মঙ্গলবার গাজোল কলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভায় বিভিন্ন প্রকল্পের উপভোক্তাদের নিয়ে আসার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় অন্ততপক্ষে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেক। আহতদের কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সোমবার রাতে গাজোলের পান্ডুয়াতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃতদের মধ্যে দুজন মহিলা। এরা হলেন সোহেলী হাঁসদা, কালিয়াগঞ্জ ও নিয়তি সরকার, মালদা। বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। আহতদের মধ্যে চিন্তামণি চমৎকার গার্লস হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী
ঈশিতা দাস গুরুতর আহত। তার মাথা ও হাতে চোট লেগেছে। সিটি স্ক্যান করা হবে।
মঙ্গলবার মালদা এবং দুই দিনাজপুরের একাধিক উপভোক্তার হাতে সরকারি বিভিন্ন পরিষেবা তুলে দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সোমবার দুই দিনাজপুর ও মালদার বিভিন্ন জায়গা থেকে সেই সমস্ত উপভোক্তাদের নিয়ে একটি বাস আসছিল গাজোল কলেজ মাঠে। মূলত তারা কোন দিক দিয়ে মঞ্চে উঠবেন, কোন দিক দিয়ে নামবেন, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে মহড়া চালানোর কথা ছিল। কিন্তু পান্ডুয়া বাসস্ট্যান্ডে রাত নটা নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পডে উপভোক্তা ভর্তি বোঝাই বাসটি। একটি ওমনি ভ্যান এবং একটি স্কুল গাড়িকে ধাক্কা মেরে বাসটি নেমে যায় একটি পুকুরে। দুর্ঘটনার বিকট আওয়াজ পেয়ে স্থানীয় যুবকেরা ছুটে এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিরাপত্তার জন্য পান্ডুয়া হাইস্কুলে ছিল পুলিশ বাহিনী। সেই সমস্ত পুলিশরাও এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় একে একে বাস থেকে উদ্ধার করা হয় আহত যাত্রীদের। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় জেলা পুলিশ সুপারসহ বিশাল পুলিশ বাহিনী।
জানা গেছে, বাসে প্রায় ৩৫ জন উপভোক্তা ছিলেন। কমবেশি সকলেই আহত হয়েছেন। সূত্রের খবর, এদের মধ্যে প্রায় ৩২ জনকে মালদা মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থলেই দুইজন মহিলা মারা গিয়েছেন। বাসের কম বেশি সকলে আহত হয়েছেন। সকলকেই প্রথমে পান্ডুয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং পরে সেখান থেকে মালদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে পুকুরে জল কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়েনি। গাড়িতে থাকা আহত একজন উপভোক্তা জানান, মঙ্গলবার তাঁর হাতে কিষান ক্রেডিট কার্ড তুলে দেওয়ার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। গাজোল কলেজ মাঠের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন উপভোক্তার হাতে সরকারি পরিষেবা প্রদান করতেন। মঞ্চের কোন দিক দিয়ে তারা উঠবেন, বা কোন দিক দিয়ে নামবেন, মঞ্চেই বা কিভাবে থাকতে হবে সেইসব বিষয় নিয়েই মহড়া দেওয়ার জন্য তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল গাজোলে। চালক খুব জোরে বাসটি চালাচ্ছিলেন। কয়েকজন চালককে সাবধানও করছিলেন। কিন্তু চালক কারো কথা শোনেনি। ঘটনাস্থলে পরপর দুটি গাড়িকে ধাক্কা মারে বাসটি। এরপর পুকুরে নেমে যায়। কোনরকমে বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ বাসের ভেতর থেকে বাকি আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঘটনা ঘটার প্রায় সাথে সাথেই পান্ডুয়া পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশ বাহিনী। নিয়ে আসা হয় তিনটি ক্রেন। ক্রেনের সাহায্যে বাসটিকে পুকুর থেকে তোলা হয়। দুর্ঘটনার জেরে বেশ কিছুক্ষণ জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস এবং সরিয়ে নেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঘটনায় মৃতদের দুজনের পরিচয় এখনো পর্যন্ত জানা যায় নি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়নি। দুর্ঘটনার জেরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে।
বাসটিতে প্রায় ২৪জন ছাত্রীকে ঐ রাতে অভিভাবক ছাড়াই তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। এই ব্যাপারে অভিভাবকরা ও স্কুল কর্তৃপক্ষ জেলা শাসককে দায়ী করছেন যদিও কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। মুখ্যমন্ত্রী জেলা সফরে এলেই এভাবে লোক জড়ো করা হয়। গতকাল রাতেই দুর্ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন সিপিআই (এম) নেতা প্রণব চৌধুরী, দোলন চাকী, অনিমেষ সিনহা সহ পার্টি কর্মীরা। তাঁরা অভিযোগ করেন তাঁদের হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি অভিভাবকদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সহ আব্দুর রহিম বক্সী, কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী সহ নেতাদের এবং পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এদের সামলাতে গিয়ে চিকিৎসায় চরম অবহেলা ও গাফিলতি হয়েছে। কেউ কেউ বেসরকারী হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
Comments :0