বামফ্রন্ট সরকারের ভূমিসংস্কারে ভূমিহীন মানুষের হাতে দেওয়া হয়েছিল পাট্টা। তৃণমূল সরকারের শাসনে এখন পাট্টার বৈধতা উড়িয়ে জমি দখল চলছে। এমন জমি হাঙরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন শিলিগুড়ি মহকুমার পাঁচকেলগুড়ির বাসিন্দারা।
রবিবার বিকেলে খাপরাইল মোড় থেকে পাঁচকেলগুড়ি যাওয়ার রাস্তায় পাঁচকেলগুড়ি ক্লাবের পাশে সিপিআই(এম) চম্পাসারি-পাথরঘাটা এরিয়া কমিটির ডাকে জনসভা হয়েছে। প্রতিরোধ জারি রাখার আহ্বান জানিয়ে জনসভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) নেতা অশোক ভট্টাচার্য এবং জীবেশ সরকার।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত জমির দালালরা পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের জমি দখল করার চেষ্টা করছে। জমি মাফিয়াদের দাবি, ওই জমি ওদের। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ওই জমিতে পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন তাঁরা। ওই জমির পাট্টাও রয়েছে। ওই জমি ওদের হয় কিভাবে?
গ্রামের মানুষের প্রতিরোধে প্রথমে ফিরে যায় জমি মাফিয়ারা। ক’দিন পরে ওই জমি মাফিয়ার বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী, পুলিশ এবং স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে ওই জমি দখল করতে আসে। সেদিনও গ্রামের মানুষের প্রতিরোধের মুখে ফিরে যেতে বাধ্য হয় জমি মাফিয়ারা।
তারপর থেকেই গ্রামের মানুষজন আন্দোলন শুরু করেন। তাঁদের বক্তব্য কোনোমতেই আমরা এই জমি ওদের হাতে দেব না। গ্রামবাসীদের পাশে দাঁড়ায় সিপিআই(এম)। একাধিকবার এলাকায় গিয়েছেন দার্জিলিঙ জেলা সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ।
রবিবার জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবিতে এককাট্টা হন পাঁচকেলগুড়ির বাসিন্দারা। জীবেশ সরকার এবং অশোক ভট্টাচার্য জনতাকে বলেছেন, রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের অরাজকতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কিছুতেই নিজেদের জমি আপনারা দখলদারদের বা জমি মাফিয়াদের হাতে তুলে দেবেন না। প্রয়োজনে গড়ে তুলতে হবে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ আন্দোলন।
তাঁরা বলেছেন, রাজ্যজুড়ে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি প্রশ্রয় পেয়েছে। তৃণমূল সরকার বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা গ্রামাঞ্চলও দুর্নীতি মুক্ত নয়। আবাস দুর্নীতি, চাকরি চুরি, জমি লুট করছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নেতা মন্ত্রীরা। এমনকি নদীও বাদ যায়নি। নদী থেকে বালি পাথর চুরি হয়ে যাচ্ছে। অথচ গ্রামের মানুষের হাতে কাজ নেই। সর্বত্রই দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। তৃণমূলীদের গুন্ডারাজ প্রশ্রয় পেয়েছে।
তাঁরা বলেন, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তৃণমূলীদের চুরির অবাধ ক্ষেত্র ১০০ দিনের কাজ। আর এই সুযোগে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। গরিবের হাতে কাজ নেই, পাট্টা নেই, মাথা গোঁজার ঘর নেই। আর তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের নেতা মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এই হল রাজ্যের পরিস্থিতি। আর দেশের সরকারে আসীন বিজেপি ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি করছে। সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে। মানুষের মানুষের বিভেদ সৃষ্টি করছে। গোটা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পকে বিক্রি করে দেবার চক্রান্ত করছে।
সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারের নীতির কোনও ফারাক নেই। তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে গোপন আঁতাত রয়েছে। লাল ঝান্ডার নিচে দাঁড়িয়ে আগামী দিনের লড়াই আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করতে পাঁচকেলগুড়ির বাসিন্দাদের আহ্বান জানান তাঁরা।
এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন হীরালাল ছেত্রী। বক্তব্য রাখেন তাপস সরকার, জয় চক্রবর্তী, ঝরেন রায়, স্নিগ্ধা হাজরা, ভবেশ ঘোষ, শম্ভু প্রসাদ প্রমুখ।
Comments :0