একা বলে না। কার্যত সব মহল থেকেই দু’পক্ষের মধ্যে অলিখিত বোঝাপড়া এবং একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করার কথা উঠছে। সর্বোপরি খোদ বিজেপি’র নেতারাই কোনোরকম রাখঢাক না রেখে তৃণমূলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা, যা বাজারে সেটিং হিসাবে পরিচিত, প্রকাশ্যে বলছেন। রাজ্য বিজেপি’র দুই প্রাক্তন সভাপতি যারা আদতে আরএসএস’র লোক কিছুদিন আগেও নির্দ্বিধায় সেটিংয়ের কথা মেনে নিয়েছেন। তথাগত রায় স্পষ্টভাবেই বলেছেন রাজ্যের সকলেই জানেন ও বোঝেন বিজেপি-তৃণমূলে সেটিং আছে। তিনি এটাও বলেছেন যদিও সেটিং না থাকত তাহলে পিসি, ভাইপো দু’জনকেই জেলে থাকতে হতো। দিলীপ ঘোষ অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল দল ও সরকারের কল্যাণেই এরাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী হয়েছে। তৃণমূল যদি সত্যি সত্যি বিরোধিতা করত, সহযোগিতার বদলে অসহযোগিতা করত তাহলে রাজ্যে আরএসএস’র শাখা এতগুণ বেড়ে যেতে পারত না। সব জেলায় বিজেপি’র প্রভাবও এত বাড়ত না। বিশেষ আদিবাসীদের মধ্যে আরএসএস এতটা সক্রিয় হতে পারত না।
রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তরের এক রিপোর্ট অনুযায়ী উত্তরবঙ্গে জেলাগুলিতে স্বতন্ত্রভাবেই শুধু আরএসএস-বিজেপি প্রভাবশালী হয়নি, তৃণমূল-বিজেপি’র মধ্যে আদান-প্রদানের এবং ভাগ বাটোয়ারা প্রক্রিয়াও জোর কদমে শুরু হয়ে গেছে। অর্থাৎ পরিচিত তৃণমূল পরিবারের লোকজনেরা আরএসএস’র বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। আবার আরএসএস’র সঙ্গে থাকা লোকজনদের মধ্যে একটা প্রাচীরের কথা আগে বলা হলেও এখন সেটা উঠে গেছে এখন অবাধে এদিক-ওদিক যাতায়াত চলে।
তৃণমূল নেতারা আগে এই সেটিং স্বীকার করত না। বিশেষ করে ভোটের সময় নকল যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে তারা বোঝানোর চেষ্টা করত বিজেপি’র সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এখন উত্তরবঙ্গে তৃণমূল নেতা-বিধায়করা বলছেন এতে নতুন কিছু নেই। আমাদের লোক বিজেপি’তে যায় আর ফিরে আসে। বিজেপি’র লোকও তৃণমূলে আসে আবার ফিরে যায়। রাজ্যে বাইনারি রাজনীতির রহস্য এখান থেকেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
তৃণমূলের ইতিহাসটাই আরএসএস’র সঙ্গে জড়িয়ে। কংগ্রেস থেকে ভাগ হয়ে তৃণমূল হয়েছে বটে তবে একাজে সবচেয়ে বড় অবদান আরএসএস’র। আরএসএস সবরকমভাবে সাহায্য না করলে তৃণমূলের জন্মই হতো না। তাই মমতা আরএসএস সবচেয়ে দেশপ্রেমী সংগঠনের মর্যাদা দেন। আরএসএস তাঁকে সম্বোধন করে দেবী দুর্গা বলে। বাজপেয়ী সরকারের তিনি মন্ত্রী ছিলেন। একাধিকবার আরএসএস-বিজেপি’র সঙ্গে জোট করে ভোট লড়েছিলেন। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, আন্দোলনে মমতার সঙ্গী ছিল বিজেপি। অতএব বিজেপি’র সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সম্পর্ক আছে এত চুরি দুর্নীতির পর দিব্যি জেলের বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিনিময়ে রাজ্যে আরএসএস-কে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়ে রেখেছে। এরাজ্যে আরএসএস-বিজেপি’র শত্রু তৃণমূল নয়, বামপন্থীরা। তাই বামপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তারা তৃণমূলকে কাজে লাগায়। বাংলায় বিজেপি’র প্রধান লক্ষ্য ক্ষমতা দখলের থেকেও বামফ্রন্টকে ক্ষমতাহীন রাখা।
Editorial
আমি তোমার তুমি আমার

×
Comments :0