সেই মেওয়াতে এবার শোনা যাচ্ছে অন্যরকম কন্ঠস্বর। ৫ এপ্রিল দিল্লিতে শ্রমিক, কৃষক এবং খেতমজুর সমাবেশের প্রচার চলছে মেওয়াতেও। দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো সেই র্যালির শেষ মুহূর্তের প্রচার ছড়িয়ে পড়েছে মেওয়াতের গ্রামে গ্রামেও। ভয়ের আগল ভেঙে লালঝান্ডার সংগঠকদের কথা শুনতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষ।
কেবল মেওয়াতই নয়। দিল্লির ওখলা মূলত শিল্পতালুক হিসেবেই পরিচিত। সেই ওখলার পরিযায়ী শ্রমিকদের বস্তিগুলিতে গিয়ে পথনাটক বা নুক্কড় নাটক করে ৫ এপ্রিলের সভার প্রচার চালান সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কর্মীরা। সেই প্রচারে ইতিমধ্যেই বিপুল সাড়া পড়েছে। সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ ৫ এপ্রিলের সমাবেশে যোগ দেবেন।
কিষাণ, মজদুর ও খেতমজুর সংঘর্ষ সমাবেশকে সামনে রেখে ঝাড়খণ্ডের ধানবাদে বড় মিছিল হয়েছে। কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুরদের পাশাপাশি ছাত্র ও যুব আন্দোলনের কর্মীরাও পা মিলিয়েছেন তাতে। বিহারের পূর্ণিয়ায় কৃষকনেতা অবধেশ কুমারের নেতৃত্বে মিছিল, সভা এবং বাড়ি বাড়ি প্রচার চালানো হয়। অবধেশ কুমারের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, কেবলমাত্র পূর্ণিয়া থেকেই ১ হাজারের বেশি আদিবাসী ও তফসিলি কৃষক ও খেতমজুর ৫ এপ্রিলের সমাবেশে যোগ দেবেন।
এর পাশাপাশি রাজস্থানের চুরু, শ্রীগঙ্গানগর, বিকানের সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও কৃষক এবং খেতমজুররা প্রচার চালিয়েছেন। ওডিশার কটক সহ বিভিন্ন জায়গাতেও প্রচার চলে।
শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি সামলেই সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, ২০১৪ সাল থেকে এই দেশে কর্পোরেট পুঁজি এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির জোট তৈরি হয়েছে। সেই ভারসাম্য টলাতেই একজোট হচ্ছেন শ্রমিক, কৃষক এবং খেতমজুররা।
কৃষকসভা’র সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণণ জানাচ্ছেন, আচ্ছে দিনের নামে সারা দেশের কৃষক সমাজকে ভাঁওতা দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর তরফে বারবার বলা হয়েছিল, কৃষকদের আয় বাড়তে। তাঁদের দেড়গুণ সহায়ক মূল্য দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল?
খেতমজুর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বি ভেঙ্কট বলেন, মার্চ মাসে দেশের বাজেট পেশ হয়েছে। বাজেটের মোট পরিমাণ ৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু এই বাজেট থেকে দেশের শ্রমিক, কৃষক এবং খেতমজুররা কি পেলেন? বামপন্থীদের উদ্যোগে প্রথম ইউপিএ সরকার ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প চালু করে। সেই সময় বাজেটের ৪ শতাংশ ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ ছিল। ২০১৪ সালের পর থেকে সেটা কমতে কমতে ১.৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
বেঙ্কট আরও বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে কৃষকের জমি দখলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সরকারের মদতে কর্পোরেট সংস্থাগুলি জলের দরে জমি পেয়েছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই তীব্র হয়েছে। কিন্তু তাকে আরও সংগঠিত করা প্রয়োজন।
তিন সংগঠনের নেতৃত্ব মনে করাচ্ছেন, দেশের কৃষক সমাজের চাপে ৩টি কৃষি আইন ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। একইভাবে সংসদে আইন করলেও শ্রমিক আন্দোলনের ফলে এখনও শ্রম আইন বাতিল করে লেবার কোড চাপাতে পারেনি কেন্দ্র। এই দুই ঘটনা রাস্তার আন্দোলনের গুরুত্ব, শ্রমজীবী মানুষের ঐক্যের গুরুত্ব চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। সেই ঐক্যকে আরও মজবুত করার কাজ শুরু হয়েছে দেশজুড়ে।
Comments :0