২০১৫ থেকে বন্ধ প্রাপ্য সঞ্চয় ও ত্রান প্রকল্প। ২০২৩ সালে এসে চালু হলো মৎসজীবী বন্ধু। একজন মৎসজীবী মারা গেলে তাঁর পরিবার পাবে সরকারি সাহায্য। কিন্তু বেঁচে থাকতে যেই সাহায্য সরকার করতো তা বন্ধ হয়েছে আগেই।
মৎসজীবী বন্ধু নামে নতুন ‘জনমুখি’ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। কিন্তু এই প্রকল্প কাদের জন্য? অর্থ প্রতিমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা অনুযায়ী, মৎসজীবীদের অকাল মৃত্যু বা স্বাভাবিক মৃত্যূ হলে পরিবারকে এককালিন ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
মানে এক বছরে ১৫০০ জন মৎসজীবী যদি মারা যান তবে সরকারের এই পুরো টাকা খরচ হবে। রাজ্যে মৎসজীবীর সংখ্যা কতো? দক্ষিণবঙ্গ মৎসজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিলন দাসের কথায় আনুমানিক ৩০ লক্ষ।
সরকারের এই নতুন প্রকল্পের সুবিধা কারা পাবেন? যাদের মৎসজীবী কার্ড রয়েছে। যা রাজ্য সরকার দাবি করেছে যে তারা দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে মৎসজীবীদের এই পরিচয় পত্র বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কতো পরিচয় পত্র বানানো হয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান সরকার আজও পর্যন্ত দেখাতে পারেনি।
মিলন দাস দাবি করেছেন এই কার্ডের ক্ষেত্রে দূর্নীতি হয়েছে। মৎসজীবী নয় এমন ব্যাক্তিকে এই কার্ড পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় খবর নিয়ে আমরা জানতে পেরেছি দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প থেকে এমন কিছু লোককে মৎসজীবী পরিচয় পত্র দেওয়া হয়েছে যাদের সাথে জলের এবং মাছের কোন সম্পর্ক নেই।’’
তাহলে এক্ষেত্রেও কি আবাস যোজনার মতো একটা দূর্নীতির ছায়া দেখা যাচ্ছে। আসল মৎসজীবী পরিবারের বদলে ভুয়ো মৎসজীবী পরিবার ক্ষতিপুরনের টাকা পাবে না তো, এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
উল্লেখ্য গত বছর জুলাই মাসে আলিপুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে ‘তৃণমূল ক্ষমতায় না থাকলে কোন প্রকল্পও থাকবে না।’ কিন্তু তার অমলেই রাজ্যে প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে একটি প্রকল্প। যার নাম প্রাপ্য সঞ্চয় ও ত্রান প্রকল্প।
২০১৫ সাল থেকে রাজ্যে বন্ধ মৎসজীবীদের জন্য চলতে থাকা প্রাপ্য সঞ্চয় ও ত্রান প্রকল্প। ১৯৯৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এই প্রকল্প চালু করা হয়। বছরে দুমাস যখন মাছ চাষ বন্ধ থাকে তখন এই প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু টাকা মৎসজীবীরা পান। যার ফলে সেই সময় তাদের সংসার চালাতে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু তৃণমূল আমলে রাজ্যে একাধিক প্রকল্প চালু হলেও বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রাপ্য সঞ্চয় ও ত্রাণ প্রকল্প।
প্রতি বছর দুমাস মাছ প্রজনন এবং বংশবৃদ্ধির জন্য যখন চাষ বন্ধ থাকে তখন এই প্রকল্পের মাধ্যে মাসে ৪৫০০ টাকা মৎসজীবীরা পেয়ে থাকেন। এই ৪৫০০ টাকার মধ্যে ১৫০০ টাকা থাকে মৎসজীবীদের জমানো টাকার একটা অংশ। আর বাকি ৩০০০ টাকায় অর্ধেক অর্ধেক ভাগ থাকে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের। এক কথায় বলা যেতে পারে দুই মাস আয় না থাকা মৎসজীবীদের অর্থীক সাহায্য করা হতো সরকারের পক্ষ থেকে। আর এই প্রাপ্য টাকা পাওয়ার জন্য যেই ফর্ম ফিলাপ করতে হতো মৎসজীবীদের তাও ২০১৫ থেকে বন্ধ রয়েছে।
তবে কি কারণে কেন এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে তার কোন উত্তর সরকারের কাছে নেই। বাজেটেও তার কোন উল্লেখ নেই। এমনকি এই প্রকল্প যে বন্ধ হতে চলেছে তার কোন বিজ্ঞপ্তিও সরকার কোনদিন প্রকাশ করেনি কোনদিন। যার ফলে গোটা বিষয়টি নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন মৎসজীবীরা। হঠাৎ করে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছোট মৎসজীবীদের পড়তে হচ্ছে চরম অর্থীক সঙ্কটে।
মৃত্যুর পর পরিবার যাতে ঠিক থাকে তার জন্য প্রকল্প ঘোষনা করছে সরকার। কিন্তু পরিবার নিয়ে একজন মৎসজীবী যাতে সুস্থ ভাবে বাঁচতে পারে সেই রাস্তা প্রায় সাত বছর আগেই বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার।
এই প্রকল্প যে শুধু এই রাজ্যেই ছিল তা নয়। গোটা দেশের প্রতিটা রাজ্যে এই ধরনের প্রকল্প রয়েছে। তাহলে কি সেই রাজ্য গুলিতেও ধাক্কা খেয়েছে এই প্রকল্প? না। কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো দক্ষিণী রাজ্য গুলিতে এই প্রকল্প যথারীতি চলছে। উল্টে সেখানে বাড়তি টাকা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মৎসজীবীদের দেওয়া হচ্ছে।
প্রাপ্য সঞ্চয় ও ত্রান প্রকল্প চালু করার দাবিতে এবং মৎসজীবীদের মাসিক ৫০০০ টাকা অর্থীক সহায়তার দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৎস আরিকারিকের কাছে স্মারকলিপিও জমা করেছে মৎসজীবীদের সংগঠন। কিন্তু বছর ঘুরলেও কোন কাজ হয়নি।
উল্লেখ্য রাজ্য সরকারের মৎসজীবী বন্ধু’র আগে থেকে মৎসজীবীদের জন্য একটি প্রকল্প রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। তার নাম প্রধানমন্ত্রী মৎস সম্পদ যোজনা। দূর্ঘটনায় যদি কোন মৎসজীবী মারা যান তাহলে তার পরিবারকে এককালিন পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরন দেওয়ার কথা প্রকল্পে বলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রকল্প বলছে দুর্ঘটনা হোক বা স্বাভাবিক মৃত্যু দুই ক্ষেত্রেই ক্ষতিপুরন পাবে পরিবার।
সাধারণত মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার ডুবে বা সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে বেশির ভাগ মৎসজীবী মারা যান তাহলে সেই ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার কি দুটি প্রকল্পেরই টাকা পাবে? না দুই লক্ষ টাকা দিয়ে দায় সারবে সরকার? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Comments :0