GANASHAKTI EDITORIAL FOR 20 FEBRUARY

কমিশনের দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন

সম্পাদকীয় বিভাগ

মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে নির্বাচন কমিশনকে ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাস’ বলে মন্তব্য করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ইশারাতেই কাজ করে কমিশন। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে এমন অভিযোগ শুধু শিবসেনার নয়। সমস্ত বিরোধী দলই মনে করে মোদী জমানায় নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি সরকারের কবজায় চলে গেছে। সরকারের ইচ্ছা অনিচ্ছারই প্রতিফলন ঘটে কমিশনের পদক্ষেপে।


নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন স্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সরকারের কাছে কমিশনের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। কমিশন একমাত্র দায়বদ্ধ সংবিধানের কাছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার একটি অন্যতম ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংগঠিত করা অর্থাৎ দেশের প্রতিটি ভোটারের স্বাধীন মতামতের ভিত্তিতে সরকার নির্বাচনের সর্বময় ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছে সংবিধান। সরকার বা শাসক দলের কোনও প্রভাব নির্বাচন কমিশনে গ্রাহ্য নয়। 

নির্বাচন পর্বে কমিশনের চোখে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য যে কোনও ভোটারের অধিকার মর্যাদা এক। তাই কমিশনের কাছে কারো আলাদা কোনও গুরুত্ব নেই। আদর্শ নির্বাচন বিধি চালু হয়ে যাবার পর বিধি লঙ্ঘনের মাপকাঠি প্রধানমন্ত্রী বা শাসকদলের নেতার ক্ষেত্রে আলাদা হয় না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে মোদী জমানায় নির্বাচন কমিশনের চোখে প্রধানমন্ত্রী এবং শাসক দলের নেতারা আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছেন। বিধি লঙ্ঘন করলেও তারা ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। এমনকি শাসকদলের বৃহত্তর সুবিধার কথা বিবেচনা করে নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তাই বিরোধী দলসমূহকে বার বার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনার পথে যেতে হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের কাজকর্মে এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে তারা কৌশলে এবং সচেতনভাবে আর এস এস-বিজেপি’র হয়ে কাজ করছে। বিজেপি-কে সুবিধা করে দিতেই তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।


গত লোকসভা নির্বাচনের সময় দেখা গেছে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে একের পর এক বিধি লঙ্ঘন করলেও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি কমিশন। বালাকোটে সেনা অভিযান, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা থেকে শুরু করে বিধি বহির্ভূত একাধিক বিষয় প্রচারে এনেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা প‍‌ড়ে কমিশনে। কিন্তু কমিশন পুরোপুরি ছাড় দেয় প্রধানমন্ত্রীকে। ভাবখানা এমন প্রধানমন্ত্রী সব বিধি নিষেধের উর্ধ্বে। তিনি যা খুশি তাই বলতে পারেন এবং করতেও পারেন। প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কড়া অবস্থান নিলেও অপর দুই কমিশনার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই অবস্থান নেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে প্রধানমন্ত্রী ছাড় পেয়ে যান। এই ঘটনার জেরে অবসরের পর সেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে নামানো হয়েছিল। বার্তা স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রী তথা শাসক দলের স্বার্থে ঘা দেওয়া যাবে না। নির্বাচন কমিশনকে প্রধানমন্ত্রীর মরজি অনুযায়ীই চলতে হবে।

কয়েক মাস আগে গুজরাট নির্বাচনের সময়ও ন্যক্কারজনকভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে কাজ করেছে কমিশন। একই সঙ্গে একাধিক রাজ্যে ভোট হবার কথা হলেও গুজরাটের নির্বাচনের সূচি ঘোষণা হয় কয়েকদিন পরে। কারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজ্যের সর্বত্র কয়েক ডজন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য প্রকল্প শিলান্যাস বা উদ্বোধন শেষ করে উঠতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। তাই প্রধানমন্ত্রীকে সেই সুযোগ করে দেবার জন্য গুজরাটের ভোটের দিন ঘোষণা হয় কয়েকদিন বাদে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প ঘোষণার কাজ শেষ হবার পর নির্বাচন ঘোষণা করে কমিশন। কয়েকদিন আগে ত্রিপুরার নির্বাচনে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর বদলে বিজেপি শাসিত আসাম ও গুজরাটের পুলিশ পাঠিয়েছিল কমিশন। 

সর্বশেষ বিজেপি’র কূটকৌশ‍‌‍‌লে শিবসেনার দল ভাঙিয়ে বেশিরভাগ বিধায়কদের আলাদা করে তাদের দিয়ে সরকার গঠন করিয়েছে মোদী শাহরা। নির্বাচন কমিশন বিজেপি’র ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিক্ষুদ্ধ শিবসেনা গোষ্ঠীকেই মূল শিবসেনা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। বিরোধীদের মতে বিজেপি’র হয়ে এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হত্যা করার নামান্তর। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন থাকা সত্ত্বে তড়িঘড়ি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা শাসক দলের হয়ে অতি সক্রিয়তারই প্রমাণ। কমিশনের প্রতিটি পদক্ষেপ প্রমাণ করে দিচ্ছে তারা কেন্দ্রীয় সরকারের পুতুলে পরিণত হয়েছে। শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়। সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকেই করায়ত্ত করে মোদী সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তিটাই ধসিয়ে দিচ্ছেন। সিবিআই-ইডি যেমন সরকারের জো হুজুরে হয়ে গেছে তেমনি সংসদকেও নিজেদের মরজিমাফিক চালাচ্ছে। এবার সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার ব্যবস্থাকেও সরকারের অনুগত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment