CPIM RALLY IN PURULIA

তৃণমূল-বিজেপি হটাতে জনতার ঐক্যের আহ্বান সেলিমের

রাজ্য জেলা

CPIM TMC AWAS CORRUPTION RURAL BENGAL WEST BENGAL POLITICS  BJP BENGALI NEWS

মঙ্গলবার পুরুলিয়ার রাসমেলা ময়দানে জনসভার ডাক দিয়েছিল সিপিআই(এম) পুরুলিয়া জেলা কমিটি। ভিড়ে ঠাসা সেই সভা থেকে তৃণমূল এবং বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করলেন মহম্মদ সেলিম। 

এদিনের সভায় মহম্মদ সেলিম ছাড়াও অমিয় পাত্র, সুদীপ সেনগুপ্ত, দেবলীনা হেমব্রম প্রমুখ সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সভা পরিচালনা করেন জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়। 

সভায় মহম্মদ সেলিম বলেন, রাত পোহালেই কেন্দ্রীয় সরকার বাজেট ঘোষণা করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ জানেন, বাজেট ভাষণে নির্মলা সীতারামন কর্মসংস্থান, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, ওষুধে জিএসটি কমানো, পেট্রল ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম কমানোর কথা বলবেন না। কোনও মানুষ মনে করে না যে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ভাষণে বাসের ভাড়া, রেলের ভাড়া কমানোর কথা বলা হবে। 

কেন্দ্রীয় সরকারের চরিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে সেলিম বলেন, আসলে এই সরকার চলছে কেবলমাত্র আম্বানি আদানিদের সুবিধা করে দিতে। ২০১৪ সাল থেকে ভারতের জল, জমি, জঙ্গল, খাদান সহ সমস্ত সম্পদ আম্বানি আর আদানির হাতে তুলে দেওয়ার প্রকল্প নিয়েছে মোদী সরকার। প্রত্যেক সরকারের লেজ ধরেই একজন করে পুঁজিপতি উদয় হন। কংগ্রেসের সময় বিড়লা ইত্যাদিরা ছিলেন। মমতার সঙ্গে অ্যালকেমিস্ট, সারদা এরা এলো। আর আদানির বিমানে চড়ে দিল্লি পৌঁছলেন নরেন্দ্র মোদী। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার এসবিআই, এলআইসি, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়ামের মতো সংস্থাকেও বেচে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু লালঝান্ডার ইউনিয়নের চাপে সেগুলি করে উঠতে পারেনি। 

সেলিম বলেন, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ফি বছর ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল অবধি ১৬ কোটি বেকারের চাকরি হওয়ার কথা। ১৬ কোটি বেকার চাকরি না পাক, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির জন্য কয়েক কোটি মানুষের কাজ গিয়েছে। মোদী বলেছিলেন ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সমস্ত বাড়ি পাকা হবে। সমস্ত বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছবে, শৌচাগার তৈরি হবে সমস্ত বাড়িতে। আমরা জানি এর কোনওটাই হয়নি। 

তৃণমূলকে নিশানা করে সেলিম সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, এরাজ্যের তৃণমূল সমস্ত সরকারি প্রকল্প থেকে টাকা খেয়েছে। একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মাত্রাছাড়া দুর্নীতি হয়েছে। আদিবসী, তফশিলী, এসএসকে, এমএসকে, ভোকেশনাল ট্রেনিং- সমস্ত ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। এই দুর্নীতি আজ থেকে শুরু হয়নি। বিজেপি ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায়। এরা আজ জানতে পারল যে তৃণমূল গ্রামে চুরি করছে? এতদিন কেন্দ্রীয় দল তদন্ত করতে আসেনি কেন? আসলে গ্রামে গ্রামে লালঝান্ডা জেগেছে। তারফলে তৃণমূল চাপে পড়েছে। সেই চাপ কমাতেই কেন্দ্রীয় দল গ্রামে গ্রামে আসছে। 

এর পাশাপাশি তিনি যোগ করেন, আসলে তৃণমূল বিজেপির লড়াইয়ের গোটাটাই লোক দেখানো। চিটফান্ড নিয়ে এখন আর কোনও কথা হয়? লোকসভা কিংবা বিধানসভার গোটাটাই তো তৃণমূল নয়ত বিজেপি। কিন্তু এদের কাউকে সারদা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে শুনেছেন? ২০১১ সালের আগে সারা দুনিয়ার দালালরা এক জায়গায় এসে বলেছিল লাল হঠাও দেশ বাঁচাও। সেই ডাকে মাওবাদী থেকে শুরু করে জামাত, মুসলিম লিগ সবাই সাড়া দিয়েছিল। তারপর লাল হঠল। কিন্তু দেশ বাঁচল না। তাই দেশ বাঁচাতে লালঝান্ডা ফের প্রস্তুত হচ্ছে। সেপ্টেম্বর থেকে গ্রাম জাগানো শুরু হয়েছে। এবং তাতেই তৃণমূল এবং বিজেপি চাপে পড়ে গিয়েছে। এরপর যখন গ্রামের মানুষ মশাল নিয়ে রাস্তায় নামবেন তখন এদের কি হবে? 

আরএসএস মমতাকে দেবী দুর্গা বলেছিল। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন সেলিম বলেন,  পৌরাণিক দুর্গার দশহাতের মতো মমতার দশহাতেও মাওবাদী, জামাত, হেফাজত, মুসলিম লিগ, সুদীপ্ত সেন, আমেরিকার টাকা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিল। মমতাকে লাল নিকেশ করার সুপারি দিয়েছিল আরএসএস। আর সেই কন্ট্রাক্টের কোটি কোটি টাকার জোরে মমতার একনম্বর দালাল শুভেন্দু অধিকারী বলেছিল বাংলার কোথাও লালঝান্ডা থাকবে না। আসলে শুভেন্দু ভুলে গিয়েছিল, স্বাধীনতার আগে থেকে শ্রমিক, কৃষক, আদিবাসী, মহিলা, ছাত্র, যুব, সশস্ত্র, গণআন্দোলনের জোরে তৈরি হয়েছে লালঝান্ডা। তাই আজ শুভেন্দু একদিকে তৃণমূলের ঝান্ডা দিয়ে মোদী অমিত শাহ’র জুতো পরিষ্কার করছে, আর অপরদিকে রাজ্যের গ্রামে গ্রামে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছে লালঝান্ডা। ওরা ভেবেছিল হামলা, মামলা আর টাকার গামলা নিয়ে কিছু বিশ্বাসঘাতককে কিনে নিতে পারলেই বামপন্থীদের শেষ করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটা হয়নি। আর হয়নি বলেই মমতা ডেকে পাঠিয়ে অমিত শাহ জিজ্ঞেস করছে, ‘‘ বাংলায় এত লালঝান্ডা বাড়ছে কেন?’’ মমতা উত্তর দিতে পারছে না। পারছে না বলেই তৃণমূল আর বিজেপি নিয়ম করে রোজ সিপিআই(এম)কে গালাগাল করছে। 

এদিন সেলিম বলেন, আজ তৃণমূলের গোটা দল বুঝে গিয়েছে মমতা নিজের ছাড়া কারোর নয়। বিপদের সময় পার্থকে ঝেড়ে ফেলেছে, নম্বর ব্লক করে দিয়েছে। যতদিন তুমি টাকা দিতে পারবে ততদিনই তুমি ভালো। মুকুল রায় থেকে শুরু করে পাড়ার মস্তানরা সবাই এটা বুঝে গিয়েছে। মমতা সভা থেকে বলেছে পুরুলিয়ার চাকরির কোটা শুভেন্দু নিয়ে গিয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট, কালীঘাটে বসে মমতা আর অভিষেক মিলে চাকরির কোটা ঠিক করেছে। নিয়োগ দুর্নীতির আঁতুরঘর হল কালীঘাট। কিন্তু তারপরেও সেখানে খোঁড়াখুড়ি না করে বিজেপি আরএসএস বলছে কুতুব মিনারের তলায়, তাজমহলের তলায় খুঁড়তে হবে। 

শুভেন্দুর বিজেপি আর মমতার তৃণমূলের মধ্যে কোনও তফাৎ নেই। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুইদল মিলে দাঙ্গা করেছে। আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় আর ব্যারাকপুরে অর্জুন সিং দাঙ্গা করে মানুষ মারল। মমতা বলল ওরা দাঙ্গাবাজ। কিন্তু দাঙ্গাবাজদের শাস্তি না দিয়ে নিজের দলে তাঁদেরকে পুষে চলেছে মমতা ব্যানার্জি। এখন লালঝান্ডা আবার শক্তি বাড়াতে শুরু করেছে। তাই আবার নতুন করে দুইদল নিজেদের মধ্যে সেটিং করা শুরু করেছে। সংসদ কিংবা বিধানসভায় দলবদল করলে সদস্যপদ খারিজ হয়। এমনটাই নিয়ম। কিন্তু তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা, কিংবা বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা সাংসদ বিধায়কদের কারোর সদস্যপদ খারিজ হয়নি। দুই সভার স্পিকার খারিজ করবে কি করে, দলতো একটাই। 

সভা থেকে পার্টির রাজ্য সম্পাদক আহ্বান জানান, দেশ এবং রাজ্যকে বাঁচাতে মোদীর লুঠ এবং দিদির লুঠের বিরুদ্ধে লড়তেই হবে। যাঁরা এদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে, যেমন আনিস খান, তাঁদের এরা খুন করে। আর মীনাক্ষি, নৌশাদদের মতো সাহসী যুব সমাজকে জেলে পোড়ে। 

কিন্তু বেশিদিন এইসব করে তৃণমূল সরকার চালাতে পারবে না। বিজেপি তো পশ্চিমবঙ্গে ছিল না। বিজেপিকে হাতে ধরে এরাজ্যে কে আনল? সিদ্দিকুল্লা, ইমাম বরকতির মতো দালালদের সাহায্যে আরএসএস তৃণমূল সেজে এরাজ্যে ঢুকেছে। 

সভায় তিনি বলেন, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বলছেন, সিবিআই সারদা তদন্ত ঠিকভাবে করছে না। এদের পাল্টাতে হবে। একইভাবে কাজ না করা পঞ্চায়েত মেম্বার থেকে শুরু করে এমএলএ এমপিদেরও পাল্টাতে হবে। সেই কাজ পঞ্চায়েত থেকে শুরু করতে হবে। তৃণমূলকে বোঝাতে হবে এটা ২০১৮ সাল নয়, এটা ২০২৩ সাল। এখানে নমিনেশনে বাধা দিলে তারফল ভালো হবে না। কিন্তু সেই কাজের জন্য সমস্ত রাজ্যের মানুষকে এককাট্টা করতে হবে। মানুষের ঐক্য তৈরি না হলে তৃণমূল-বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। আর তৃণমূল বিজেপি ক্ষমতা থেকে সরলেই গ্রামের মানুষ ঘরের টাকা, ১০০ দিনের কাজের টাকা, বিধবা ভাতার টাকা, নিজের হকের টাকা আদায় করতে পারবে। 

Comments :0

Login to leave a comment