বয়স তাঁর এখন ৪১। এই বয়সে ফুটবলার তো বটেই, প্রায় সব খেলোয়ারই চলে যান অবসরে। কিন্তু যারা এই বয়সেও খেলা চালিয়ে যান, তাদের অধিকাংশরাই খেলেন লোয়ার ডিভিশন কোনো লীগে। উঁচু লেভেলের ফুটবলের ধারেকাছে চল্লিশোর্ধ্ব কোনো খেলোয়ারকে দেখা প্রায় বিরল, অসম্ভব বললেও ভুল হবে না।
কিন্তু একজন আছেন এই ইউরো কাপে। কেপলার ল্যাভেরান লিমা ফেরাইরা। যাকে ফুটবল দুনিয়া চেনে ‘পেপে’ নামে। বর্ণাঢ্য এক ক্যারিয়ার আছে তার। ক্যারিয়ারে জিতেননি এমন কোনো ট্রফি নেই ফুটবল বিশ্বকাপ ছাড়া। চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা লিগা, পর্তুগালের হয়ে ইউরো, নেশন্স লীগ। সাফল্যে পরিপূর্ণ এক ঈর্ষনীয় ক্যারিয়ার। তর্কসাপেক্ষে পর্তুগালের সর্বকালের সেরা সেন্টারব্যাক।
কিন্তু এরপরও চল্লিশ পেরিয়েও ফুটবলকে তিনি ছাড়তে পারেননি। নিজেকে এমনভাবে ধরে রেখেছেন, যেন উঁচুদরের ফুটবলে এখনো তার প্রয়োজন থাকে। এজন্যই তিনি এফসি পোর্তোর হয়ে এই বয়সেও ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ লীগে খেলে যাচ্ছেন। এজন্য তাকে দেখা যায় চ্যাম্পিয়নস লীগেও। এবং এজন্যই এখনো পর্তুগালের হয়ে তিনিই স্টার্টিং সেন্টারব্যাক। ইনাসিও, সিলভার মতো তরুণদের চাইতে কোচ রবার্তো মার্টিনেজ পেপের উপরই ভরসা রাখার সাহস পান।
এটা সম্ভব হতো না, যদি পেপের মানসিক দৃঢ়তা উঁচু পর্যায়ের না হতো। যদি ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা অনেক বেশি না হতো। চাইলেই অনায়াসে পারতেন কয়েক বছর আগেই বুটজোড়া তুলে রেখে এবারের ইউরো ঘরে বসে দেখতে, আরাম করে, কিন্তু তার মানসিকতা এরকম না। এজন্য এই বয়সেও ইউরো ঘরে বসে থেকে দর্শক হিসেবে দেখছেন না, বরং মাঠে ফুটবলার হিসেবে খেলছেন।
এবং এই জন্যই যখন ম্যাচের ৮০ মিনিটে পেপে মাঠ থেকে উঠে যান, তখন প্রতিটা দর্শক দাঁড়িয়ে তাকে স্ট্যান্ডিং অভিয়েশন জানায়। ঘরে বসে খেলা দেখা ফুটবল প্রেমীরাও নিজের অজান্তে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে যায়। কারণ, এরকম ফুটবল অন্ত প্রাণ মানুষের জন্য সম্মান আপনাআপনিই মন থেকে বেরিয়ে আসে।
এই ইউরোতে তুরস্কের বিপক্ষে পাঁচ মিনিটের মাথায় বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার দক্ষতা, গ্যালারি ভর্তি দর্শকের সাধুবাদ কুড়িয়েছিল। তার পারফরম্যান্স নিখুঁত: সময়জ্ঞান, দৃঢ়তা এবং বোঝাপড়ার এক আশ্চর্য মিশেল। চারটি অনবদ্য ডিফেন্স, সাতটি ক্লিয়ার এবং ৯৭ শতাংশ নিখুঁত পাস- ৪১ বছর এবং ১১৩ দিন বয়সেও- স্বাভাবিকভাবেই দলের কোচের মুখ থেকে “ওর ম্যাচ রিডিং, লড়াকু মনোভাব পর্তুগিজ ফুটবল এবং সাধারণভাবে ফুটবলের জন্য একটি দুর্দান্ত, বিস্ময়কর উদাহরণ,’’ প্রমুখ শব্দবন্ধ আদায় করে নেয়।
তুরস্কের বিরুদ্ধে এই জয়টি ছিল দেশের হয়ে পেপের ১৩৮ তম ম্যাচ। ২০০১ সালে দেশের জার্সিতে তাঁর অভিষেক ঘটে। পকেটে মাত্র ৫ ইউরো নিয়ে প্রথম এসেছিলেন এক অজানা ভবিষ্যতকে সামনে রেখে। ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়ি ছেড়ে কখনও কোথাও যাননি।
                                        
                                    
                                
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
Comments :0