Editorial

না আঁচালে বিশ্বাস নেই

সম্পাদকীয় বিভাগ

শেষ পর্যন্ত সু‍প্রিম কোর্টের নির্দেশে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে রাজ্য সরকার। ৩০ মে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে। আদালতের নির্দেশে বাতিল হওয়া প্রায় ২৬ হাজার পদের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ২০ হাজার শূন্য পদ যুক্ত করে মোট ৪৪ হাজার ২০৩টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তবে সরকারটা যেহেতু তৃণমূলের এবং মুখ্যমন্ত্রী যেহেতু মমতা ব্যানার্জি তাই না আঁচালে বিশ্বাস নেই। বিগত ১৪ বছরে কোনও নিয়োগ মসৃণভাবে করতে হয়নি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনিয়মের জটিলতা। ফলে অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রক্রিয়া থমকে গেছে। অনেক নিয়োগ শেষ পর্যন্ত করাই যায়নি। তৃণমূল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার না করলেও সরকারি পদে স্থায়ী নিয়োগের বিরোধী। সরকারি কর্মীদের বড় আর্থিক দায় না নিয়ে অস্থায়ী ঠিকা কর্মী তথা সিভিক নিয়োগ করে যৎসামান্য ম‍‌জুরিতে কাজ করিয়ে নিতে চায়। আবার এই পথে নিয়োগে জটিল সরকারি বিধি মানতে হয় না বলে নিজেদের পছন্দ মতো দলীয় কর্মীদের নিয়োগ করা যায়। এতে সরকারি ব্যয় কমে তেমনি সরকারি-আধা সরকারি বা সরকার পোষিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় আখড়ায় পরিণত করা যায়। আর যদি কখনো স্থায়ী নিয়োগ করতে হয় তবে এমন সব ফাঁকফোকর রেখে দেবে যাতে যথেচ্ছ দুর্নীতি করা যায়। সোজা কথায় মোটা টাকায় চাকরি বিক্রি করা যায় অযোগ্য অপদার্থদের কাছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং পৌরসভায় যেমন হয়েছে। নিয়োগ প্রসঙ্গে এই সরকারের আর একটি কৌশল বার বার সামনে এসেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমন সব অনিয়ম করা হয় যাতে  আদালতে মামলা অনিবার্য হয়ে পড়ে। মামলায় সরকার খুশি। তাতে নিয়োগ অনন্তকাল পিছিয়ে যাবে অথবা বরবাদ হয়ে যাবে। তখন সহজেই বলা যায় সরকার চাকরি দিতেই চায় কিন্তু আদালত ও বিরোধীদের জন্য হচ্ছেনা।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম হয়েছে সরকারি ক্ষেত্রে এমন নজির মেলা ভার। এটা যে অচেতনভাবে হয়েছে বলা যাবে না। কারণ এত রকমের নিয়ম লঙ্ঘন কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আসলে ওএমআর শিট বদলে যোগ্যদের সরিয়ে অযোগ্যদের মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি দিতে গিয়ে দেদার দুর্নীতি করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি পর্বেই অনিয়মের ছড়াছড়ি। আবার দুর্নীতির জন্য যে সব অপরাধমূলক কাজ করা হয়েছে সেগুলি যাতে ধরা না পড়ে এবং কোনও প্রমাণ যেন না মেলে তাই যাবতীয় নথিপত্র নষ্ট করা হয়েছে নির্মমভাবে। অযোগ্যদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা তুলেছে চাকরি বিক্রি করে। ধরা পড়ার ভয়ে যাবতীয় প্রমাণ লোপাট করেছে সচেতনভাবে। এখন চোরের মাথারা ধরা না পড়লেও ছোট, মাঝারি চোররা ধরা পড়েছে। কেউ জেলে, কেউ জামিনে। মুখ্যমন্ত্রী সাধু সেজে বলছেন তিনি কারও চাকরি খেতে চান না, চাকরি বাঁচাতে চান। তাঁর এই সাধু সাজার জেরে অযোগ্যদের সাথে যোগ্যেদেরও চাকরি চলে গেছে। টাকার বিনিময়ে যে অযোগ্যরা চাকরি পেয়েছে তাদের তালিকা সরকার দেয়নি বারবার বলা সত্ত্বেও। সরকার জানে তালিকা দিলেই কোনও অযোগ্য কাকে কত টাকা দিয়েছে প্রকাশ্যে এসে যাবে এবং তারা সেই টাকা তৃণমূল নেতাদের গলায় গামছা দিয়ে আদায় করবে। এমন মহাবিড়ম্বনা থেকে দল ও সরকারকে বাঁচাতে বলি দেওয়া হয়েছে যোগ্যদের। 
এখনো সরকার দুর্নীতির পক্ষেই সওয়াল করে যাচ্ছে। দলের চোরদের বাঁচাতে তিনি তাই দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে তাদের সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরপথে চাকরি পাইয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন। আবারও অনিয়মের দরজা খোলা রাখার ব্যবস্থা করছেন। তেমন হলে ফের মামলা হতে পারে। আবার নিয়োগ প্রক্রিয়া বিশ বাঁও জলে চলে যেতে পারে। সরকার সচেতনভাবে সেই রাস্তায় হাঁটছে না তো? এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।

Comments :0

Login to leave a comment