এবার সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে বুলডোজার চালালেন নরেন্দ্র মোদীরা। একরকম আচমকাই গৃহস্থের রান্নার গ্যাসের দাম সিলিন্ডার পিছু বাড়ানো হলো ৫০ টাকা। ফলে প্রতি সিলিন্ডার এখন থেকে গুণতে হবে ১১২৯ টাকা। আর হোটেল-রেস্টুরেন্টে ব্যবহারের বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দাম বেড়েছে। এক ধাক্কায় ৩৫২ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশে এখন ‘অমৃতকাল’ চলছে। এই অমৃতকালে হোলির প্রাক্কালে দেশবাসীকে বড়সড় উপহার দিলেন মোদীরা। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর গতি দখলের সময় রান্নার গ্যাসের দাম ছিল ৪২০ টাকা। ৯ বছরে কাটতে না কাটতেই সেই গ্যাসের দাম প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে মানুষকে অমৃতকালের ভেলকি দেখাচ্ছেন। এত কম সময়ে কোনও জ্বালানির, এমনকি কোনও নিত্যপ্রয়োজনের জিনিসের দাম এই হারে অতীতে কোনোদিন বাড়েনি। অন্যদেশেও এই সময়কালে এতটা বাড়েনি। আসলে মোদীরা তাদের বন্ধু কর্পোরেটকে কর ছাড় ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা দিতে গিয়ে রাজস্ব যতটা কমবে, সেটা পুষিয়ে নিতে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে বোঝার উপর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন। এমনিতেই টানা উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ধাক্কায় মানুষের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা তার উপর এইভাবে ক্রমাগত জ্বালানির দাম বাড়ানো হলে তাদের টিকে থাকায়ই দায় হয়ে উঠছে। গ্যাসের দামবৃদ্ধি শুধু পারিবারিক ভাড়ারেই টান পড়বে না, তৈরি খাবারের দামও বাড়বে অনেকটা। যেসব খাদ্যপণ্য তৈরি হয় জ্বালানি গ্যাস ব্যবহার করে তার সব কিছুরই দাম বাড়বে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির চাপ কমার বদলে বাড়তেই থাকবে।
একটা মজার ব্যাপার হলো মোদীরা যখন-তখন রান্নার গ্যাস বা জ্বালানি তেল (পেট্রোল-ডিজেল-কেরোসিন ইত্যাদি) বাড়ান না। বাড়ান কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যের ভোটের সময়ের হিসাব করে। সামনে ভোট থাকলে দাম বাড়বে না। আবার ভোটের গুরুত্ব বুঝে ভোটের আগে যৎকিঞ্চিৎ দাম কখনো সখনো কমানোও হয়ে থাকে। তারপর ভোট মিটলেই চটজলদি দাম বাড়ানোর হুলিয়া জারি হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনের ভোট নির্ঘণ্টের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রেখে চলে মোদী সরকারে তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা। ফলে কখনও দাম বাড়াতে বছর কেটে যায় আবার কখনও ছ’মাস কাটতে না কাটতেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। দাম বাড়ানোর জন্য প্রতিবারই একই ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে জানালো বিশ্ব বাজারে দাম বাড়ছে তাই দেশেও বাড়াতে হচ্ছে। পাশাপাশি আর একটা ভাঙা রেকর্ডও বাজানো হয় যে সরকার কিছু করছে না তেল কোম্পানিগুলিই তাদের লোকসান সামলাতে দাম বাড়ছে। পুরোটাই বাজে কথা। কোনও তেল কোম্পানির ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে মোদীর নির্দেশ ছাড়া দাম বাড়াবে। অজুহাত যাই হোক উদারনীতির শর্ত মেনে কোনও ভরতুকি দেওয়া হবে না এটাই মোদী সরকারের ঘোষিত নীতি। ফলে দাম যত খুশি বাড়লেও সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। একমাত্র বাড়ানোর সময়টা ঠিক করে দেবে।
এবার দাম বাড়ানো হলো ৮মাস বাদে। প্রথমে গুজরাট, হিমাচলে ভোট। তারপরে ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ভোট। ফলে ৮মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। ভোট মিটেছে। অতএব দাও বাড়িয়ে। ঠেলা বুঝবে জনগণ, সরকারের কী? মোদীরা বড়াই করেন উজ্জ্বলা প্রকল্প নিয়ে। তাতে সাড়ে নয় কোটি গ্রাহককে ২০০ টাকা ভরতুকিতে বছরে ১২টা সিলিন্ডার দেওয়া হয়। প্রকল্প চালু হবার পর থেকে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ফলে ২০০ টাকা ভরতুকি কোনও কাজেই আসে না। বিনামূল্যে গ্রাহক হবার পর প্রথম প্রথম কয়েকটা সিলিন্ডার কিনলেও এখন অনেক গ্রাহক সারা বছরে একটা সিলিন্ডারও নেন না। ১২ শতাংশ একটা সিলিন্ডার নেন, দু’টো সিলিন্ডার নেন ১০ শতাংশ অর্থাৎ, গরিব মানুষ কাঠ-পাতার পুরানো জ্বালানিতে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।
এবার ৫০ টাকা বাড়ার পর দেখা যাবে অর্ধেক গ্রাহকই সিলিন্ডার কিনতে পারছেন না। অন্যরা বছরে ১২টার জায়গায় পাঁচ-ছ’টার বেশি কিনতে পারবে না। একদিনে জিনিসের দাম বাড়ছে, বিশেষ করে খাদ্য দাম বাড়ছে অস্বাভাবিক হারে, অন্যদিকে খাবার তৈরির জ্বালানির দাম চলে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবেন। মানুষের প্রতি ন্যূনতম দরদও মোদীদের থেকে থাকে তাহলে এখনই প্রত্যাহার করতে হবে বর্ধিত দাম।
Comments :0